আজকাল ওয়েবডেস্ক: নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্ল্যাক হোল তৈরি করলেন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এটি মহাবিশ্বের একটি ছোট অংশজুড়ে বিস্তৃত, যেখানে প্রায় আট লাখ গ্যালাক্সি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে এমন গ্যালাক্সিও আছে, যা এত দূরে অবস্থিত যে সেগুলো মহাবিশ্বের শৈশবের সময়কার, অর্থাৎ প্রায় ১৩ বিলয়ন বছর আগে যেভাবে ছিল ঠিক সেভাবেই দেখা যাচ্ছে।


এই বিশাল অন্ধকারকে দেখতে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ টানা ২৫৫ ঘণ্টা ধরে একটি নির্দিষ্ট মহাশূন্য অঞ্চল—‘কসমস ফিল্ড’ পর্যবেক্ষণ করে। এই অঞ্চলে খুব কমসংখ্যক নক্ষত্র, গ্যাসীয় মেঘ বা অন্যান্য বস্তু আছে, যা আমাদের মহাবিশ্বের গভীর অতীত দেখায় বাধা দিতে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো ব্যবহার করে এই অঞ্চলের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে।


জেডব্লিউএসটির এই পর্যবেক্ষণের ফলে আমরা মহাবিশ্বের এক অত্যন্ত বিশদ চিত্র পেয়েছি, যা প্রায় ১ হাজার ৩৫০ কোটি বছর পর্যন্ত পেছনে ফিরে যায়।


মহাবিশ্ব যেহেতু ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে, তাই দূরবর্তী ছায়াপথ থেকে যেসব দৃশ্যমান আলো বের হয়, তা আমাদের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রসারিত হয়ে ইনফ্রারেড আলোতে রূপান্তরিত হয়। একারণেই অত্যন্ত সংবেদনশীল ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ হিসেবে জেডব্লিউএসটি তৈরি করা হয়েছে। তাই এর মাধ্যমে এই দূর অতীত থেকে আসা ক্ষীণ, প্রসারিত সংকেতগুলো শনাক্ত বরা সম্ভব হয়, যা আগের টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যেত না। ইতিমধ্যেই এটি আমাদের মহাবিশ্বের গঠন নিয়ে প্রচলিত ধারণায় বড় পরিবর্তন আনছে।


কসমস প্রকল্পের অন্যতম প্রধান গবেষক এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান্তা বারবারার পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্যাটলিন কেসি বলেন, ‘টেলিস্কোপটি চালু হওয়ার পর থেকেই আমরা ভাবছিলাম, এই টেলিস্কোপের ডেটাগুলো আমাদের প্রচলিত মহাজাগতিক মডেল ভেঙে দিচ্ছে কি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিস্ময় হচ্ছে—জেডব্লিউএসটি দিয়ে আমরা এই অবিশ্বাস্য দূরত্বে প্রত্যাশার চেয়ে ১০ গুণ বেশি ছায়াপথ দেখতে পাচ্ছি। এমনকি এমন সব সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলও ধরা পড়ছে, যেগুলো হাবল টেলিস্কোপে একেবারেই দেখা যেত না।’


জেডব্লিউএসটির কসমস ফিল্ড পর্যবেক্ষণের যে ডেটা ছিল, তা পর্যবেক্ষণের পরপরই প্রকাশ করা হয়। তবে এই ডেটা সহজে বিশ্লেষণযোগ্য ছিল না। কারণ, এ ধরনের ডেটা প্রক্রিয়াজাত করতে বিশেষ প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও শক্তিশালী কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়।


জেডব্লিউএসটির কসমস ফিল্ড পর্যবেক্ষণের যে ডেটা ছিল, তা পর্যবেক্ষণের পরপরই প্রকাশ করা হয়। তবে এই ডেটা সহজে বিশ্লেষণযোগ্য ছিল না। কারণ, এধরনের ডেটা প্রক্রিয়াজাত করতে বিশেষ প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও শক্তিশালী কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়।


মহাবিশ্বের ইতিহাস জানার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের এই উদ্যোগ। এখন অপেক্ষা—এই বিশাল মানচিত্র থেকে আরও কত অজানা রহস্য উদ্‌ঘাটন হয়। তবে যে অন্ধকার সকলের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে সে কতদিনে সকলকে গিলে খাবে সেটাই দেখার।