আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তান বর্তমানে ইতিহাসের অন্যতম বড় মেধা পলায়নের মুখোমুখি। অর্থনৈতিক বিপর্যয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে গত দুই বছরে হাজার হাজার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও অ্যাকাউন্টটেন্ট দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। পাকিস্তান সরকারের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গত ২৪ মাসে পাকিস্তান হারিয়েছে প্রায় ৫,০০০ ডাক্তার, ১১,০০০ ইঞ্জিনিয়ার এবং ১৩,০০০ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও বিদ্রুপ, বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের মন্তব্য ঘিরে।
সম্প্রতি প্রবাসী পাকিস্তানিদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে আসিম মুনির এই দেশত্যাগকে ‘ব্রেন ড্রেন’ নয়, বরং ‘ব্রেন গেইন’ বলে উল্লেখ করেন। বাস্তব পরিসংখ্যান সেই বক্তব্যকে কার্যত খণ্ডন করেছে। প্রাক্তন সিনেটর মুস্তাফা নওয়াজ খোখর এই রিপোর্ট সামনে এনে বলেন, “রাজনীতি ঠিক না করলে অর্থনীতি ঠিক হবে না।” তিনি আরও জানান, পাকিস্তান বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং হাব হলেও ইন্টারনেট শাটডাউনের কারণে প্রায় ১.৬২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে এবং ঝুঁকির মুখে পড়েছে ২৩.৭ লক্ষ ফ্রিল্যান্সিং চাকরি।
পাকিস্তানের ব্যুরো অব এমিগ্রেশন অ্যান্ড ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৭ লক্ষ ২৭ হাজারের বেশি পাকিস্তানি বিদেশে কাজের জন্য আবেদন করেন। চলতি বছরে নভেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ ৮৭ হাজার। উদ্বেগের বিষয় হল, এই দেশত্যাগ আর শুধু শ্রমিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই—এবার দেশ ছাড়ছেন উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ পেশাজীবীরাও।
সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে স্বাস্থ্যখাত। ২০১১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে নার্সদের বিদেশে পাড়ি জমানোর হার বেড়েছে অবিশ্বাস্য ২,১৪৪ শতাংশ। এই প্রবণতা ২০২৫ সালেও অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের একাধিক সংবাদমাধ্যম।
এই পরিস্থিতিতে সরকার বিমানবন্দরে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজারের বেশি যাত্রীকে বিদেশযাত্রা থেকে আটকানো হয়েছে। অসম্পূর্ণ কাগজপত্রের যাত্রীদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। তবে সমালোচকদের মতে, এসব পদক্ষেপ সমস্যার মূল সমাধান নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন আসিম মুনিরের ‘ব্রেন গেইন’ মন্তব্য নিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ চলছে। অনেকেই বলছেন, গবেষণা, শিল্প ও কর্মসংস্থানের অভাব থাকলে মেধাবীরা দেশ ছাড়বেই। বাস্তবতা হল পাকিস্তানে শুধু দক্ষ জনশক্তির ঘাটতিই বাড়ছে না, বাড়ছে শাসকদের বক্তব্য আর দেশের বাস্তব অবস্থার মধ্যকার ফারাকও।
