আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইদানিং কমবয়সিদের, বিশেষত তরুণীদের শরীরচর্চার প্রবণতা বাড়ছে। স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে নিয়মিত শরীরচর্চা, নিত্যদিনের ডায়েটে বদল আনছেন। তবে ইন্টারনেট ঘেঁটে যেকোনও ডায়েট চার্ট ফলো করতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। রাতারাতি ওজন কমানোর লক্ষ্যে অনেকেই অলক্ষ্যে নিজেদের আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেন। যার পরিণতি হয় ভয়ঙ্কর। কখনও মৃত্যু পর্যন্ত হয়।
সম্প্রতি তেমনই এক ঘটনা ঘটেছে। কিশোরীর লক্ষ্য ছিল, জন্মদিনের আগেই তাকে অনেকটা ওজন কমিয়ে ছিপছিপে হতে হবে। পছন্দের জামাটি জন্মদিনে পরার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু সেটি তার গায়ে ঠিকমতো ঢুকছিল না। সেই পছন্দের জামাটি জন্মদিনে পরার জন্য মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ওজন কমিয়ে ফেলতে চেয়েছিল সে।
ওজন কমাতে গিয়ে বদলে ফেলেছিল নিত্যদিনের ডায়েট। খাওয়াদাওয়ায় বদল আনে। প্রায় না খেয়ে থাকতে থাকতে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনে সে। জন্মদিনে হুল্লোড়ের বদলে হাসপাতালে কাটাতে হয় তাকে। প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে কোনও মতে বেঁচে ফিরেছে সে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে চীনে। জানা গেছে, সেন্ট্রাল চীনের হুনান প্রদেশের বাসিন্দা ১৬ বছরের কিশোরী মেই। দুই সপ্তাহ পরেই তার জন্মদিন ছিল। জন্মদিনের আগে সে রোগা, ছিপছিপে হতে চেয়েছিল। কারণ? পছন্দের জামাটি জন্মদিনে পরতে ইচ্ছে হয়েছিল কিশোরীর। জামাটির ফিটিংস ঠিক ছিল না। কোনওভাবেই জামাটি গায়ে ঠিকমতো ফিট হচ্ছিল না দেখেই, রোগা হতে কসরৎ শুরু করে সে।
আরও পড়ুন: 'আহ, কী আরাম', এই রাজ্যের মহিলাদের কাছে মদের আরেক নাম 'জীবন'
জানা গেছে, জন্মদিনের ঠিক দুই সপ্তাহ আগে খাওয়াদাওয়া কমিয়ে ফেলে। সারাদিন সবজি খেয়ে থাকত। আর খেত লাক্সাটিভস। লাক্সাটিভস এমন এক ধরনের ওষুধ যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। পেক পরিষ্কার রাখে। মেইয়ের ধারণা ছিল, সবজি আর লাক্সাটিভস খেয়ে দ্রুত সে রোগা হতে পারবে। দ্বিতীয় সপ্তাহে সবজির পরিমাণ আরও কমিয়ে দেয়। আর রোজ লাক্সাটিভস খেতে শুরু করে। এর জেরেই ঘটে বিপত্তি।
ক্রমেই মেইয়ের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। তার হাত, পা শিথিল হয়ে যায়। পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে সে। আরও দুর্বল শুধু হয়নি, শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয় তার। তড়িঘড়ি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবার। চিকিৎসকরা ১২ ঘণ্টা এমার্জেন্সিতে তার চিকিৎসা করে। অবশেষে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় তার। একদিন পরেই বাড়ি ফিরে যায়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মেই হাইপোক্যালেমিয়ায় আক্রান্ত ছিল। এই রোগে দ্রুত রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কমতে শুরু করে। সময়মতো চিকিৎসার আওতায় না এলে, হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। মেইয়ের এই পরিস্থিতিতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারত। সেই মুহূর্তে পরিবার তাকে হাসপাতালে না আনলে, মৃত্যু হতে পারত তার।
ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। একজন লিখেছেন, 'ডায়েট না বদলে, রোজ পাঁচ কিলোমিটার পথ হাঁটতে পারত। তাতেও তো রোগা হতে পারত মেই।' আরেকজন লিখেছেন, 'রোজ লাক্সাটিভস! কিশোরী আসলে রোগা হতে চায়নি। ও নিজেকে মারতে চেয়েছিল।' এই ঘটনার পর চিকিৎসকরাও কমবয়সিদের দ্রুত ওজন কমানোর পরিকল্পনা নিয়ে সচেতন করেছেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমাতে গিয়ে এমন বিপদের আশঙ্কা ঘিরে আগেভাগেই সতর্ক করছেন সকলকে।
