আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে ফের একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এবার ঘটনাস্থল ঝাড়খণ্ডের রাঁচি। স্বামীকে খুনের অভিযোগে পুলিশ এক মহিলা ও তাঁর প্রেমিককে গ্রেপ্তার করেছে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, রাঁচি পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, পিথোরিয়া এলাকা থেকে ২১ আগস্ট গীতা নামের এক যুবতী ও ইরফান আনসারি নামের তাঁর প্রেমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গীতার স্বামী লুম্বা ওঁরাওয়ের মৃত্যুর অভিযোগে এই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত আট বছর ধরে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত গীতা ও ইরফান। যা ঘিরে বারবার আপত্তি জানিয়ে অশান্তি করতেন লুম্বা। দুজনে মিলে পরিকল্পনা করে লুম্বাকে দুধের মধ্যে নেশাদ্রব্য মিশিয়ে খাইয়ে দেন। পাশাপাশি মদের মধ্যে আরও ১০ থেকে ১৫টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দেন।
গত ২০ আগস্ট রাতে কাঁকে অ্যাগ্রিকালচার গেটের বাইরে ইরফান ও লুম্বা মদ্যপান করেন। সেই সময়েই ওই মাদক মেশানো দুধ ও ঘুমের ওষুধ মেশানো মদ খাইয়ে যুবককে অজ্ঞান করে দেন। এরপর গাড়িতে তুলে, লুম্বার শ্বাসরোধ করে খুন করেন ইরফান।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, গত দেড় বছর ধরে ইরফানের সঙ্গেই বসবাস করেন গীতা। লুম্বার তথ্য, গতিবিধি জানার জন্য, বাড়ির মধ্যে সিসিটিভি লাগিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই দুজনের ফোন, সিম কার্ড, গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং ওই দুধের ও মদের বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘিরে এখনও তদন্ত জারি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে আরও একটি খুনের ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল ঝাড়খণ্ডে। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের সেরাইকেলা- খারসওয়ান জেলায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্বামীর সঙ্গে নিত্যদিন অশান্তি হত স্ত্রীর। সেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে ঘিরে স্বামীকে কুপিয়ে খুন করেন ২৯ বছরের তরুণী।
জানা গেছে, অভিযুক্ত তরুণীর নাম, পূজা কুমারী। গত ১৫ জুলাই রাতে পাশাপাশি স্বামী, স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুমন্ত অবস্থাতেই রাজেশ কুমার মাহতা নামের যুবকের উপর কুড়ুল নিয়ে হামলা করেন পূজা। ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীকে একাধিকবার কুড়ুল দিয়ে কোপ মারেন। রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানাতেই রাজেশ কুমার মাহতার মৃত্যু হয়।
পুলিশ আধিকারিক কুমার লুনায়েত জানিয়েছেন, স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা আগেই করেছিলেন পূজা। তবে সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। ঘটনার দিন সন্তানদের অন্য ঘরে ঘুম পাড়িয়ে এসেছিলেন তিনি। রাজেশ খাওয়াদাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। গভীর রাতে কুড়ুল নিয়ে রাজেশকে কোপ মারেন।
রাজেশ মৃত্যু হয়েছে, তা নিশ্চিত হতেই ঘরের দরজা পিছন থেকে বন্ধ করে বেরিয়ে যান পূজা। এরপর তিন সন্তানকে ঘুম থেকে তুলে তিনি পালিয়ে যান। পরদিন সকাল থেকে গত কয়েকদিনে প্রতিবেশীরা তাঁদের কোনও সাড়াশব্দ পাননি। তাতেই সন্দেহ হয়। পুলিশে খবর দেন তাঁরা। রবিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। বাড়ির দরজা ভেঙে উদ্ধার হয় রাজেশের পচাগলা দেহ।
ঘরের মধ্যেই ছিল রক্ত মাখা কুড়ুলটি। ঘরের ছন্নছাড়া অবস্থা দেখেই পুলিশের সন্দেহ হয়। এদিকে প্রতিবেশীরা জানান, সন্তানদের নিয়ে স্ত্রী পূজা পলাতক। খুনের সন্দেহ হতেই পুলিশ পূজার খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। অবশেষে আটক করে তাঁকে। দীর্ঘ পুলিশি জেরায় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কাঁদতে কাঁদতেই জানান, স্বামীকে তিনি খুন করেছেন।
পূজা আরও জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী, রাজেশ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। অন্য এক তরুণীর সঙ্গে দিনের পর দিন কথা বলতেন ফোনে। প্রথমে সন্দেহ হলেও, পরে জানতে পারেন, সেই তরুণীর সঙ্গেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত স্বামী। অবশেষে তিনি খুনের পরিকল্পনা করেন। পূজাকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে তারা। ঘটনার তদন্ত এখনও জারি রয়েছে। পাশাপাশি খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটি এবং রক্তের দাগ লাগা দু'টি স্মার্টফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।
