আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরকীয়া সম্পর্কের জেরে আত্মহত্যা, একের পর এক খুন। এবার এমনই এক ঘটনা ঘটে গেল উত্তরপ্রদেশে৷ সম্পর্ক চালিয়ে যেতে রাজি না হওয়ায় উত্তরপ্রদেশের সীতাপুরে ঘটে গেল হাড়হিম কাণ্ড। খবর অনুযায়ী, এক মহিলা পুলিশের থানার ভিতরেই নিজের হাত কেটে আত্মঘাতী হলেন। আর এই ঘটনা ঘিরে সম্প্রতি চরম শোরগোল এলাকায়। 

 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, পূজা মিশ্র নামে ওই মহিলা আদতে দিল্লির বাসিন্দা। কয়েক বছর আগে ললিত কুমার মিশ্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বর্তমানে তাঁদের ছয় ও সাত বছর বয়সের দুই পুত্রসন্তান রয়েছে। জানা গিয়েছে, কাজের প্রয়োজনে ললিতের ভাইপো অলোক মিশ্রকে যখন ডাকা হয়, তখন তাঁর সঙ্গে পূজার পরিচয়। অলোক পূজাদের বাড়িতে থাকার সময়ই তাঁদের মধ্যে একটা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জানা গিয়েছে তাঁদের দুজনার বয়সের পার্থক্যও অনেক। অলোক পূজার চেয়ে কমপক্ষে ১৫ বছরের ছোট।

 

গল্পের মোড় নেয় যখন পূজার স্বামী ললিত তাঁদের এই প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। এ কথা জানতে পেরে ললিত অলোককে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপর পূজা তাঁর সন্তানদের ছেড়ে বেরেলিতে চলে যান। খবর অনুযায়ী সেখানে তাঁরা প্রায় সাত মাস একসঙ্গে ছিলেন।

 

এরপরই আচমকা পূজা ও অলোকের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। পরে অলোক তাঁর ভিটে সীতাপুরে ফিরে আসেন। পূজা সেখানে পৌঁছলে বিবাদ মেটানোর জন্য তাঁদের দু'জনকেই স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে ডেকে পাঠানো হয়।পুলিশের সামনেই অলোক যখন পূজাকে জানান যে তিনি আর তাঁর সঙ্গে থাকতে চান না, তখন পূজা একটি ব্লেড বের করে থানার ভেতরেই নিজের হাত কেটে ফেলেন। 

 

ঘটনার জেরে উপস্থিত সকলের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। হুড়োহুড়ি লেগে যায় পুলিশ স্টেশনে। তাঁকে জখম অবস্থায় তড়িঘড়ি নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় তাঁকে লখনউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখছে৷ 

আরও পড়ুন: সিঙাড়ার টাকা দেওয়ার আগেই ছেড়ে দিল ট্রেন, যাত্রীকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে বেমক্কা মার রেল হকারের

প্রসঙ্গত, আরেক নৃশংস জোড়া খুন মধ্য দিল্লিতে। রাম নগর এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। জানা গিয়েছে, এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে খুন করল তাঁর প্রেমিক। পাল্টা মারে ওই মহিলার স্বামীর হাতে মৃত্যু হল অভিযুক্ত প্রেমিকেরও। এহেন চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ভীত সন্ত্রস্ত এলাকা৷ 

 

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ওই যুবতীর নাম শালিনী (২২)। তিনি দুই কন্যাসন্তানের মা এবং গৃহবধূ ছিলেন। তাঁর স্বামী আকাশ (২৩) পেশায় এক জন রিকশা চালক। তিনিও গুরুতর জখম অবস্থায় বর্তমানে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। খবর অনুযায়ী, শালিনীর প্রেমিক আশু ওরফে শৈলেন্দ্র (৩৪) এলাকায় নামকরা অপরাধী বলে পরিচিত। শালিনীর সঙ্গে তার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল।

 

পুলিশ সূত্রে খবর, আশুর দাবি ছিল, শালিনীর গর্ভের সন্তান তারই। সম্প্রতি শালিনী তাঁর স্বামীর সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আশু ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ঘটনাটি ঘটে গত কাল গভীর রাতে। শালিনী এবং আকাশ কুতুব রোড এলাকায় শালিনীর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় আশু হঠাৎই সেখানে হাজির হয়। প্রথমে সে আকাশের উপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায়, কিন্তু আকাশ সেই আঘাত এড়িয়ে যান। এর পর রিকশায় বসে থাকা শালিনীকে দেখতে পেয়ে আশু তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। আকাশ স্ত্রীকে বাঁচাতে ছুটে এলে তাঁকেও কোপায় আশু। কিন্তু গুরুতর জখম হয়েও আকাশ পাল্টা প্রতিরোধ করতে থাকেন। এরপর তিনি আশুর হাত থেকে ছুরিটি কেড়ে নেন এবং তাঁকেই কুপিয়ে খুন করেন।

 

শালিনীর ভাই রোহিত তৎক্ষণাৎ শালিনী ও আকাশকে হাসপাতালে নিয়ে ছোটেন। খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশুকে ওই একই হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক শালিনী ও আশুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ডিসিপি (সেন্ট্রাল) নিধিন বলসান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে আকাশ একাধিক বার আহত হয়েছেন।

 

এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই গোটা এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ঘটনার জেরে শালিনীর মা শীলা অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খুন এবং খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করেছে। পরে মৃতদেহ দু’টি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে স্থানীয় এক হাসপাতালে৷ 

 

শীলা পুলিশকে জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে আকাশ ও শালিনীর দাম্পত্য সম্পর্কে চিড় ধরে। সেই সময়েই আশুর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন শালিনী। তাঁরা কিছু দিন একসঙ্গেই ছিলেন। তবে সম্প্রতি আকাশ ও শালিনীর মধ্যে মিটমাট হয়ে যায় এবং তাঁরা দুই সন্তানকে নিয়ে ফের সংসার শুরু করেন।

 

এই ঘটনাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আশু। সে শালিনীর গর্ভের সন্তানকে নিজের বলে দাবি করত বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে সূত্রের খবর, শালিনী জোরের সঙ্গে দাবি করতেন যে ওই সন্তান আকাশের। আর তার জেরেই আশু দম্পতির উপর হামলার ছক কষে।