আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশে সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যের বহরাইচ জেলার ধাকিয়া গ্রামে এক মায়ের অসাধারণ সাহসিকতা ও মাতৃত্বের নিদর্শন মিলেছে। খবর অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে৷ এই ঘটনায় ৪০ বছর বয়সী মায়া নামের এক যুবতী কুমিরের সঙ্গে খালি হাতে লড়ে নিজের পাঁচ বছর বয়সী সন্তান বীরুকে প্রাণে বাঁচান। এই ঘটনা জানাজানি হতে হুলুস্থুল চারিদিক।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন মায়া হঠাৎ বাইরে থেকে তাঁর সন্তানের চিৎকারের আওয়াজ পান। এরপর বাইরে ছুটে আসেন তিনি। বাইরে এসে যা দেখেন, তাতে আতঙ্কে তাঁর প্রাণ কেঁপে ওঠে। তিনি দেখেন একটি প্রকাণ্ড কুমির জলাশয়ের পাশে খেলা করা তাঁর সন্তান বীরুকে কামড়ে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে জলের দিকে।
চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে মায়া মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে তিনি থেমে থাকেননি। এক মুহূর্ত দেরি না করে তৎক্ষণাৎ তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন কুমিরের উপর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে চলে মায়ের সঙ্গে কুমিরের প্রাণপণ লড়াই। শুরুতে খালি হাতেই লড়াই করেন মায়া। এর পরে একটি লোহার রড নিয়ে কুমিরটিকে আঘাত করতে থাকেন মায়া।
মায়া বলেন, 'আমি চিৎকার করে উঠি আর কিছু না ভেবেই ঝাঁপ দিই। কুমিরটা ওকে জলে টেনে নিচ্ছিল, কিন্তু আমি ওকে ছাড়িনি। আমি কুমিরটাকে মারতে থাকি, আঁচড় দিই, আর কোনওভাবেই ওকে নিতে দিইনি। অনেক সময় ধরে লড়াই চলেছে বলে মনে হচ্ছিল। শেষে একটা লোহার রড দিয়ে জোরে মারার পর কুমিরটা ছেড়ে দেয়।'
এই ভয়াবহ লড়াইয়ে মা ও ছেলে দুজনেই গুরুতর আহত হন। জানা গিয়েছে, মায়াকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে বীরুর আঘাত আরও গুরুতর হওয়ায় সে এখনও চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর প্রাক্তন গ্রামপ্রধান রাজকুমার সিং স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানান। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার রাম সিং যাদব ও এসডিও রাশিদ জামিলের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই এলাকায় কুমিরটিকে ধরার জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হবে।
এহেন ঘটনার জেরে বর্তমানে মায়ার সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ গ্রামবাসীদের কাছে একপ্রকার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। এমন ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, সন্তানের জন্য মা কতটা দূর যেতে পারেন-প্রয়োজনে মৃত্যুর মুখোমুখি।
