আজকাল ওয়েবডেস্ক: কর্ম-নিশ্চতার আকাঙ্খা? মধ্যপ্রদেশে, সরকারি চাকরির আশায় ২৫ লক্ষেরও বেশি নথিভুক্ত চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে ৪,৮১১ জন এমবিবিএস ডাক্তার, ৮৬,০০০ ইঞ্জিনিয়ার এবং ১৮,৮০০ এমবিএ। কিন্তু সরকারি রেকর্ডে, এঁরা 'বেকার' নন। রাজ্য এখন এঁদের 'উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবক-যুবতী' বলে অভিহিত করেছে।

বিধানসভার চলমান বর্ষাকালীন অধিবেশনে কংগ্রেস বিধায়ক এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বালা বচ্চন দশম শ্রেণী পাস থেকে স্নাতকোত্তর এবং পেশাদার - যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরিপ্রার্থী তরুণদের বিবরণ চেয়েছিলেন। তারই জবাবে এই চমকপ্রদ পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।

দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী গৌতম তেতওয়াল জানিয়েছেন যে, চলতি বছর ৩০ জুন পর্যন্ত, মধ্যপ্রদেশ রোজগার পোর্টালে ২৫,৬৮,৩২১ জন আবেদনকারীর নাম নথিভুক্ত রয়েছে। যার মধ্যে স্নাতকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (৮.৩ লক্ষ)। এরপরই তালিকায় রয়েছেন স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা (২.৩৮ লক্ষ), তবে চমপ্রদ হল যে সাধারণ সরকারি করণীকের চাকরির জন্য আবেদনকারীর তালিকায় রয়েছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং এমবিএ-সহ উচ্চ যোগ্য পেশাদাররাও।

আবেদনকারীদের মধ্যে ১৩.৯১ লক্ষ পুরুষ এবং ১১.৭৬ লক্ষ মহিলা। কিন্তু বর্ণভিত্তিক বণ্টন অনুসারে, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর (ওবিসি) মধ্যে বেকারত্ব সবচেয়ে বেশি। চাকরির জন্য পোর্টালে নথিভুক্ত ২৫ লক্ষেরও বেশি মানুষের মধ্যে ১০ লক্ষেরও বেশি ওবিসি। কিন্তু সরকারের নিজস্ব শ্রেণীবিভাগ পরিবর্তিত হয়েছে; এই আবেদনকারীরা সরকারি দৃষ্টিতে 'বেকার' নন, বরং কেবল 'উচ্চাকাঙ্ক্ষী'।

বিধায়ক প্রতাপ গ্রেওয়ালের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী তেতওয়াল স্বীকার করেছেন যে "বেকার" শব্দটির বদলে সরকারি চাকরির জন্য আবেদনকারীদের "উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবক" বলা হয়ে থাকে। কারণ, পোর্টালে নথিভুক্ত একজন ব্যক্তির ইতিমধ্যেই চাকরি থাকতে পারে কিন্তু তিনি "আরও উন্নত কর্মসংস্থান"-এর লক্ষ্যে এই আবেদন করতে পারেন। তাই আবেদনকারী মাত্রই তাঁদের বেকার বলে ধরে নেওয়া উচিত নয়।

বেকারত্বের পরিসংখ্যানে বিভ্রান্তিকর পরিবর্তনের পটভূমিতে এই অর্থগত পরিবর্তন এসেছে। ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশে ২৬.৮২ লক্ষ বেকার ছিলেন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩.১৩ লক্ষ। যা ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে দ্রুত হ্রাস পেয়ে ২৫.৬৮ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। যদিও ২০১৮ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৬২.৭৫ লক্ষ যুবক-যুবতীর নাম পোর্টালে নথিভুক্ত হয়েছে এবং প্রতি বছর আরও লক্ষ লক্ষ যুবক এই তালিকায় যোগ হচ্ছে।

ওঠানামা যুক্তিকে অস্বীকার করে
বছরের পর বছর বেকারত্বের সংখ্যার পরিবর্তন ব্যাখ্যাতীত। ২০১৯ সালে বেকারত্বের সংখ্যা ৩১.৫৫ লক্ষে পৌঁছেছিল, ২০২০ সালে তা কমে ২৪.৭২ লক্ষে নেমেছিল, ২০২১ সালে ৩০ লক্ষের উপরে উঠেছিল, ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৩৩.১৩ লক্ষে পৌঁছেছিল, তারপর ২০২৪ সালে তা কমে ২৬.১৮ লক্ষে নেমে এসেছিল।

২০২৪ সালের একই সময়ে, সরকার মাত্র ৫২,০০০ যুবককে অফার লেটার দেওয়ার দাবি করেছিল। ফলে বেকারদের সংখ্যা কীভাবে ব্যাপক হারে কমে গেল তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

বিতর্ক আরও বাড়িয়েছে ২০২১ সালে 'যশস্বী' নামে একটি বেসরকারি সংস্থাকে ২৫,০০০ যুবককে চাকরি দেওয়ার জন্য দেওয়া চুক্তি। কোম্পানিটি নিয়োগপ্রাপ্ত ১১,৬৮০ জন প্রার্থীর মধ্যে যাচাইয়ের সময় মাত্র ৪,৪৩৩ জনকে আসল বলে জানিয়েছিল। তবুও সরকার সংস্থাটিকে ৪.১৭ কোটি টাকা দিয়েছে এবং আশ্চর্যজনকভাবে, লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থতার জন্য চুক্তিতে কোনও জরিমানা ধার্য হয়নি।

মন্ত্রী তেটওয়াল এনডিটিভি-কে জানিয়েছেন যে, শিল্প নিয়োগ এবং আউটসোর্সিংয়ের কারণে বেকারত্ব হ্রাস পেয়েছে এবং সরকারি পোর্টেলে অনেক নথিভুক্ত প্রার্থী ইতিমধ্যেই কর্মরত আছেন। কিন্তু আরও ভাল সুযোগ খুঁজছেন। তিনি বলেন, "কিছু যুবক কর্মসংস্থান পাওয়ার পরেও আরও ভাল কর্মসংস্থানের সন্ধান করে এবং তাঁরা পোর্টালে নথিভুক্তও করেছে। সেই কারণেই আমরা তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবক বলছি।" 

কংগ্রেস পাল্টা আক্রমণ করেছে
কংগ্রেস নেতা ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, "হাজার হাজার ডিগ্রিধারী পেশাদার - এমবিবিএস ডাক্তার থেকে শুরু করে এমবিএ - মধ্যপ্রদেশে এখনও দুর্লভ সুযোগের পিছনে ছুটছেন, এবং অস্থির সংখ্যা, অব্যক্ত পতন এবং নমনীয় বেসরকারি চুক্তি রাজ্যের কর্মসংস্থানের রেকর্ডকে অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে। পুনঃব্র্যান্ডিং এই সত্যটি লুকোতে খুব একটা সাহায্য করে না।"