আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাদার্ন কমান্ড মরুপ্রান্ত অঞ্চলে সফলভাবে পরিচালনা করল এক বৃহৎ সামরিক মহড়া ‘অখণ্ড প্রহার’। এই মহড়াটি ছিল তিন সেনাবাহিনীর যৌথ সামরিক অনুশীলন ‘ত্রিশূল’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই মহড়ায় ভারতীয় সেনা, নৌবাহিনী ও বায়ুসেনা একযোগে অংশ নেয়।
সাদার্ন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ধীরজ সেঠ (PVSM, AVSM) নিজে মহড়াস্থলে উপস্থিত থেকে কোনার্ক কোরের অপারেশনাল প্রস্তুতি ও যুদ্ধক্ষমতা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করেন।

যুদ্ধের বাস্তব চিত্রে মহড়া
এই মহড়ায় প্রদর্শিত হয় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধপ্রস্তুতি, যেখানে সাঁজোয়া যান, পদাতিক বাহিনী, রুদ্র ব্রিগেডের স্থল অভিযান এবং বিশেষ হেলিবর্ন অপারেশন একে অপরের সঙ্গে নিখুঁত সমন্বয়ে অংশগ্রহণ করে। আর্মি এভিয়েশনের আক্রমণকারী হেলিকপ্টার মিশন এবং বায়ুসেনার ফাইটার গ্রাউন্ড অ্যাটাক অভিযানগুলি স্থলবাহিনীর সঙ্গে সমন্বিতভাবে পরিচালিত হয়, যা আধুনিক যুদ্ধনীতির এক বাস্তব উদাহরণ হয়ে ওঠে।
দেশীয় প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার
এই মহড়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশীয় প্রযুক্তি নির্ভর যুদ্ধব্যবস্থা ব্যবহার করে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্বদেশী ড্রোন, মানববিহীন নজরদারি ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা-বিরোধী ড্রোন ইউনিট এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার গ্রিডের সফল প্রয়োগ ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের আত্মনির্ভরতার প্রতীক হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, এটি ছিল বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবেশে নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি পরীক্ষা করার এক কার্যকর প্ল্যাটফর্ম।
যৌথতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন
‘অখণ্ড প্রহার’ মহড়া আবারও প্রমাণ করেছে যে কোনার্ক কোর এখন এক আধুনিক, দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং প্রযুক্তিনির্ভর সেনাবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। যা ভবিষ্যতের বহুমাত্রিক ও উচ্চগতিসম্পন্ন অভিযানের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। মহড়ায় ভারতীয় সেনা ও বায়ুসেনার নিখুঁত সমন্বয় দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ‘Jointness’ ও ‘Integration’-এর আদর্শ উদাহরণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।

সেনা কমান্ডারের প্রশংসা
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ধীরজ শেঠ অংশগ্রহণকারী সকল ফর্মেশন ও ইউনিটকে তাদের পেশাদারিত্ব, উদ্ভাবনী চিন্তাধারা এবং যৌথ অপারেশনাল দক্ষতার জন্য বিশেষভাবে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “ভারতীয় সেনার প্রতিটি সদস্যই ‘হার কাম দেশকে নাম’— অর্থাৎ প্রতিটি কাজ দেশের জন্য এই মন্ত্রে অনুপ্রাণিত। তাদের সমন্বয়, প্রযুক্তি গ্রহণ এবং অপারেশনাল উৎকর্ষ দক্ষিণ কমান্ডের আসল শক্তি।”
‘অখণ্ড প্রহার’ মহড়া শুধু একটি সামরিক অনুশীলন নয় — এটি ছিল ভারতীয় সেনার আধুনিক যুদ্ধদক্ষতা, দেশীয় প্রযুক্তির সাফল্য এবং তিন বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রতিচ্ছবি। এই মহড়া আবারও প্রমাণ করল, ভারতীয় সেনাবাহিনী কেবল বর্তমানের জন্য নয়, ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রেও একটি আত্মনির্ভর, সক্ষম ও প্রযুক্তিনির্ভর শক্তি হিসেবে প্রস্তুত। ‘অখণ্ড প্রহার’ মরুভূমির বুকে ভারতীয় সেনার ঐক্য, প্রযুক্তি ও শক্তির অখণ্ড প্রতিচ্ছবি।
