আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক নিয়ে যাবতীয় উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার টেলিফোনে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এই আলাপচারিতায় দুই হেভিওয়েট নেতা ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে চলমান স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন।

এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই পক্ষই প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ক্রমশ সুদৃঢ় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।

আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিক ও ফলপ্রসূ কথোপকথন হয়েছে। আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছি।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করে যাবে।’

মোদি ও ট্রাম্প দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টার গতি বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহ সহযোগিতার নানা অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্র প্রসারিত করার বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

জানা গিয়েছে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি ইস্যুতেও আলোচনা করেন দুই নেতা। তারা সম্মিলিতভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও অভিন্ন স্বার্থ এগিয়ে নিতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে একমত হন।

পাশাপাশি যোগাযোগ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতিও দেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ফোনালাপটি এমন দিনে হল যে সময় মার্কিন প্রতিনিধিরা নয়া দিল্লিতে দু’দিনের বাণিজ্য আলোচনায় বসেছেন।

ওয়াশিংটনের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারত এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রস্তাব পেশ করেছে।

সম্প্রতি, সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর মেলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কৃষিক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে সাম্প্রতিক সময়ে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার আইনপ্রণেতাদের বলেছেন যে, শস্য- জোয়ার এবং সয়া-সহ আমেরিকান কৃষিপণ্যের বাজার প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নয়াদিল্লির সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে আমেরিকান দ্রব্যাদির বাজার হিসেবে ভারতের থেকে ভাল কোনও দেশকে পাচ্ছে না মার্কিন মুলুক।

মঙ্গলবার সিনেট অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস সাবকমিটির শুনানিতে নিজের বক্তব্য রাখার সময় গ্রিয়ার বলেন, ইউএসটিআর-এর একটি দল বর্তমানে নয়াদিল্লিতে।

সেখানেই আলোচনা চলছে কৃষিজাত পণ্যের বাজার নিয়ে। ভারতের বাজারে সকল আমেরিকান শষ্যের চাহিদা যেমন ততটাও নজরকাড়া নয়, তবে এই কৃষিজাত দ্রব্যাদির বাণিজ্য হিসেবে ভারতের দেওয়া সর্বশেষ প্রস্তাবগুলির থেকে মার্কিন মুলুক আদতে অপর কোনও দেশ থেকে, আরও ভাল, সদর্থক প্রস্তাব যে পায়নি, তাও স্পষ্ট গ্রিয়ারের মন্তব্যে।

মার্কিন পণ্যের বাজার হিসেব আমেরিকার জন্য এক সময়ে উল্লেখযোগ্য ছিল চীনের বাজারও। তবে বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে, সাম্প্রতিককালে তা খুব একটা আশার আলো দেখাচ্ছে না।

এই  পরিস্থিতিতে, সে দেশের পণ্যের জন্য বিকল্প বাজারের খোঁজ অবশ্যম্ভাবী। এই প্রসঙ্গেই গ্রিয়ার জানিয়েছেন,ভারতই এই মুহূর্তের মার্কিন পণ্যের জন্য বিকল্প বাজার হয়ে উঠতে পারে।

যদিও এই প্রসঙ্গে কমিটির মধ্যে বেশ মতানৈক্য রয়েছে বলেও তথ্য। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, কমিটির সভাপতি জেরি মোরান সে দেশের কৃষকদের দুরাবস্থা দূর করতে, এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে চীনের উপর পণ্য নির্ভরতা কমাতে গ্রিয়ারের উপর ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করেন।

সেখানে গ্রিয়ার বিকল্প বাজার হিসেবে ভারতের নাম প্রস্তব করলে মোরান প্রশ্নও তোলেন, এই যুক্তি কতটা ঠিক, সে বিষয়ে।

তথ্য, গ্রিয়ার নিজের যুক্তির পক্ষে দাঁড়িয়ে সাফ জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক যোগাযোগ এর আগের সরকারের সময়কালের তুলনায় ট্রাম্প-জমানায় অনেক বেশি সুসংহত, গতিশীল।