আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৭ সেপ্টেম্বর পা দিয়েছেন ৭৫-এ। রাজনীতির মঞ্চে তাঁর কৃতিত্ব যতটা উল্লেখযোগ্য, ব্যক্তিগত জীবনে শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস তাঁকে ততটাই অনন্য করে তুলেছে। মোরিঙ্গা পরোটা থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদিক কাধা—স্বাস্থ্যকর খাবারের উপর ভরসা করেই তিনি আজও কর্মঠ ও প্রাণবন্ত।


সম্প্রতি জনপ্রিয় পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদি খোলামেলা কথা বলেছেন তাঁর ফিটনেস রুটিন ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে। উপবাস সম্পর্কে তিনি বলেন, “ফাস্টিং আমাকে কখনও ধীর করে না। বরং আমি স্বাভাবিকের থেকেও বেশি কাজ করি। ভাবনাগুলো কীভাবে এত সহজে প্রবাহিত হয়, তা ভেবে আমি নিজেই বিস্মিত হই। আমার কাছে উপবাস মানে ভক্তি, উপবাস মানে আত্মশৃঙ্খলা।”

আরও পড়ুন:  মহালয়ার আগে সোনার দামে বিরাট বদল, কিনলেই ফিরতে পারে সৌভাগ্যের শ্রী


মোদি আরও জানান, হিন্দু ধর্মীয় প্রথা ‘চাতুর্মাস’-এর সময়—অর্থাৎ জুনের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত—তিনি দিনে মাত্র একবার খাবার খান। চার থেকে সাড়ে চার মাস ধরে এই অভ্যাস মেনে চলা তাঁর কাছে দেহ ও মনের পরিশুদ্ধির পথ। আবার শারদীয়া নবরাত্রিতে তিনি সম্পূর্ণভাবে নিরামিষ উপবাসে থাকেন, শুধু গরম জল পান করেন। তাঁর কথায়, গরম জল শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং হজমশক্তি বাড়ায়।


ইনস্টাগ্রামে একটি রিলে তিনি নিজের প্রিয় খাবার ‘মোরিঙ্গা পরোটা’র কথাও উল্লেখ করেছেন। মোরিঙ্গা পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা সংক্রমণ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তচাপ স্বাভাবিক করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সহায়ক। পাশাপাশি ফাইবারসমৃদ্ধ এই খাবার হজমশক্তি উন্নত করে ও মানসিক চাপ কমায়।


২০২১ সালে একটি পোস্টে তিনি জানান, তিনি আয়ুর্বেদিক খাবারের প্রতি বিশেষ অনুরাগী। নিমপাতা, নিমফুল ও মিছরি তাঁর খাদ্যাভ্যাসে নিয়মিত। এ ছাড়া ‘খিচুড়ি’-ও তাঁর প্রিয় তালিকায় অন্যতম। শৈশবে নিজেই রান্না করতেন এই সহজ, ঘরোয়া খাবার। ডাল ও চালের সঙ্গে হলুদ ও ঘি মেশানো খিচুড়ি শুধু পুষ্টিকরই নয়, রোগের সময় হজমশক্তি ঠিক রাখার জন্যও আদর্শ। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করে ও পরিপাকতন্ত্রকে পুনর্গঠিত করে।


হালকা নাশতায় মোদির পছন্দ ‘ঢোকলা’। বেসন, সুজি, হলুদ ও নুন দিয়ে তৈরি এই স্ন্যাকস বাষ্পে রান্না হওয়ায় হালকা ও সহজপাচ্য। ফারমেন্টেড ব্যাটার থেকে তৈরি হওয়ায় এর স্বাদে টক-ঝাল মিশ্রণ এক বিশেষ আবেদন আনে। উপরন্তু, বেসনে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফোলেট, ভিটামিন বি৬—যা দেহকে শক্তি যোগায়। কম গ্লাইসেমিক সূচকের কারণে ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও ঢোকলা উপকারী।


সব মিলিয়ে দেখা যায়, নরেন্দ্র মোদির স্বাস্থ্যরহস্য আসলে সুষম খাদ্যাভ্যাস, আয়ুর্বেদিক শৃঙ্খলা এবং উপবাসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। ৭৫ বছর বয়সেও তাঁর সক্রিয়তা ও কর্মক্ষমতা প্রমাণ করে দেয়, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই প্রকৃত শক্তির মূল।