আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision- SIR) প্রক্রিয়ার পর তামিলনাড়ুতে ভোটার তালিকা থেকে ৯৭.৩ লক্ষেরও বেশি নাম বাদ পড়েছে। শুক্রবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক অর্চনা পট্টনায়ক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেন। এই সংশোধনের ফলে রাজ্যের মোট ভোটার সংখ্যায় ১৫.২ শতাংশ হ্রাস ঘটেছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৫ সালের ২৭ অক্টোবর ভোটার তালিকা ‘ফ্রিজ’ করার সময় তামিলনাড়ুতে মোট ভোটার ছিলেন ৬.৪১ কোটি। সংশোধনের পরে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৪৩ কোটিতে। পাটনায়েক জানান, স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই প্রতিটি জেলায় খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাদ পড়া ভোটারদের চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে- অনুপস্থিত (Absent), স্থানান্তরিত (Shifted), মৃত (Deceased) এবং দ্বৈত নাম (Duplicate)।

চেন্নাই জেলায় পরিস্থিতি সবচেয়ে নজরকাড়া। শহরে মোট ১৪,২৫,০১৮ জন ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, যা পূর্ববর্তী মোট ভোটারের ৩৫.৫৮ শতাংশ। আগে যেখানে ভোটার ছিলেন ৪০,০৪,৬৯৪ জন, সেখানে এখন সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫,৭৯,৬৭৬-এ। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২,৪৭,৬৯০ জন, মহিলা ১৩,৩১,২৪৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৭৪৩ জন।

শতাংশের বিচারে ড. রাধাকৃষ্ণন নগর বিধানসভা কেন্দ্রে সবচেয়ে কম- ২৪.১৯ শতাংশ ভোটার বাদ পড়েছে। অন্যদিকে আন্না নগরে সর্বোচ্চ ৪২.১৮ শতাংশ নাম কাটা গিয়েছে। সংখ্যার হিসাবে ভেলাচেরি কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি- ১,২৭,৫২১ জন ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। সেখানে ভোটার সংখ্যা ৩,১৭,৫২০ থেকে কমে হয়েছে ১,৮৯,৯৯৯।

তবে ভোটার কমলেও চেন্নাইয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে ৩,৭১৮টি কেন্দ্র ছিল, সেখানে এখন বেড়ে হয়েছে ৪,০৭৯টি।

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক যোগেন্দ্র যাদব এই ঘটনাকে “গণ-বঞ্চনা” (mass disenfranchisement) বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, এত বড় মাত্রায় ভোটার বাদ পড়ার ঘটনা নজিরবিহীন। তিনি জানান, রাজ্যের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা আনুমানিক ৬ কোটি ধরে তিনি সর্বোচ্চ ৪১ লক্ষ ভোটার বাদ পড়তে পারে বলে মনে করেছিলেন।

কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি. চিদম্বরম রাজনৈতিক দলগুলিকে বিশেষভাবে ৬৬.৪ লক্ষ ‘স্থানান্তরিত’ বা ‘অনুপস্থিত’ হিসেবে চিহ্নিত ভোটারের তালিকা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। ডিএমকে সংগঠনী সম্পাদক আর.এস. ভারতী জানান, মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্টালিন বুথ-স্তরের এজেন্টদের নির্দেশ দিয়েছেন খসড়া তালিকা যাচাই করতে।

অন্যদিকে, এআইএডিএমকে সাধারণ সম্পাদক এডাপ্পাদি কে. পালানিস্বামী দাবি করেছেন, ‘বেশিরভাগ ভুয়ো ভোটার’ বাদ পড়ায় তাঁর দলের দীর্ঘদিনের SIR দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, শাসক ডিএমকে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় হতাশ। আম্মা মক্কাল মুনেত্রা কাজাগম (AMMK) নেতা টি.টি.ভি. দিনাকরণ সংশোধনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে সাধারণ মানুষকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।

কেরালাতেও বিতর্ক

কেরালায় পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা হলেও বিতর্ক কম নয়। সেখানে সমন্বিত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের সম্ভাব্য দিন ২৩ ডিসেম্বর। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রথন ইউ. কেলকার জানান, ২৪.৮১ লক্ষ ভোটার এনুমারেশন ফর্ম ‘সংগ্রহ অযোগ্য’ (uncollectable) হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

এর আগে নির্বাচন কমিশনের তালিকায় কেরালায় ভোটার ছিল ২.৭৮ কোটি, যেখানে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় নির্বাচন সংক্রান্ত তালিকায় ভোটার সংখ্যা ২.৮৬ কোটি। তিরুবনন্তপুরম জেলায় সবচেয়ে বেশি- ৪.৩৬ লক্ষ ফর্ম সংগ্রহ করা যায়নি। এরপরেই রয়েছে এর্নাকুলাম (৩.৩৪ লক্ষ)। এর্নাকুলামে আবার ২,১৫,৯৫৭ জন ভোটারকে ‘আনম্যাপড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের ২০০২ সালের ভোটার ডেটার সঙ্গে যুক্ত করা যায়নি।

সিপিআই(এম)-এর এম.ভি. জয়ারাজন, কংগ্রেসের এম.কে. রহমান, সিপিআই-এর সত্যন মোকেরি এবং আইইউএমএল-এর মহম্মদ শাহ ASDD তালিকা অনলাইনে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। বিজেপির প্রতিনিধি জে.আর. পদ্মকুমার জোর দিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত শুনানি ছাড়া কোনও  নাম বাদ দেওয়া উচিত নয়।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন নির্বাচন কমিশনের কাছে SIR প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে ‘অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো’র অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জানান, রাজ্য সরকার এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে এবং আদালত নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগগুলি বিবেচনা করতে নির্দেশ দিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘কারিগরি কারণ দেখিয়ে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হলে গণতন্ত্রের ভিত্তিই দুর্বল হয়ে পড়ে।’

এদিকে, ASDD তালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় চূড়ান্ত তালিকা হিসেবে ভুলভাবে প্রচার করার অভিযোগে কেরালার CEO দপ্তর  সাইবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে।

তামিলনাড়ুতে ২০ ও ২১ ডিসেম্বর সব ভোটকেন্দ্রে বিশেষ শিবির বসবে। নতুন নাম নথিভুক্তির জন্য ফর্ম ৬, বাদ দেওয়ার আপত্তির জন্য ফর্ম ৭ এবং সংশোধনের জন্য ফর্ম ৮ জমা দেওয়া যাবে ২০২৬ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।

কেরালায় দাবি ও আপত্তি জানানোর সময়সীমা থাকবে ২৩ ডিসেম্বর থেকে ২২ জানুয়ারি, ২০২৬ পর্যন্ত। দুই রাজ্যেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে।