আজকাল ওয়েবডেস্ক: একসঙ্গে ভারত, রাশিয়া এবং চীনের রাষ্ট্রপ্রধানরা। চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) চলমান শীর্ষ সম্মেলন পুতিন, জিনপিং ও মোদি হাঁসছেন, কথা বলছেন, একে অপরের সঙ্গে কথা বলছেন। ভূ-রাজনীতির বিশ্লেষক মনে করছেন, এই ত্রয়ীর একসঙ্গে মশগুল হওয়া আদতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বার্তা। 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যখন হাসি ও আলিঙ্গন বিনিময় করেছেন, তখন এই বার্তাই যেন স্পষ্ট- ইউরেশিয়ান শক্তিগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুরে নাচবে না।

?ref_src=twsrc%5Etfw">September 1, 2025

রাশিয়ান তেল কেনার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উপর বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। এরপর থেকেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কে টানাপোড়েন নজরে পড়েছে। সেই পটভূমিতে এই মোদি, জিনপিং ও পুতিনের জোটবদ্ধ হওয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

এসসিও সম্মেলনের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিনকে হাতে হাত ধরে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। যা ইঙ্গিত দেয় যে, মার্কিন হুমকির কাছে ভারত কোনমতেই আত্মসমর্পণ করবে না। এবং মস্কোর সঙ্গে দিল্লির দীর্ঘকালীন সম্পর্কও নষ্ট হবে না। এরপর দুই নেতা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংর কাছে যান এবং ত্রয়ীকে হাসতে দেখা যায়। 

?ref_src=twsrc%5Etfw">September 1, 2025

অ্যানিমেটেড চ্যাট তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে জল্পনা শুরু করেছে। কিন্তু তাঁদের ভাবভঙ্গিতে এমন স্বাচ্ছন্দ্য ধরা পড়েছে যে, তাঁদের নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুমান করতে বাধ্য হবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন একটি গ্রুপ ছবি তোলার জন্য তাঁদের অবস্থান নিচ্ছিলেন, তখন তাঁদের পিছনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। কার্যত যেন একঘরে পাক প্রধানমন্ত্রী।

এরপর পরই সম্মলনে নিজের ভাষণে শরিফের সামনেই পহেলগাঁও ইস্যু উত্থাপিত করে সন্ত্রাসবাদে মদতের জন্য পাকিস্তানকে নিশানা করেন নরেন্দ্র মোদি।

এদিকে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসতে চলেছেন।

আরও পড়ুন-  'কোনও দেশ সন্ত্রাসবাদকে মদত দিলে মেনে নেব?' শেবহাজ শরিফের সামনেই পাকিস্তানকে কড়া নিশানা মোদির

প্রধানমন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি শি'র সাথে দেখা করার এবং তাদের সীমান্ত সমস্যাগুলির "ন্যায্য, যুক্তিসঙ্গত এবং পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য" সমাধানের দিকে কাজ করার জন্য সম্মত হওয়ার একদিন পর এটি এসেছে। ভারত এবং চীন বিশ্ব বাণিজ্য স্থিতিশীল করার জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

রবিবার প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, নয়াদিল্লি পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং সংবেদনশীলতা নিয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এতে আমাদের দুই দেশের ২.৮ বিলিয়ন মানুষের স্বার্থের সাথে জড়িত। এটি সমগ্র মানবতার কল্যাণের পথও প্রশস্ত করবে।"  

এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে আলোচিত বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম হল সন্ত্রাসবাদ। এটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ চীন পাকিস্তানের সর্বকালের মিত্র এবং ভারত সন্ত্রাসবাদের প্রতি ইসলামাবাদের সমর্থনের উপর ধারাবাহিকভাবে জোর দিয়ে আসছে।

বহু বছরের শত্রুতার পর ভারত ও চীন তাদের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দিকে এগোচ্ছে। ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধের পটভূমিতে এই পুনর্নির্মাণ ঘটছে। গতকালের বৈঠকে শি জিনপিং মার্কিন নীতির কারণে সৃষ্ট অস্থিরতার কথা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেছেন। চীনা প্রেসিডেন্ট বিশৃঙ্খল বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন এবং বলেছেন যে, গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ভারত ও চীনের উচিত প্রধান আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়গুলিতে সহযোগিতা জোরদার করা।

প্রধানমন্ত্রী মোদি আগামী বছর ভারত আয়োজিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট শি আমন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান এবং ভারতের ব্রিকস সভাপতিত্বে চীনের সমর্থনের প্রস্তাব দেন।