আজকাল ওয়েবডেস্ক: মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে বিশেষ এনআইএ আদালত সাধ্বী প্রজ্ঞা-সহ সাতজনকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে। এর পাশাপাশি মহারাষ্ট্র সরকারকে ওই বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারকে দুই লক্ষ এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বিচারক অভয় লোহাটি বলেন, “মালেগাঁওয়ে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটি প্রমাণিত, কিন্তু বাইকেই যে বোমা রাখা ছিল তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার পক্ষ।”
২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল শহর মালেগাঁওয়ে সংঘটিত বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত এবং ৯৫ জন আহত হন। মহারাষ্ট্রে সন্ত্রাসদমন শাখা (এটিএস) তদন্ত শুরু করে। পরে তদন্তভার পায় এনআইএ। ২০১৮ সালে শুরু হয় বিচারপ্রক্রিয়া। শেষ হয়েছে এই বছর এপ্রিল মাসে। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা হল।
এনআইএ অভিযুক্তদের জন্য 'সমতুল্য শাস্তি' চেয়েছিল। অভিযোগ করেছিল যে সম্প্রদায়ের একটি অংশকে আতঙ্কিত করতে এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যাহত করার জন্য এই বিস্ফোরণটি সংঘটিত করা হয়েছিল। বিচার চলাকালীন ৩২৩ জন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। যার মধ্যে ৩৭ জন সাক্ষী পরে বয়ানে বদল করেছিলেন।
আরও পড়ুন: দীর্ঘ ১৭ বছর তদন্ত করেও কিছু করতে পারল না এনআইএ! ২০০৮ সালে কী হয়েছিল মালেগাঁওয়ে?
এক নজরে মালেগাঁওয় বিস্ফোরণ মামলার ধারাবিবরণী-
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৮: মহারাষ্ট্রের মালেগাঁওয়ের ভিকু চকে একটি মসজিদের কাছে একটি মোটরবাইক বোমা বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত এবং প্রায় ৯৫ জন আহত হন।
২০০৮-০৯: হেমন্ত কারকরের নেতৃত্বে মহারাষ্ট্র এটিএস তদন্তে দাবি করে যে, ভারতে প্রথমবার কোনও হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এহেন জঙ্গি কার্যকলাপ ঘটিয়েছে।
অক্টোবর, ২০০৮: সাধ্বী প্রজ্ঞা এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিত গ্রেপ্তার। অভিযোগ, অভিনব ভারত নামক হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসূত্রে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর ‘প্রতিশোধমূলক হামলা’।

নভেম্বর, ২০০৮: হামলার স্থল থেকে প্রমাণ এবং বিস্ফোরণে ব্যবহৃত বাইক ফরেনসিকে পাঠানো হল। মূল তদন্তকারী এবং স্পেশ্যাল ইনস্পেক্টর জেনারেল হেমন্ত কারকরে ২৬/১১ মুম্বই জঙ্গি হামলায় নিহত।
২০০৯-২০১১: তদন্ত প্রসারিত করল এটিএস। দয়ানন্দ পান্ডে, সমীর কুলকার্নি এবং অজয় রাহিরকার সহ বেশ কয়েকজন ডানপন্থী কর্মী গ্রেপ্তার। বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন অভিযোগ তোলে যে তদন্ত রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত।
জানুয়ারি, ২০০৯: প্রথম চার্জশিট পেশ করল এটিএস। চার্জশিটে প্রজ্ঞা এবং প্রসাদ পুরোহিত-সহ ১১ জনের নাম। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ, ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং মহারাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে অভিযোগ আনা হয়েছিল।
৩১ জুলাই, ২০০৯: উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে চার্জশিট থেকে মহারাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারা বাদ দিল বিশেষ আদালত।
১৯ জুলাই, ২০১০: বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশে ফের মহারাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারা যোগ করা হল চার্জশিটে।
২০১১: তদন্তভার পেল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।
২০১৬-১৭: এনআইএ অতিরিক্ত চার্জশিট থেকে মহারাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারা বাদ দিল। এএনআই-এর অভিযোগ, প্রমাণ লোপাট এবং সাক্ষ্যদের বয়ান বিকৃত করেছে এটিএস। ২০১৭ সালে জামিন পেলেন প্রধান অভিযুক্ত প্রজ্ঞা এবং কর্নেল পুরোহিত।

১৩ মে, ২০১৬: এনআইএ অতিরিক্ত চার্জশিট থেকে মহারাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারা বাদ দিল। তদন্তকারী সংস্থা দাবি করে যে এটিএস-এর আইনের প্রয়োগ প্রশ্নাতীত নয়।
২০১৭: ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে প্রজ্ঞা এবং কর্নেল পুরোহিতের জামিন মঞ্জুর করে বম্বে হাই কোর্ট। ২১ আগস্ট নয় বছর পর জেল থেকে ছাড়া পান দুই মূল অভিযুক্ত।
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭: মহারাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অভিযোগ প্রত্যাহার। কিন্তু প্রজ্ঞা এবং অন্য ছয় অভিযুক্তকে ইউএপিএ, আইপিসি এবং বিস্ফোরক পদার্থ আইনের অধীনে বিচারের নির্দেশ।
৩০ অক্টোবর, ২০১৮: সাতজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে উপরোক্ত ধারাগুলিতে অভিযোগ দায়ের।
ডিসেম্বর, ২০১৮: বিচারপ্রক্রিয়া শুরু।
সেপ্টেম্বর, ২০২৩: ৩২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ। এর মধ্যে ৩৭ জনের বয়ানে বদল।
১৯ এপ্রিল, ২০২৫: বিচার শেষ হওয়ার পর বিশেষ এনআইএ আদালত রায়দান স্থগিত রাখে।
মে, ২০২৫: মুম্বাইয়ের এনআইএ আদালতে মামলার রায়দান স্থগিত। বিশেষ বিচারক এ কে লাহোটি জানান, মামলার নথি এবং প্রমাণ প্রচুর এবং তাঁর আরও সময় প্রয়োজন। তিনি বলেন, “পরবর্তী তারিখে, অর্থাৎ ৩১ জুলাই, আমি চাই সকল অভিযুক্ত উপস্থিত থাকুক। যদি কোনও অভিযুক্ত অনুপস্থিত থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
৩১ জুলাই, ২০২৫: ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগে সাত অভিযুক্তকেই খালাস দেয় এনআইএ বিশেষ আদালত।
