আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক ভয়ংকর ও হৃদয়বিদারক ঘটনা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। গলায় বিষাক্ত কোবরা জড়িয়ে বাইক চালানো এক সাপরক্ষককে জীবন দিয়ে চুকাতে হল তার সাহসিকতার মাশুল। মধ্যপ্রদেশের গুণা জেলার জেপি কলেজের অস্থায়ী কর্মী দীপক মহাবর (৪০), যিনি সাপ উদ্ধারকারী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন, বুধবার একটি বিষাক্ত কোবরার কামড়ে প্রাণ হারান।
এই ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল — গলায় কোবরা ঝুলিয়ে দীপক ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যেন 'নাগরাজ' তাঁর অলংকার। কিন্তু সেই মুহূর্তের ‘কৌতুক’ই বিষ হয়ে ধরা দিল। জানা গেছে, দীপক সম্প্রতি একটি কোবরা ধরে কাঁচের পাত্রে রেখেছিলেন। শ্রাবণ মাসে ‘শোভাযাত্রা’য় তা দেখানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেই কোবরা যখন তার গলায় ‘মালার’ মতো জড়িয়ে ছিল, তখন আচমকাই ছোবল মারে। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও দেরিতে চিকিৎসা হওয়ায় বিষ প্রতিরোধী ইনজেকশন কাজ করেনি। দীপকের মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
আরও পড়ুন: জাতি জনগণনা নিয়ে কংগ্রেসের বেঙ্গালুরু ঘোষণাপত্র : ওবিসি-দের জন্য সংরক্ষণ বাড়াতে আন্দোলনের ডাক
দীপকের স্ত্রী বহু আগেই প্রয়াত। আজ তাঁর দুই সন্তান—চিরাগ (১৪) ও রৌনক (১২)—সম্পূর্ণ অনাথ। পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার, এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া। এই ঘটনা একদিকে যেমন ‘মানব-প্রাণী সহাবস্থান’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তেমনই সচেতনতা ও বনজীবসম্পদ সংরক্ষণ নিয়েও নতুন আলোচনার দরজা খুলে দেয়। সাপ—বিশেষ করে কোবরা—প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা ইঁদুর ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা না হলে চাষবাস ও খাদ্যশৃঙ্খল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত।
আরও পড়ুন: আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাপ সাধারণত আক্রমণাত্মক নয়, যতক্ষণ না তারা আতঙ্কিত বা বিপন্ন বোধ করে। কিন্তু দীপকের মতো কিছু মানুষ, যাঁরা বন্যপ্রাণীর প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে, সচেতনতার অভাবে বিপজ্জনক কাজ করে বসেন, তারা নিজেরাও বিপদ ডেকে আনেন এবং অন্যদেরও ভুল বার্তা দেন।
এ কারণে, বন দপ্তর ও প্রাণী সংরক্ষণ সংগঠনগুলি এখন সচেতনতা গড়ে তোলার উপর জোর দিচ্ছে। বিদ্যালয় স্তর থেকে শুরু করে গ্রামের স্তরে সাপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী সম্পর্কে শিক্ষামূলক কর্মসূচি চালানো উচিত। দীপকের মৃত্যুর মর্মান্তিকতা আমাদের শিখিয়ে দেয় — শুধু ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন জ্ঞান ও দায়িত্বশীলতা। না হলে প্রকৃতি যেমন রক্ষা করে, তেমনই শাস্তিও দেয়।
