আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারে সম্প্রতি এক আইনজীবীকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে৷ ঘটনা ঘিরে ফের চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বিহারে। খবর মারফত গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের পাটনা, সীতামারহি ও আশপাশের জেলাগুলিতে গুলি চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন একজন অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী, একজন ব্যবসায়ী, একজন পশু চিকিৎসক ও একজন মুদি দোকানদার। প্রকাশ্যে গুলি চালানো, আতঙ্ক সৃষ্টি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ভোটের আগে এমন লাগাতার হিংসাত্মক ঘটনা কেবল সাধারণ মানুষকে না, গোটা রাজ্যে উদবিগ্নতা তৈরী করেছে৷ বারংবার প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা নিয়ে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে হত্যাকান্ডটি ঘটে৷ পাটনার সুলতানপুর থানা এলাকায় ৫৮ বছর বয়সী জিতেন্দ্র কুমার মাহাতোকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পেশায় আইনজীবী হলেও তিনি গত দুই বছর ধরে কাজ থেকে বিরত ছিলেন। জানা গিয়েছে প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিনও সকালে তিনি পাশের একটি চায়ের দোকানে যান। ফেরার পথে কিছু অজ্ঞাত দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। খবর অনুযায়ী তিন রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। গুরুতর আহত হন আইনজীবী৷ আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে তিনটি খালি কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযুক্তকে শনাক্ত করা যায়নি। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরই বিহারের সীতামারহি জেলার অন্যতম নামকরা বাজার মেহসৌল চকে খুন হন স্থানীয় ব্যবসায়ী পটু খান। দুপুরে দোকানপাটে ভিড় থাকা অবস্থায় একদল আততায়ী পটু খানের মাথায় পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালায়। ঘটনাটি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে। ইতিমধ্যেই ঘটনা ভাইরাল হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধ থেকেই তাঁকে খুন করা হয়েছে। ক্ষুব্ধ স্বজনেরা দেহ রাস্তার ওপর রেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ময়নাতদন্তে বাধা দেন। উত্তেজিত জনতা মিডিয়াকর্মীদের ছবি তুলতেও বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
চলতি মাসে পাটনা জেলার শেখপুরা গ্রামে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাঠে কাজ করার সময় গুলি খেয়ে নিহত হন পশু চিকিৎসক ও বিজেপি কিষাণ মোর্চার প্রাক্তন ব্লক সভাপতি সুরেন্দ্র কুমার। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিনি নিজ জমিতে সেচ দিচ্ছিলেন। সেই সময় বাইকে করে আসা দুই বন্দুকধারী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে AIIMS পাটনায় নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোনও প্রত্যক্ষদর্শী বা স্পষ্ট উদ্দেশ্য চিহ্নিত করতে পারেনি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার ঠিক পরদিন, শুক্রবার সন্ধ্যায় পাটনার রামকৃষ্ণ নগর এলাকায় অজ্ঞাত দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন হন বিক্রম ঝা নামের এক মুদি দোকানদার। দোকানে বসে থাকার সময় খুব কাছ থেকে গুলি চালানো হয় তাঁর মাথায়। হামলার পর আততায়ী দ্রুত পালিয়ে যায়। দোকান ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত খুনের উদ্দেশ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে প্রাথমিক তদন্তে ব্যক্তিগত শত্রুতা বা ব্যবসায়িক বিরোধের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র অনুযায়ী চারটি ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং স্থানীয় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত জোরদার করা হয়েছে। তবে একের পর এক খুনের ঘটনায় জনমনে একটাই প্রশ্ন, এই অপরাধীদের এত সাহস কোথা থেকে আসছে?
ঘটনার জেরে রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব টুইট করে বলেন, 'বিহারে এখন গুলি খাওয়া যেন নিত্যদিনের খবর। মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।' দোষীরা কোনওভাবে ছাড় পাবেনা এমনটাই আশ্বাস পুলিশের। তবে রাজনৈতিক তরজার বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে এখন মূল প্রশ্নটা হল, এই রাজ্যে নিরাপদ থাকা যাবে তো? প্রশাসনের আশ্বাসের চেয়ে এখন মানুষ অপেক্ষা করছে দ্রুত এর ইতিবাচক ফলাফলের উপর।
