আজকাল ওয়েবডেস্ক: উদ্ধার হওয়া এক ইউরেশিয়ান গ্রিফন শকুনের অবিশ্বাস্য যাত্রাপথ এখন সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মধ্যপ্রদেশের সতনা জেলার নাগৌর গ্রামে গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল শকুনটিকে। স্থানীয়রা বন দপ্তরকে খবর দিলে তাকে দ্রুত মুখুন্দপুর চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। পরে তাকে ভোপালের ভ্যান বিহার জাতীয় উদ্যানের পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে প্রায় দুই মাস ধরে চিকিৎসা ও যত্নের পর তাকে ২৯ মার্চ বিদিশার হালালি ড্যাম এলাকায় প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়।

প্রকৃতিতে ফিরে যাওয়ার পরেই শুরু হয় তার অনন্য আকাশযাত্রা। ট্র্যাকিং তথ্য অনুযায়ী, শকুনটি ইতিমধ্যেই ১৫,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথে উড়ে গেছে। ভারত থেকে উড়ে সে পৌঁছে যায় পাকিস্তানে, তারপর আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান হয়ে সরাসরি কাজাখস্তানের আকাশে পৌঁছে যায়। এরপর দীর্ঘ পরিযান শেষে ফের ভারতের আকাশে ফিরে এসেছে সে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যাত্রাপথ শুধু বিস্ময়করই নয়, বরং বিরল। পরিযায়ী শকুনরা সাধারণত দূর দূরান্তে খাদ্যের সন্ধানে যায়, তবে এমন বিশাল রুট অতিক্রম করা এক ব্যতিক্রমী ঘটনা।
এই যাত্রার তথ্য শেয়ার করেছেন ভারতীয় বন পরিষেবার অফিসার হিমাংশু ত্যাগী। তিনি জানিয়েছেন, আহত থেকে আবার আকাশ জয়ের এই গল্প বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের এক অনন্য সাফল্য। তার পোস্ট প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়ার ঝড় বইতে শুরু করে। কেউ লিখেছেন, “প্রকৃতি নিজেই প্রমাণ করল—সুযোগ দিলে সে আবার সুস্থ হয়ে ওঠে।” অন্য মন্তব্যে কেউ হাস্যরস মিশিয়ে লিখেছেন, “ভিসা নেই, পাসপোর্ট নেই, তবুও আন্তর্জাতিক ভ্রমণ! মানুষ কবে এতটা স্বাধীন হবে?”
অনেকে শকুনটির আয়ু, অভ্যাস, ও পরিযান আচরণ নিয়েও কৌতূহল প্রকাশ করেছেন। পরিবেশবিদরা বলছেন, এই ট্র্যাক করা যাত্রাপথ ভবিষ্যতে পরিযায়ী শকুনদের বাসস্থান সংকট, খাদ্যাভ্যাস এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণায় বড় ভূমিকা নেবে।
জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া এক আহত পাখির এমন প্রত্যাবর্তন শুধু বিস্ময় নয়—এটা প্রকৃতির স্থিতিস্থাপকতার এক বাস্তব উদাহরণ। আর সেই কারণেই “মারীচ”—এখন শুধু একটি শকুন নয়, বরং দৃঢ়তা, স্বাধীনতা এবং বেঁচে থাকার এক অনুপ্রেরণাময় প্রতীক সবার কাছে।
