আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহুরে ভারতে সম্পর্কের ধারণা দ্রুত বদলাচ্ছে। প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে নতুন ধারার প্রভাব পড়ছে, যেখানে অনুগত একগামী সম্পর্কের জায়গায় জায়গা করে নিচ্ছে খোলামেলা, আলোচনামূলক এবং পারস্পরিক সম্মতিতে গঠিত সম্পর্ক। গ্লিডেন এবং ইপসোস পরিচালিত ‘ইনফিডেলিটি স্টাডি ২০২৫’-এর ফলাফল অনুযায়ী, ভারতের একাধিক শহরে মানুষ এখন আরও বেশি খোলামেলা সম্পর্কের পক্ষে সওয়াল করছেন।

এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, বেঙ্গালুরুর ৪১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, যদি তাঁদের সঙ্গী সম্পর্ক খুলে দেওয়ার কথা বলেন, তবে তাঁরা সম্মতি দেবেন। মুম্বই ও হায়দ্রাবাদেও এই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সব মিলিয়ে, অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশ মনে করেন, আগামী এক দশকে সম্পর্ক আরও বেশি ‘ফ্রি’ বা মুক্ত হবে।

চমকপ্রদভাবে, যদিও ৯৪ শতাংশ শহুরে ভারতীয় বলেছেন তাঁরা তাঁদের বর্তমান সম্পর্কে ‘খুশি’, কিন্তু এর মধ্যে ৫১ শতাংশ মনে করেন তাঁরা তাঁদের সঙ্গীর সঙ্গে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন। ৪৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা প্রায়ই বাইরের কারো সঙ্গে মানসিক সংযোগ স্থাপনের কথা ভাবেন। এটা পরকীয়ার পুরনো গোপন গল্প নয়—এ এক নতুন যুগের সূচনা, যেখানে সম্পর্ক মানে হচ্ছে সততা, স্বচ্ছতা এবং পারস্পরিক আলোচনা।

আরও পড়ুন: আপনার হোয়াটসঅ্যাপেই লুকিয়ে বিপদ! গোপনে আপনার চ্যাট পড়ছে AI!

সমীক্ষায় প্রকাশ, গত দশকে ভারতে পরকীয়ার ঘটনা বেড়েছে বলে মনে করেন ৬৯ শতাংশ মানুষ, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারের কারণে। তবে এখন অনেক শহুরে দম্পতি গোপনীয়তার চেয়ে খোলামেলা আলোচনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। হায়দরাবাদে বহু মানুষ ওপেন রিলেশনশিপ বিবেচনা করছেন বা তাতে জড়িত আছেন। এমনকি, কোচি এবং জয়পুরের মতো তুলনামূলক রক্ষণশীল শহরেও, জেন এক্স (৪৫-৬০ বছর) প্রজন্মের ৫১ শতাংশ বলেছেন, যদি সঙ্গী প্রস্তাব দেন, তাঁরা ওপেন রিলেশনশিপে রাজি হবেন।

সমীক্ষার সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হলো, এই নতুন সম্পর্ক মডেলের চালিকাশক্তি শুধু তরুণ প্রজন্ম নয়, বরং সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন জেন এক্স। ইনদোর, আহমেদাবাদ ও কোচির জেন এক্স অংশগ্রহণকারীরা ৫২ শতাংশ হারে মানসিক বা শারীরিক পরকীয়ায় যুক্ত ছিলেন, এবং সবচেয়ে বেশি ওপেন রিলেশনশিপ আলোচনায় রাজি ছিলেন।

আরও পড়ুন: স্ত্রী বারবার গর্ভবতী হয়ে পড়ছে! কন্ডোম ফেটে যাওয়ার অভিযোগে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চড়াও মদ্যপ যুবক! ভাইরাল ভিডিও ঘিরে তোলপাড় 

টেকনোলজি সম্পর্ককে বদলে দিচ্ছে—একদিকে যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া চটজলদি সম্পর্ক তৈরি করছে, অন্যদিকে এগুলো ‘আলোচনার’ জায়গাও করে দিচ্ছে। মুম্বইয়ে ৬৩ শতাংশ তাঁদের অনলাইন আচরণ গোপন রাখলেও, ৪১ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা গোপনে না রেখে সম্পর্ক খোলার পক্ষে।

সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক দিক হলো, ৬২ শতাংশ ভারতীয় বলেছেন, সত্যিকারের অনুশোচনা থাকলে তাঁরা তাঁদের সঙ্গীর একটি বিশ্বাসভঙ্গ ক্ষমা করতে পারবেন। বিশেষ করে জয়পুর ও কোচিতে, সম্পর্কের ‘গ্রোথ’-এর মানদণ্ড এখন নির্ভর করছে ক্ষমা ও মানসিক দায়বদ্ধতার ওপর। এই সমীক্ষা একটি বার্তাই দিচ্ছে—ভারতে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও শুরু হয়েছে এক সাংস্কৃতিক মুক্তি, যেখানে বিশ্বাসভঙ্গ নয়, বরং সততা, সংলাপ এবং বিকল্প মডেলের ওপর ভর করেই সম্পর্ক টিকে থাকছে।