আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাখির দিন আবারও নৃশংস হত্যাকাণ্ড উত্তরপ্রদেশে। এবার তুতো বোনকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দাদার বিরুদ্ধে। সকালে রাখি পরানোর পর, সেই রাতেই দাদার যৌন লালসার শিকার হয় এক কিশোরী। সেই সময়েই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাকে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, উত্তরপ্রদেশের আউরাইয়া জেলায়। পুলিশ জানিয়েছে, রাখি পরানোর ঠিক পরেই ১৪ বছরের তুতো বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তার দাদার বিরুদ্ধে। ধর্ষণের পর তুতো বোনকে শ্বাসরোধ করে খুন করে ৩৩ বছর বয়সি যুবক। এরপর দেহটি ঝুলিয়ে দেয়। যা দেখলে মনে হবে, কিশোরী হয়তো আত্মহত্যা করেছে।
পরেরদিন বাড়ি ফিরেই যুবক দেখে, পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। প্রথমে পুলিশকে ভুলো তথ্য দিয়ে বিষয়টি এড়ানোর চেষ্টা করছিল সে। বাড়ির কাউকেই পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে দিচ্ছিল না সে। বরং সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সে একাই দিচ্ছিল। কিন্তু তার অসংগতিপূর্ণ কথা শুনেই পুলিশের সন্দেহ বাড়ে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, শনিবার সকালে কাকার বাড়িতে এসেছিল যুবক। সেদিন সকালে দাদাকে রাখি পরায় তুতো বোন। সেদিন রাতেই চূড়ান্ত মদ্যপান করে অভিযুক্ত যুবক। এরপর বাড়ি ফিরে তুতো বোনের ঘরে চুপিচুপি ঢুকে পড়ে। সেই সময় কিশোরী ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। ঘরের মধ্যে কিশোরীকে ধর্ষণ করে সে। সেখানেই তুতো বোনকে শ্বাসরোধ করে খুন করে, দেহটি ঝুলিয়ে দেয়।
পাশের ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলেন কিশোরীর বাবা। রাতে তাঁরা কেউই কোনও শব্দ শুনতে পাননি। এমনকী কিশোরীর চিৎকারের শব্দ পৌঁছয়নি কোনও ঘরে। সকালে ঘুম ভাঙার পর ঝুলন্ত দেহটি সকলের চোখে পড়ে। তড়িঘড়ি করে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে পৌঁছেই পুলিশ শিউরে ওঠে। প্রথমবার দেখেই তারা নিশ্চিত ছিল, এটি নিছক আত্মহত্যার ঘটনা নয়। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তের দাগ দেখতে পেয়েছিল তারা। এরপর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে তারা। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। এরপরই তার দাদাকে সন্দেহের বশে জেলা শুরু করে পুলিশ। দীর্ঘ জেরায় অপরাধের ঘটনাটি সে স্বীকার করে নিয়েছে। বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রয়েছে অভিযুক্ত যুবক।
প্রসঙ্গত, রাখি উৎসবে যোগীরাজ্যে আরও একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। রাখি পরানোর কয়েক ঘণ্টা পরেই নিজের বোনকে খুন করেছিল দাদা। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে ঝাঁসির গরৌথা এলাকায়। ১৮ বছর বয়সি তরুণীকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ তাঁর দাদার বিরুদ্ধে। বোনের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি ছিল দাদার। যাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন, সেই ছেলেকে পছন্দ করত না দাদা। ঘটনাটি ঘিরে বিরক্ত ছিল সে। সেই রাগেই বোনকে খুন করে বলে জানা গেছে।
তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ঠিক রাখি বন্ধন উৎসবের পরেই। রবিবার কুমারী সহোদর ওরফে পু্ট্টি নামের তরুণীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। চন্দ্রপুরা গ্রামের একটি নির্জন এলাকায় দাদা মহারাজ প্ল্যাটফর্মের কাছে তরুণীর দেহটি পাওয়া যায়। তাঁর মাথা ন্যাড়া অবস্থায় ছিল। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এই খুনের ঘটনার অভিযোগের ভিত্তিতে অরবিন্দ ও প্রকাশ প্রজাপতি নামের দুই তরুণকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। দুই তরুণের বয়স ২৫ বছর। অরবিন্দ সম্পর্কে মৃত তরুণীর দাদা। শনিবার দাদার হাতে রাখি পরিয়েছিলেন কুমারী। ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা পরেই অরবিন্দ কুমারীকে কুপিয়ে খুন করেন।
কুমারীর খুনের তদন্তে নেমে আরও এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্যে আসে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, কুমারীর প্রেমিককেও খুন করেছে অরবিন্দ। তাও আবার দিন কয়েক আগেই। তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক ঘিরে আপত্তির কারণে পরপর খুনের ঘটনাটি সে ঘটায়। প্রথমে কুমারীর প্রেমিককে এবং পরে নিজের বোনকেই খুন করে সে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৭ আগস্ট গুধা গ্রাম থেকে ১৯ বছর বয়সি বিশাল নামের এক তরুণের দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। বিশালের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল কুমারীর। তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, চার মাস আগে বিশাল ও কুমারী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের চাপে আবারও বাড়ি ফিরে আসেন তাঁরা। দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সাময়িক সমাধান হয়। বিষয়টি ঘিরে শোরগোল বন্ধ হয় সাময়িকভাবে।
কিছুদিন পর থেকে আবারও বিশাল ও কুমীর লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতে শুরু করেন। বিষয়টি গ্রামবাসীরাও জানতে পারেন। বোনের সঙ্গে বিশালের দেখা- সাক্ষাতের বিষয়টি জানতে পারে অরবিন্দ। দিন কয়েক আগে তড়িঘড়ি করে পুনে থেকে গ্রামে ফিরে আসে সে। গ্রামে ফেরার পরেই বন্ধুর সঙ্গে খুনের পরিকল্পনা করে।
গত ৭ আগস্ট সকালে চাকরির টোপ দিয়ে বিশালকে নিয়ে নির্জন এলাকায় চলে যায় অরবিন্দ ও প্রকাশ। সেখানে গিয়েই বিশালকে কুপিয়ে খুন করে তারা। এরপর শনিবার বোনকে ওষুধ কিনে দেওয়ার অজুহাতে বাড়ি থেকে বের হয় অরবিন্দ। আবারও নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে বোনকে কুপিয়ে খুন করে সে। বিশালের বাবা থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই ভিত্তিতে দুই অভিযুক্তকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত জারি রয়েছে।
