আজকাল ওয়েবডেস্ক: হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির প্রমাণ মিলেছে। তাঁকে কাজে লাগিয়ে তথ্য হাতিয়েছিল পাক এজেন্টরা। তিন মাস তদন্তের পর জ্যোতির বিরুদ্ধে ২,৫০০ পৃষ্ঠার একটি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে এবং সূত্রের খবর, পুলিশ নিশ্চিত প্রমাণ পেয়েছে যে তিনি পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন।

জ্যোতি মালহোত্রা, ওরফে জ্যোতি রানী ইউটিউবে ‘ট্র্যাভেল উইথ জো’ নামে একটি ভ্রমণ অ্যাকাউন্ট চালাতেন। তাঁকে মে মাসে হরিয়ানার হিসার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছিল যে তিনি পাকিস্তান হাই কমিশনে এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এবং কমপক্ষে দু’বার প্রতিবেশী দেশে গিয়েছিলেন।

পহেলগাঁও হামলা এবং অপারেশন সিঁদুরের পর, রহিমকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। গুপ্তচরবৃত্তি এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করার জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ভারত ত্যাগ করতে বলা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: দলের অন্দরে প্রবল ডামাডোল, মিলছে না রফাসূত্র, জানুন বিজেপির সম্ভাব্য উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী কারা

হরিয়ানা পুলিশ সূত্রে খবর, সিট দাবি করেছে, জ্যোতিকে ‘টুল কিট’ হিসাবে ব্যবহার করেছে পাকিস্তান। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জ্যোতির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে। জ্যোতিও পাক এজেন্টদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। সিটের দাবি, পাকিস্তান ভ্রমণের সময় এজেন্টদের সঙ্গে জ্যোতির যোগাযোগ ছিল। তাঁর ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া তথ্য সে দিকেই ইঙ্গিত করছে।

চার্জশিটে হিসার পুলিশ দাবি করেছে যে জ্যোতি দীর্ঘদিন ধরে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন। সূত্রের খবর, চার্জশিটে রহিমের সঙ্গে তাঁর সংযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে তিনি আইএসআই এজেন্ট শাকির, হাসান আলি এবং নাসির ধিলনের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছিলেন।

চার্জশিটে বলা হয়েছে যে জ্যোতি গত বছরের ১৭ এপ্রিল পাকিস্তানে যান এবং ১৫ মে ভারতে ফিরে আসেন। মাত্র ২৫ দিন পরে, ১০ জুন তিনি চীনে যান এবং জুলাই পর্যন্ত সে দেশে থাকেন, তারপর নেপালে যান।

পুলিশের সূত্রটি জানিয়েছে, “তদন্তের সময়, আমরা সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছি যে ইউটিউবার পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছিলেন। এর আগে, যখন জ্যোতি করতারপুর করিডোর দিয়ে পাকিস্তান গিয়েছিলেন, তখন তিনি পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।”

আরও পড়ুন: দলের অন্দরে প্রবল ডামাডোল, মিলছে না রফাসূত্র, জানুন বিজেপির সম্ভাব্য উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী কারা

হরিয়ানা পুলিশের একজন আধিকারিক এর আগে বলেছিলেন যে, পহেলগাঁও হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সংঘর্ষের সময় ৩৩ বছর বয়সী এই ইউটিউবার নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি আরও যোগ করেছিলেন যে, সামরিক অভিযান সম্পর্কিত কোনও তথ্যে তাঁর সরাসরি প্রবেশাধিকার ছিল না।

গত ১৬ মে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হরিয়ানার ট্র্যাভেল ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রাকে। একই অভিযোগে তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও পাঁচ জনকে। এই বছরের শুরুতে পাকিস্তানে তাঁর ভ্রমণের বেশ কয়েকটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। সেই ভিডিওগুলির মাধ্যমে জ্যোতি পাকিস্তানের ইতিবাচক দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার কারণে পাকিস্তানের এজেন্টরা জ্যোতিকে দিয়ে প্রচারমূলক ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এজেন্টরা এই সব ভিডিও রেকর্ড করত। সেই সব ভিডিওতে রয়েছে আটারি-ওয়াঘা বর্ডার পেরনো, লাহোরের আনারকলি বাজার, বাসযাত্রা ইত্যাদি। এমনকি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির কাটাস রাজ মন্দিরের ভিডিও রয়েছে। ইনস্টাগ্রামের একটি ছবিতে ঊর্দুতে লেখা রয়েছে ‘ইশক লাহোর’। সে দেশের খাবার এবং দুই দেশের সংস্কৃতির পার্থক্যের ভিডিও শেয়ার করেছিলেন জ্যোতি।