আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীপাবলির লম্বা ছুটিতে কলকাতায় ফিরতে চাওয়া যাত্রীদের জন্য বিমান ভাড়া একেবারে আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন শহর থেকে কলকাতাগামী বিমানের টিকিটের দাম সাধারণ সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি।

বুধবার দুপুরে মুম্বই থেকে কলকাতাগামী একমুখী ইকনমি ক্লাস টিকিটের দাম ছিল ২৭ হাজার টাকারও বেশি—যেখানে সাধারণ সময়ে এই রুটে ভাড়া থাকে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে। একই বিমানের বিজনেস ক্লাস টিকিটের দাম ছুঁয়েছে ৭০ হাজার টাকা, যা সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে থাকে। এই তথ্য জানিয়েছেন একাধিক ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটর।

নাগরিক বিমান চলাচল দপ্তর (DGCA) ইতিমধ্যেই বিমান সংস্থাগুলিকে উৎসবের মরশুমে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়াতে এবং ভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকও ডিরেক্টরেটকে ভাড়া পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছিল।
এই নির্দেশের পর বিমান সংস্থাগুলি জানিয়েছে, তারা চাহিদা সামাল দিতে অতিরিক্ত ১,৭০০-রও বেশি ফ্লাইট চালু করছে। তবুও দীপাবলির সপ্তাহান্তে কলকাতার টিকিটের দাম স্বাভাবিক সীমার অনেক ওপরে রয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি জমি এখন ব্রহ্মোসের রেঞ্জের মধ্যে, লখনউয়ে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যাচ উদ্বোধন করে হুঙ্কার রাজনাথের

ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (পূর্বাঞ্চল)-এর চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি বলেন, “দীপাবলির সময় বহু মানুষ যারা বাইরে কাজ বা পড়াশোনা করেন, তাঁরা পরিবারের সঙ্গে উৎসব কাটাতে কলকাতায় ফিরে আসেন। এ বছর বৃহস্পতিবার থেকেই দীর্ঘ সপ্তাহান্ত শুরু হওয়ায় হঠাৎ করেই টিকিটের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে।” উল্লেখ্য, এ বছর দীপাবলি পড়েছে সোমবার, ২০ অক্টোবর। তবে পাঞ্জাবির মতে, গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা কম। তিনি জানান, “গত বছর মুম্বই-কলকাতা একমুখী ভাড়া ৪০ হাজার টাকায় পৌঁছেছিল। এ বছর সেটি গড়ে ২৭ হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।”

ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (TAAI)-এর পূর্বাঞ্চলীয় কমিটির সদস্য মানব সোনি বলেন, “আমি এই সপ্তাহে দিল্লি ও মুম্বই থেকে ক্লায়েন্টদের জন্য টিকিট বুক করছিলাম। একদিন মুম্বই-কলকাতা রুটের টিকিট ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায়, পরের দিনই তা নেমে আসে ৮ হাজারে।” তিনি অভিযোগ করেন, DGCA-র নির্দেশে ভাড়ার সীমা ঠিক করার কথা বলা হলেও নির্দিষ্টভাবে কোনো সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে সেই নির্দেশ কার্যকর হয়নি এবং অনেক রুটে ভাড়া এখনও অত্যধিক।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা বিমানবন্দরে ফ্লাইটের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় তেমন বাড়েনি। বুধবার মোট ৩৪২টি দেশীয় ফ্লাইট ওঠানামা করেছে, যেগুলি মিলিয়ে প্রায় ৫৩,৭৩২ জন যাত্রী বহন করেছে। ভাড়াবৃদ্ধির আরেকটি কারণ উল্লেখ করেছেন অনিল পাঞ্জাবি। তাঁর কথায়, “এখন অনেক যাত্রী সাধারণ ইকনমি ক্লাসের বদলে প্রিমিয়াম ইকনমি বা উন্নত সিট বেছে নিচ্ছেন। ইন্ডিগো সংস্থা ‘IndiGoStretch’ নামে বাড়তি লেগরুমসহ নতুন আসন চালু করেছে। এর ফলে ইকনমি ক্লাসের আসনের সংখ্যা কমে গেছে, আর সেই কারণেও সাধারণ টিকিটের দাম বেড়েছে।”

যাত্রীরা বলছেন, উৎসবের সময় ভাড়া এমনভাবে বেড়ে যাওয়ায় অনেকেরই পরিকল্পনা বদলাতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ট্রেন বা বাসে ফিরছেন। ট্রাভেল এজেন্টদের মতে, ফ্লাইট সংখ্যা না বাড়লে এবং ভাড়ার উপর স্পষ্ট নিয়ন্ত্রণ না এলে আগামী বছরগুলিতেও একই সমস্যা চলবে। দীপাবলির আলোয় যখন শহর ফিরতি যাত্রীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত, তখন বিমান টিকিটের এই অগ্নিমূল্য উৎসবের আনন্দে যেন ছায়া ফেলেছে।