আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২৮ পাতার চিঠি লিখে নিজেকে শেষ করে দিলেন অ্যাপ ক্যাব এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘ওলা’র এক ইঞ্জিনিয়ার। মৃতের নাম কে অরবিন্দ। বয়স ৩৮ বছর। নিজের হাতে লেখা ওই চিঠিতে তিনি ওলার প্রতিষ্ঠাতা ভাবিশ আগরওয়াল-সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তাদের বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানি এবং আর্থিক শোষণের অভিযোগ করেছেন। ওলা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, অরবিন্দ কখনও তাঁর কাজ বা হয়রানির বিষয়ে কোনও অভিযোগ জানাননি। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০২২ সাল থেকে ওলাতে হোমোলোজেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন অরবিন্দ। গত ২৮ সেপ্টেম্বর বেঙ্গালুরুর চিক্কলাসান্দ্রায় তাঁর বাড়িতেই তিনি বিষ পান করেন। তাঁর বন্ধুরা তাঁকে কষ্টের মধ্যে দেখতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ মহারাজা অগ্রসেনা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। সেদিনই তাঁর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে সাতটি বিএমডব্লিউ কিনতে চায় লোকপাল, ডাকা হল টেন্ডারও, কী হবে এত গাড়ি দিয়ে
অরবিন্দের মৃত্যুর কিছুক্ষণ পরে, তাঁর ভাই ২৮ পৃষ্ঠার একটি চিঠি খুঁজে পান, যেখানে ওলা ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত কুমার দাস এবং ভাবিশ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি এবং চাপের অভিযোগ করেন। চিঠিতে বলা হয়েছে যে অরবিন্দকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল এবং তাঁর বেতন এবং ভাতা দিতে অস্বীকার করা হয়েছিল। এর ফলে তিনি শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
অরবিন্দের ভাইয়ের দাবি, মৃত্যুর দু’দিন পর অরবিন্দের অ্যাকাউন্টে ১৭,৪৬,৩১৩ টাকার সন্দেহজনক ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করা হয়। লেনদেন সম্পর্কে জানতে তাঁর ভাই যখন ওলার কাছে যান, তখন সুব্রত দাস কোনও স্পষ্ট উত্তর দেননি বলে অভিযোগ। পরে, কোম্পানির তিন প্রতিনিধি ক্রতেশ দেশাই, পরমেশ এবং রোশন অরবিন্দের বাসভবনেও যান। কিন্তু তাঁরাও আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে কোনও সঠিক তথ্য প্রদান করেননি। পুলিশ জানিয়েছে, এর ফলে সংস্থার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ তৈরি হয়।

অরবিন্দের ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে, পুলিশ ৬ অক্টোবর ভাবিশ আগরওয়াল, সুব্রত দাস এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এফআইআরে অভিযোগ করা হয়েছে যে, অরবিন্দের মৃত্যুর জন্য তার ঊর্ধ্বতন কর্তাদের দ্বারা ক্রমাগত হয়রানি, অপমান এবং আর্থিক শোষণ সরাসরি দায়ী। তাঁর পরিবার পুলিশকে দাস এবং আগরওয়াল-সহ অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। তাঁদের আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য দায়ী করা হয়েছে।
ওলা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে তার কর্মীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমাদের সহকর্মী অরবিন্দের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত এবং এই কঠিন সময়ে তাঁর পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা। অরবিন্দ সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ওলা ইলেকট্রিকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বেঙ্গালুরুতে আমাদের সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। তাঁর মেয়াদকালে অরবিন্দ কখনও তাঁর চাকরি বা কোনও হয়রানির বিষয়ে কোনও অভিযোগ করেননি। তাঁর কাজে প্রোমোটার-সহ কোম্পানির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি কোনও যোগাযোগ ছিল না।”
সংস্থার তরফ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, তারা কর্ণাটক হাইকোর্টে প্রতিষ্ঠাতা ভাবিশ এবং অন্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এফআইআরকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
