আজকাল ওয়েবডেস্ক: গুজরাটে সম্প্রতি এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। খেদা জেলায় ঘটনাটি ঘটে। প্রথমে এটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ঘটনা হিসেবে শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে জানা গিয়েছে, এক বাবা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের সাত বছরের মেয়েকে খালে ফেলে হত্যা করেছেন। মর্মান্তিক এই ঘটনা একান ওকান হতেই এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটে ১০ জুন। খেদা জেলার বাসিন্দা বিজয় সোলাঙ্কি ও তাঁর স্ত্রী অঞ্জনা তাঁদের বড় মেয়ে ভূমিকাকে নিয়ে একটি স্থানীয় মন্দিরে যান। সন্ধ্যার দিকে তাঁরা তিনজন একটি দুই চাকার গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন। খবর অনুযায়ী ফেরার পথে অঞ্জনা বিজয়কে জানান তিনি তাঁর বাবা-মায়ের কাছে যেতে চান কিছু প্রয়োজনে। কিন্তু বিজয় তাতে রাজি হননি। উলটে বলেন, 'আমি ছেলে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি মেয়ের জন্ম দিয়েছো'।
আচমকা বচসা শুরু হয় তাঁদের। ঝগড়া যে এই ভয়ানক আকার নিতে পারে তা টের পাননি অঞ্জনা। জানা গিয়েছে এর কিছুক্ষণ পর রাত আনুমানিক ৮টার দিকে, কপদ্বঞ্জ এলাকার ওয়াঘাভাট সেতুর কাছে বিজয় তাঁর মেয়েকে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে বিজয় গাড়ি থামান। তারপর সাত বছরের ভূমিকাকে মাছ দেখানোর অজুহাতে সেতুর ধার ঘেঁষে দাঁড় করান। এরঁপর হঠাৎ করে শিশুটিকে নর্মদা খালের প্রবল স্রোতের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ফেলে দেন।
সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ত্রী অঞ্জনা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁদের সাত বছরের শিশু সন্তা৷ জলে পড়ে তলিয়ে যায়। অঞ্জনা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার মুহুর্তে তিনি কিছুই করে উঠতে পারেননি। চোখের সামনে নিজের মেয়ের এই পরিণতি দেখে সেই অবস্থাতেই স্তব্ধ হয়ে যান অঞ্জনা।
পুলিশকে অঞ্জনা এও জানিয়েছেন, ঘটনার পর বিজয় তাঁকে হুমকি দেন। যদি অঞ্জনা এই ঘটনা কাউকে জানান, তাহলে বিজয় অঞ্জনার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ করবেন। এ কথা স্ত্রী'কে বলে বিজয় অঞ্জনাকে তাঁর বাবা-মায়ের বাড়ি নামিয়ে দিয়ে ফিরে যান।
আরও পড়ুনঃ মাঝরাতে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন, মহিলা দেখেই অ্যাপ ক্যাব চালক যা করে বসলেন, আলোচনা চারদিকে
খবর মারফত জানা গিয়েছে ঘটনার জেরে অঞ্জনা ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় প্রথমে ঘটনার কথা কাওকে বলেননি৷ প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। খেদা জেলার পুলিশ সুপার রাজেশ গাধিয়া জানান, পরিবার সদস্যদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে তাঁরা সেতুর ধারে মাছ দেখছিলেন। এহেন অবস্থায় আচমকা ভূমিকা পা পিছলে জলে পড়ে যায়।
প্রাথমিক বয়ানে অসংলগ্নতা দেখে পুলিশের সন্দেহ বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালায়। ঘটনাস্থল থেকে শিশুর চটি ও পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। একটা পর্যায় পর চাপ সহ্য করতে না পেরে মা অঞ্জনা পুরো ঘটনা খুলে বলেন। এরপর তিনি পুলিশকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যান।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, অঞ্জনা কান্নার স্বরে বয়ান দিয়েছেন, 'আমার স্বামী ভূমিকাকে মাছ দেখানোর নাম করে খালের ধারে প্রথমে দাঁড় করান৷ তারপর আচমকা মেয়েকে জলে ঠেলে দেন৷ আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়ে আমার চোখের সামনে খালে পড়ে যায়৷ আমি শুধু দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। কিছুই করতে পারিনি।' অঞ্জনা আরও জানান, বিজয় প্রথম থেকেই মেয়েসন্তান হওয়ায় অসন্তুষ্ট ছিলেন।
খবর মারফত, বিজয় ও অঞ্জনার বিয়ে হয়েছে তা প্রায় ১১ বছর আগে। এমনকি দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের মধ্যে এই বিষয়টি ঘিরে বিবাদ চলছিল। ঝামেলা তুঙ্গে পৌঁছয় তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান জন্মানোর পর থেকে। দ্বিতীয় বার মেয়ের জন্মের পর থেকেই বিজয় অঞ্জনাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। তাঁর তিন বছরের ছোট মেয়েও রয়েছে। অঞ্জনা পুলিশকে জানান, তাঁকে বিজয় জোর করে মিথ্যা বলতে বাধ্য করেছিলেন। পুলিশকে বলা হবে মেয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়েছে, জানান অঞ্জনা।
বর্তমানে মূল অভিযুক্ত বিজয়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ অঞ্জনার অভিযোগের ভিত্তিতে বিজয় সোলাঙ্কিকে জেরা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এখনও ঘটনার পূর্ণ তদন্ত চলছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই হাড়হিম ঘটনা আবারও সমাজে মহিলাদের নিরাপত্তা, শিশুর নিরাপত্তা, লিঙ্গ বৈষম্য এবং পারিবারিক সহিংসতার বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
