আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী দপ্তর (পিএমও)-কে ঘিরে তীব্র আক্রমণ শানাল কংগ্রেস। দলের অভিযোগ, দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে “দাগি ও প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত” হচ্ছে। প্রাক্তন প্রসার ভারতী চেয়ারম্যান নভনীত সহগালের হঠাৎ পদত্যাগের কয়েক সপ্তাহ পর কংগ্রেসের এই আক্রমণ রাজনৈতিক মহলে নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে।
কংগ্রেস প্রশ্ন তোলে, কীভাবে একজন “দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা”কে দেশের সরকারি সম্প্রচার সংস্থার শীর্ষপদে বসানো হলো। দলের দাবি, সহগালের নিয়োগই পিএমও-র ভেতরে গভীর পচনের প্রতিফলন। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে প্রসার ভারতীর চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন নভনীত সহগাল। তাঁকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ঘনিষ্ঠ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আস্থাভাজন বলেই মনে করা হত। তাঁর আকস্মিক চলে যাওয়া ক্ষমতার অলিন্দে নানা জল্পনার জন্ম দিয়েছে, যা অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা হিরেন যোশিকে ঘিরে সাম্প্রতিক বিতর্কের সঙ্গেও যুক্ত করা হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা অভিযোগ করেন, সহগাল ও হিরেন যোশি একই “ইকোসিস্টেম”-এর অংশ, যা ধীরে ধীরে পিএমও-র ভেতরে শিকড় গেড়েছে। খেরার দাবি, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ইনস্টিটিউট অব এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট (আইইডি)-এর চেয়ারম্যান থাকাকালীন সহগাল ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা প্রায় ১১২ কোটি টাকার দুর্নীতি কেলেঙ্কারি সংগঠিত করেন।
খেরার বক্তব্য অনুযায়ী, সহগাল ও আইইডি-র ডিরেক্টর দেবেন্দ্র পাল সিং একসঙ্গে ঘুষের টাকা ভাগ করে নেন এবং সরকারি তহবিল সরিয়ে দেওয়া হয় সহগালের পুত্রদের সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থায়। কংগ্রেসের তোলা মূল অভিযোগগুলির মধ্যে রয়েছে-
‘ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট ওয়ান প্রোডাক্ট’ (ODOP) এবং ‘বিশ্বকর্মা শ্রম সম্মান’ প্রকল্পের আওতায় আইইডি থেকে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা নয়ছয় করা হয়, যার সিংহভাগ নাকি সহগালের কাছে যায়।
টুলকিট ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির নামে বিভিন্ন জেলায় নগদ ঘুষ সংগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ।
ইউপিকন (UPICON)-এও একই ধরনের অনিয়ম হয়, যেখানে ভুয়ো বিল, শেল কোম্পানি ও সন্দেহজনক সাব-কন্ট্র্যাক্টিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দাবি।
খেরা আরও বলেন, প্রায় ২১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল একটি “সন্দেহজনক সংস্থায়”, যার ডিরেক্টর ছিলেন সহগালেরই দুই পুত্র।
এই সব গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সহগালকে প্রসার ভারতীর চেয়ারম্যান করা হয়- এই বিষয়টিকেই সবচেয়ে উদ্বেগজনক বলে দাবি করে কংগ্রেস। খেরার ভাষায়, “যদি প্রধানমন্ত্রী সব জানতেন এবং তবু এই নিয়োগে সায় দিয়ে থাকেন, তাহলে বিষয়টি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।”
কংগ্রেসের দাবি, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আয়কর দপ্তর উত্তরপ্রদেশ সরকার ও লোকায়ুক্তের কাছে ২৫৪ পাতার একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। কিন্তু পরে লোকায়ুক্ত জানায়, তারা ওই রিপোর্ট কখনোই পায়নি। খেরা প্রশ্ন তোলেন, “এই ২৫৪ পাতার রিপোর্ট কোথায় উধাও হয়ে গেল? যাঁর তদন্ত হওয়া উচিত ছিল, তাঁকেই পুরস্কার হিসেবে দেশের সরকারি সম্প্রচার ব্যবস্থার শীর্ষপদে বসানো হলো।”
এতেই থামেননি কংগ্রেস মুখপাত্র। তাঁর অভিযোগ, পদত্যাগের পর সহগালকে পিএমও-তে একটি পদ দেওয়ার কথাও নাকি বিবেচনা করা হচ্ছে। পিএমও-কে একটি অস্বচ্ছ ক্ষমতার কেন্দ্র বলে আখ্যা দিয়ে খেরা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দপ্তর দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান, অথচ সবচেয়ে কম স্বচ্ছ। পিএমও পরিচালিত অ্যাপে কারা শেয়ার রাখে, কোন কোন পরিবার যুক্ত, বলিউড ও বিদেশি কোন শিল্পপতিরা এর সঙ্গে জড়িত—সবকিছুই শিগগির প্রকাশ্যে আসবে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “সত্য সামনে এলে দেশবাসী চমকে যাবে, দেখবে কীভাবে দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দপ্তর এমন সব সন্দেহজনক ব্যক্তির হাতে চলে গেছে, যাদের কেউ কেউ বিদেশে হাওয়ালা মামলায়ও অভিযুক্ত ছিলেন।”
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ ব্যাচের উত্তরপ্রদেশ ক্যাডারের আইএএস অফিসার নভনীত সহগাল বিএসপি, এসপি ও বিজেপি- তিন দলের সরকারের অধীনেই কাজ করেছেন। মায়াবতী সরকারের আমলে তিনি লখনউয়ের জেলা শাসক ছিলেন। পরে ইউপি এক্সপ্রেসওয়েজ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সিইও হিসেবে লখনউ–আগ্রা এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় পরিকাঠামো প্রকল্প তদারকি করেন। এরপর ODOP প্রকল্প ও রাজ্যের তথ্য দপ্তরের দায়িত্ব সামলানোর পর ২০২৪ সালের মার্চে তাঁকে দিল্লিতে এনে প্রসার ভারতীর চেয়ারম্যান করা হয়।
কংগ্রেসের এই বিস্ফোরক অভিযোগের পর কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা ও পিএমও-র স্বচ্ছতা নিয়ে রাজনৈতিক চাপ যে আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
