আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশের রাজধানী দিল্লি-সহ একাধিক শহর ভয়াবহ বায়ু দূষণে জেরবার। জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় সংকটে পরিণত হলেও, কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে জানিয়েছে তাদের কাছে এই বিষয়ে কোনও “সুনির্দিষ্ট তথ্য” নেই। রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের প্রশ্নের জবাবে এই উত্তর দেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী প্রতাপরাও যাদব।

ডেরেক ও’ব্রায়েন প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছিলেন, ২০২২ সালে বায়ু দূষণের কারণে ১৭ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে কি না, বায়ু দূষণে দেশের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কি না, গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন রাজ্যে দূষণজনিত কারণে মৃত্যুর সরকারি হিসাব কী, বায়ু দূষণের অর্থনৈতিক ক্ষতি সরকার মূল্যায়ন করেছে কি না এবং দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য সরকারের কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে কি না।

উত্তর দিতে গিয়ে প্রতাপরাও যাদব বলেন যে দেশে এমন কোনও “প্রত্যক্ষ ও চূড়ান্ত তথ্য” নেই যা প্রমাণ করে যে বায়ু দূষণের ফলেই কোনও ব্যক্তির মৃত্যু বা নির্দিষ্ট রোগ হয়েছে। তিনি বলেন, বায়ু দূষণ ফুসফুসের অসুখ ও নানা শারীরিক সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলেও, একজন মানুষ বিভিন্ন কারণে অসুস্থ হতে পারেন, যেমন খাদ্যাভ্যাস, কাজের পরিবেশ, আর্থসামাজিক অবস্থা, পারিবারিক রোগের সূত্রে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও জেনেটিক কারণে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী প্রতাপরাও যাদব এমন সময় এই মন্তব্য করেন যখন দিল্লির বাতাসে দূষণের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং দূষণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করায় বহু মানুষকে পুলিশের হস্তক্ষেপের মুখে পড়তে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, কারণ সরকারের পক্ষ থেকে তারা কোনও কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছেন না।

সরকার যদিও জানিয়েছে যে তারা দূষণ মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হিউম্যান হেলথ (NPCCHH) উদ্যোগের অধীনে বায়ু দূষণজনিত স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলার জন্য ‘হেলথ অ্যাডাপটেশন প্ল্যান’ ও ৩৬টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য ‘স্টেট অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি হয়েছে। সেখানে দূষণ কীভাবে কমানো যায় ও তার প্রভাব কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে সেই বিষয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ রয়েছে।

কেন্দ্র আরও জানিয়েছে যে দূষণ পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলিকে পরামর্শ পাঠানো, বিশ্ব পরিবেশ দিবস, আন্তর্জাতিক ব্লু স্কাই দিবস এবং জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবসে সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর্মী, মেডিক্যাল অফিসার, নার্স, ট্রাফিক পুলিশ, আশাকর্মী-সহ বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের জন্য দূষণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া রাজ্য পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা, আগাম সতর্কবার্তা কীভাবে নিতে হবে তার ব্যবস্থা করা, স্বচ্ছ ভারত মিশন এবং উজ্জ্বলা যোজনার মতো উদ্যোগের কথাও সরকার ঘোষণা করেছে।

প্রতাপরাও যাদবের জবাবে পরিবেশ মন্ত্রকের ২০১৯ সালে চালু করা ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রামের কথার'ও উল্লেখ ছিল, যা দেশজুড়ে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি জাতীয় কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে কেন্দ্রের তরফে।

বায়ু দূষণের কারণে যেখানে স্বাস্থ্য সংকট ও অর্থনৈতিক ক্ষতি ক্রমেই বাড়ছে, সেখানে “প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই” বলে সরকারের দাবি নয়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পৃথিবী জুড়ে যখন আন্তর্জাতিক গবেষণাগুলোতে বায়ু দূষণের সঙ্গে মৃত্যু ও নানা অসুস্থতার স্পষ্ট সম্পর্ক বারবার উঠে আসছে, তখন ভারতের সরকারি অবস্থান সমালোচনার মুখে পড়ছে।