আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘাড়ে আঁচড়ের দাগ। প্রেমিককে না জানিয়েই পূর্বপরিচিতের সঙ্গে যৌন মিলন। সেই আঁচড়ের দাগ দেখে প্রেমিক যাতে সন্দেহ না করেন, তার জন্য গণধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করলেন এক তরুণী। ট্যাক্সি চালক ও সহকারীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করার পর, আসল ঘটনা এল প্রকাশ্যে। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে বেঙ্গালুরুতে। পুলিশ জানিয়েছে, এক ট্যাক্সি চালক ও সহকারীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক তরুণী। তবে অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। তরুণীর ঘাড়ে ছিল আঁচড়ের দাগ। প্রেমিকের কাছে সেটি লুকোতেই, ট্যাক্সি চালক ও সহকারীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণের ভুয়ো অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। 

পুলিশ আরও জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সি ওই তরুণী একজন নার্সিং পড়ুয়া। তিনি আদতে কেরলের বাসিন্দা। গত ৬ ডিসেম্বর থানায় পৌঁছে তরুণী জানান, স্যার এম বিশ্বেশ্বরায়া টার্মিনালের কাছে তিনি গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তদন্তে নেমে পুলিশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট খতিয়ে দেখতে শুরু করে। 

জানা যায়, তরুণীর ঘাড়ে ছিল আঁচড়ের দাগ। সেটি দেখে প্রেমিক যাতে সন্দেহ না করেন, তার জন্য ট্যাক্সিতে গণধর্ষণের গল্পটি তৈরি করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ২ ডিসেম্বর গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছিল বলে তরুণী জানিয়েছিলেন। সেদিন ট্যাক্সিতে চালক এবং সহকারী গণধর্ষণ করেছিলেন বলেও জানান। যা ঘিরে তদন্ত শুরু করেন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা। 

বেঙ্গালুরুর বাড়ি থেকে ট্যাক্সি চালককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরেই পুলিশ টের পায়, ৩৩ বছর বয়সি ওই চালক আদতে নির্দোষ। সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে, সেদিন রাত সাড়ে ১১টা থেকে পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ওই ট্যাক্সি চালকের সঙ্গে তরুণী স্টেশনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেখানে ট্যাক্সি চালকের সহকারীকে দেখা যায়নি। এরপর ভোর সাড়ে পাঁচটার পর এর্নাকুলামের ট্রেনে চড়েন তরুণী। 

ট্যাক্সি চালকের হোয়াটসঅ্যাপ ঘেঁটে পুলিশ দেখতে পায়, পারস্পরিক সম্মতিতে যৌন মিলেন লিপ্ত হয়েছিলেন তরুণী। ৩ ডিসেম্বর একগুচ্ছ মেসেজ পাঠিয়েছিলেন তিনি। দু'জনের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। এরপর আবারও তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠায় পুলিশ। 

দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তরুণী জানান, ট্যাক্সিতে চড়ার পরেই তাঁর ঘাড়ে আঁচড়ের দাগটি পড়ে। কিন্তু প্রেমিক সেটি দেখলেই সন্দেহ করতেন‌। প্রেমিকের সন্দেহ এড়াতে ট্যাক্সি চালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে ট্যাক্সি চালক জানিয়েছেন, তিনিও কেরলের বাসিন্দা। তরুণী তাঁর পূর্বপরিচিত। সেদিন ভোরে তিনিই স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁকে। ঘটনাটি ঘিরে এখনও তদন্ত চলছে। এখনও পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন ওই ট্যাক্সি চালক। 

প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে আরও এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল বেঙ্গালুরুতে। ধর্ষণের পর গর্ভবতী হয়ে পড়ে ১৭ বছরের এক কিশোরী। মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানোর পাল্টা দাবি জানায় এক তরুণ। মানসিক চাপে শেষমেশ চরম পদক্ষেপ করেন ওই তরুণ।‌ তিনদিন নিখোঁজ থাকার পর তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি শুরু হয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার তোড়জোড়। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার একটি ফ্ল্যাট থেকে ২৭ বছর বয়সি এক তরুণের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছিল ওই তরুণের বিরুদ্ধে। এই ধর্ষণের পরেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ওই নির্যাতিতা কিশোরী। ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হতেই পলাতক ছিলেন ওই তরুণ। অবশেষে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের অনুমান, ধর্ষণে অভিযুক্ত তরুণ হয়তো আত্মঘাতী হয়েছেন। 

পুলিশ আরও জানিয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর থেকে তরুণ নিখোঁজ ছিলেন। কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগটি দায়ের হওয়ার পর, সেদিন সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটা নাগাদ পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের একটি মেসেজ পাঠান তরুণ। সকলকেই তিনি জানান, ধর্ষণের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যে। তিনি কাউকে ধর্ষণ করেননি। তাঁকে পরিকল্পনামাফিক ফাঁসানো হচ্ছে।