ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও নৌবাহিনীর যুদ্ধক্ষমতা আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিদেশি সামরিক বিক্রয় কর্মসূচির আওতায় ভারত প্রায় ৭,৯৯৫ কোটি টাকা (প্রায় ৮৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের একটি চুক্তি করেছে, যার উদ্দেশ্য ভারতীয় নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক MH-60R ‘সিহক’ বা ‘রোমিও’ হেলিকপ্টার বহরের রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশনাল সক্ষমতা বজায় রাখা। এই চুক্তি আগামী পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে।
2
7
এই চুক্তির আওতায় MH-60R হেলিকপ্টারের জন্য যন্ত্রাংশ সরবরাহ, মেরামতি, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং ভারতে ইন্টারমিডিয়েট-লেভেল মেইনটেন্যান্স ও রিপেয়ার ফ্যাসিলিটি স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে। এর ফলে হেলিকপ্টারগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরতা অনেকটাই কমবে এবং দ্রুত সার্ভিসিং সম্ভব হবে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর ভারত-এর লক্ষ্য পূরণে এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
3
7
MH-60R Seahawk বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক ও বহুমুখী নৌ হেলিকপ্টার। মার্কিন নৌবাহিনী ও তাদের সহযোগী দেশগুলি এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে থাকে। এটি মূলত অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার, অ্যান্টি-সারফেস ওয়ারফেয়ার, সামুদ্রিক নজরদারি, অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান, মেডিক্যাল ইভাকুয়েশন এবং যুদ্ধজাহাজ থেকে অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। বহুমুখী এই ক্ষমতার জন্যই MH-60R আধুনিক নৌবহরের একটি অপরিহার্য অংশ।
4
7
বিশেষ করে সাবমেরিন শিকারি হিসেবে MH-60R বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত সমাদৃত। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক AN/AQS-22 ALFS ডিপিং সোনার, সোনোবয় এবং মাল্টি-মোড রাডার। পাশাপাশি এটি বহন করে শক্তিশালী Mk-54 লাইটওয়েট টর্পেডো, যার মাধ্যমে জলের নিচে শত্রু সাবমেরিন সনাক্ত, ট্র্যাক এবং ধ্বংস করা সম্ভব। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাবমেরিন কার্যকলাপ বেড়ে চলার প্রেক্ষাপটে এই সক্ষমতা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
5
7
সারফেস ওয়ারফেয়ার মিশনের ক্ষেত্রেও MH-60R অত্যন্ত কার্যকর। এতে AGM-114 হেলফায়ার মিসাইল, লাইটওয়েট টর্পেডো এবং মেশিনগান বহনের ক্ষমতা রয়েছে। ইলেকট্রো-অপটিক্যাল সেন্সর ও রাডার সিস্টেমের সঙ্গে সমন্বয়ে এই হেলিকপ্টার শত্রু যুদ্ধজাহাজ, দ্রুতগামী আক্রমণকারী নৌযান বা সন্দেহজনক জলযান চিহ্নিত করে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে। ফলে ভারতের উপকূলীয় নিরাপত্তা ও গভীর সমুদ্র প্রতিরক্ষা আরও মজবুত হবে।
6
7
উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারত ইতিমধ্যেই অর্ডার করা ২৪টি MH-60R হেলিকপ্টারের অধিকাংশই হাতে পেয়েছে। ২০২১ সাল থেকে সরবরাহ শুরু হয় এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ২০টির বেশি হেলিকপ্টার নৌবাহিনীর হাতে পৌঁছেছে। বাকি হেলিকপ্টারও খুব শিগগিরই সরবরাহ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। কোচির INS গারুড়ায় নৌবাহিনীর প্রথম MH-60R স্কোয়াড্রন INAS 334 গঠনের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্ম আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনে যুক্ত হয়েছে।
7
7
দীর্ঘ পরিসরের সেন্সর, শক্তিশালী অস্ত্র এবং যুদ্ধজাহাজ থেকে পরিচালনার ক্ষমতার জন্য MH-60R ভারতীয় নৌবাহিনীর সামুদ্রিক আধিপত্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে। সাবমেরিন ট্র্যাকিং, সমুদ্রপথ সুরক্ষা, বিমানবাহী রণতরীর নিরাপত্তা, নৌ বহরকে এসকর্ট করা এবং ভবিষ্যতের সামুদ্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই হেলিকপ্টার ভারতকে একটি বড় কৌশলগত সুবিধা দেবে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।