আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রখ্যাত ধনকুবের ছিলেন হিউ হেফনার। হিউ ছিলেন প্লেবয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন পত্রিকা প্লেবয় প্রকাশের পরই তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়ে যায়। তবে তাঁর জীবন শুধু বর্ণময় নয়, ছিল সমান বিতর্কিতও।
2
14
রক্ষণশীল পরিবার: অত্যন্ত রক্ষণশীল খ্রিস্টান পরিবারে হিউর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পরবর্তী জীবনে যৌন বিপ্লবের আইকন হয়ে ওঠা যাঁরা দেখেছেন তাঁরা হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না কতটা রক্ষণশীল ছিল তাঁর ছোটবেলা।
3
14
প্লেবয় পত্রিকার জন্ম: ১৯৫৩ সালে মাত্র ৬০০ ডলার ধার করে এবং নিজের আসবাবপত্র বন্ধক রেখে হিউ প্লেবয় পত্রিকা ছাপানো শুরু করেন। প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদকন্যা ছিলেন মেরিলিন মনরো (যদিও তাঁর ছবি ক্যালেন্ডার থেকে নেওয়া হয়েছিল)। পত্রিকা প্রকাশের পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তুমুল জনপ্রিয় হয় তাঁর পত্রিকা।
4
14
'প্লেবয় দর্শন': প্লেবয় নিছক আর পাঁচটি পত্রিকার মতো ছিল না। হিউ শুধু পত্রিকা প্রকাশ করেননি বরং একটি জীবনযাত্রার দর্শন প্রচার করতে চেয়েছিলেন, যেখানে বুদ্ধিমত্তা, পরিশীলিত রুচি এবং যৌন স্বাধীনতার উদযাপন ছিল। এই পত্রিকায় বিশ্বের বিভিন্ন সুন্দরীরা নিজেদের সাহসী ছবি প্রকাশ করতেন।
5
14
স্বতন্ত্র পোশাকরীতি: সিল্কের পাজামা, স্মোকিং জ্যাকেট এবং হাতে পাইপ – এটিই ছিল হিউ হেফনারের আইকনিক পোশাক। জনসমক্ষে, এমনকি দিনের বেলায়ও তিনি এই পোশাক পরতেন।
6
14
বিখ্যাত প্লেবয় ম্যানশন: আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে হিউ এক প্রাসাদোপম বাড়ি কেনেন। নাম রাখেন প্লেবয় ম্যানশন। এই বাড়িটি ছিল তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং লাগামছাড়া পার্টির কেন্দ্রবিন্দু। তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রী, সুন্দরী মডেল থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবাধ আনাগোনা লেগেই থাকত এই বাড়িতে।
7
14
একাধিক প্রেমিকা: ঘোষিত ভাবেই হিউ বহুগামী ছিলেন, জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি একইসঙ্গে একাধিক প্রেমিকার সঙ্গে প্লেবয় ম্যানশনে বসবাস করতেন। বিষয়টি নিয়ে জনমানসে ব্যাপক কৌতূহল ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সমালোচনার পরোয়া করতেন না হিউ। বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাৎকারে হিউ হেফনার দাবি করেছেন যে তিনি সহস্রাধিক নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। এই সংখ্যাটি তাঁর অবাধ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ যৌন জীবনের পরিচায়ক হিসেবে ধরা হয়, যদিও এর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব নয়।
8
14
তিনটি বিবাহ: একাধিক প্রেমিকা থাকা সত্ত্বেও তিনি জীবনে তিনবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিন স্ত্রীর নাম ছিল – মিলড্রেড উইলিয়ামস, কিম্বার্লি কনরাড এবং ক্রিস্টাল হ্যারিস। কিছু ক্ষেত্রে তার বিবাহিত জীবনেও অন্যান্য সঙ্গিনীদের সাথে তার সম্পর্ক বজায় ছিল বলে জানা যায়।
9
14
বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে বরাবরই সরব ছিলেন তিনি। প্লেবয় পত্রিকার মাধ্যমে তিনি সেন্সরশিপের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং ষাটের দশকে আফ্রিকান-আমেরিকান কমেডিয়ান ও সঙ্গীতশিল্পীদের জন্য জোরালো সওয়াল করেন। অর্থাৎ বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। যা সেই সময় অত্যন্ত বিরল ছিল।
10
14
নিজস্ব টিভি শো: হিউর সঞ্চালনায় "প্লেবয়'স পেন্টহাউস" (১৯৫৯-৬০) এবং "প্লেবয় আফটার ডার্ক" (১৯৬৮-৭০) নামক টিভি শো সম্প্রচারিত হত। এই শোগুলিতে তাঁর ম্যানশনের পার্টির আমেজ তুলে ধরা হতো। হিউ কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীদেরও টিভি শো-তে সুযোগ দিয়েছিলেন।
11
14
বিছানায় অফিস: এই বিষয়টিও সেই সময় তুমুল আলোড়ন তৈরি করেছিল। তাঁর একটি বিখ্যাত বিশাল গোলাকার এবং ঘূর্ণায়মান বিছানা ছিল। এই বিছানা কেবল শোওয়ার জন্যই ছিল না, এটি তাঁর কাজের জায়গাও ছিল। তিনি প্রায়শই বিছানায় বসেই পত্রিকার সম্পাদনা এবং ব্যবসায়িক কাজকর্ম সারতেন।
12
14
যৌন বিপ্লবের প্রচারক: হিউ প্লেবয় পত্রিকার মাধ্যমে যৌনতা বিষয়ক ট্যাবু ভাঙতে চেয়েছিলেন এবং যৌনতাকে জীবনের একটি স্বাভাবিক ও আনন্দময় অংশ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন। তার "প্লেবয় দর্শন" অনেকটাই যৌন স্বাধীনতার উপর কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। সমসাময়িক আমেরিকায় প্রবল জনপ্রিয় হয় এই ধারণা। অনেকেই তাঁকে যৌন বিপ্লবীও বলেন।
13
14
ভায়াগ্রার ব্যবহার: বেশি বয়সেও যৌন সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য তিনি নিয়মিত ভায়াগ্রা ব্যবহার করতেন বলে জানা যায়। হিউ নিজেও খোলামেলা ভাবে এই নিয়ে কথা বলেছেন। হিউ হেফনার তার যৌন জীবন এবং যৌনতা সম্পর্কিত মতামত নিয়ে জনসমক্ষে কথা বলতে দ্বিধা করতেন না, তাই আজও অনেকের কাছে তিনি যৌন স্বাধীনতার প্রতীক আবার অনেকের কাছে বিতর্কিত একটি চরিত্র।
14
14
মেরিলিন মনরোর পাশে সমাধি: ২০১৭ সালে মারা যান এই মার্কিন ধনকুবের। বিখ্যাত সুন্দরী মেরিলিন মনরোর ঠিক পাশের কবরে সমাধিস্থ হওয়ার জন্য তিনি আগে থেকেই জায়গা কিনে রেখেছিলেন। সেই ইচ্ছানুযায়ী ২০১৭ সালে মৃত্যুর পর সেখানেই সমাহিত করা হয় তাঁকে।