ভারতে বহুদিন ধরে ফিক্সড ডিপোজিট সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় সঞ্চয় মাধ্যম। বিশেষ করে যারা ঝুঁকি এড়াতে চান এবং মূলধন সুরক্ষিত রাখতে চান, তাঁদের জন্য এফডি এক নিরাপদ আশ্রয়। তবে অনেকেরই প্রশ্ন জাগে—একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ কত টাকা এফডিতে রাখতে পারেন? আদৌ কি এর কোনও সীমা রয়েছে? এই প্রশ্নই একবার ভিন্নভাবে ঘুরে এসেছিল বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমারের জীবনে।
2
16
একটি টিভি অনুষ্ঠানে অক্ষয় কুমার তাঁর শৈশবের একটি ঘটনা স্মরণ করেন। তিনি জানান, একদিন খবরের কাগজে পড়ে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন যে তৎকালীন জনপ্রিয় নায়ক জিতেন্দ্রর নাকি ১০০ কোটির এফডি রয়েছে। তখন তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে—এতো বড় এফডি থেকে মাসে কত আয় হতে পারে?
3
16
অক্ষয়ের বাবা তখন তাঁকে বোঝান যে আশির দশকে এফডির সুদের হার ছিল প্রায় ১৩%। অর্থাৎ, যদি ১০০ কোটির এফডি থাকে, তবে মাসিক সুদ আসবে প্রায় ১.৩ কোটি টাকা। সেই সময়েই অক্ষয় বুঝেছিলেন—আসল সম্পদ কেবল উপার্জনে নয়, বরং সঠিকভাবে বিনিয়োগ করে নিয়মিত প্যাসিভ ইনকাম তৈরি করায়।
4
16
তবে তিনি আরও বলেন, মানুষের আর্থিক আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই। একবার ১০০ কোটি হলে লক্ষ্য হয় ১,০০০ কোটি, তারপর ২,০০০ কোটি—এই ধাওয়া আসলে কখনও থামে না।
5
16
আসল প্রশ্নে ফিরলে—ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক এফডি বিনিয়োগের কোনও সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করেনি। অর্থাৎ চাইলে আপনি যেকোনো পরিমাণ অর্থ এফডিতে রাখতে পারেন। বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক এফডি অ্যাকাউন্ট খোলারও সুযোগ রয়েছে।
6
16
তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল—ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি গ্রাহকের জন্য সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা (মূলধন + সুদ মিলিয়ে) বিমা সুরক্ষা দেওয়া হয়। অর্থাৎ কোনও ব্যাংক সমস্যায় পড়লে ওই সীমা পর্যন্তই আপনার টাকা সুরক্ষিত থাকবে।
7
16
ন্যূনতম বিনিয়োগ: বেশিরভাগ ব্যাংক ন্যূনতম ১,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ দেয়।
8
16
মেয়াদ: এফডি ৭ দিন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য খোলা যায়।
9
16
অকাল ভাঙানো: প্রয়োজনে মেয়াদপূর্তির আগে টাকা তুললে ব্যাংক জরিমানা নেয় এবং কম সুদ দেয়।
10
16
সুদের হার: ব্যাংক ও মেয়াদের ওপর নির্ভর করে সুদের হার পরিবর্তিত হয়। বয়স্ক নাগরিকদের জন্য অতিরিক্ত সুদের সুবিধা থাকে।
11
16
কর প্রভাব: এফডি থেকে অর্জিত সুদ আপনার কর স্ল্যাব অনুযায়ী করযোগ্য। তবে ৮০সি ধারায় কিছু ট্যাক্স-সেভিং এফডিতে ছাড় পাওয়া যায়।
12
16
টিডিএস: বছরে সুদ আয় ৪০,০০০ টাকার বেশি (প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ৫০,০০০ টাকা) হলে ব্যাংক টিডিএস কেটে নেয়।
13
16
নমনীয়তা: এফডি-তে মনোনয়ন বাধ্যতামূলক, যাতে মৃত্যুর পর সহজে উত্তরাধিকারী টাকা পেতে পারেন।
14
16
অটো-রিনিউয়াল: অনেক ব্যাংক মেয়াদপূর্তির পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এফডি নবীকরণ করে দেয়। তাই আগে থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।
15
16
এফডির বড় সুবিধা হল—এটি মূলধন সুরক্ষিত রাখে এবং সুদ স্থির থাকে। শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো ঝুঁকি এখানে নেই। যদিও মুনাফা তুলনামূলক কম, কিন্তু স্থিতিশীলতা ও নিশ্চিত আয়ের জন্য এখনও লাখো ভারতীয়র কাছে এটি অন্যতম ভরসার জায়গা।
16
16
অক্ষয় কুমারের গল্প থেকে যেমন শেখা যায়, তেমনি আয় করার পাশাপাশি সঠিকভাবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করাও সমান জরুরি। এফডি হয়তো আপনাকে রাতারাতি কোটিপতি বানাবে না, তবে এটি দেবে স্থিরতা, নিরাপত্তা ও নিশ্চিত আয়। আর সবচেয়ে বড় কথা—আরবিআই কোনও সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়নি, আপনি চাইলে যত খুশি বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, বিমা সুরক্ষা সীমা কেবল ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।