ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, যখন পিঁপড়ের উপনিবেশ কোনও জীবাণুর সংস্পর্শে আসে, তারা এমন বাসা তৈরি করে যার প্রবেশপথগুলো চওড়া, কক্ষগুলোর মধ্যে দূরত্ব বেশি এবং সরাসরি সংযোগ কম। এই গঠনমূলক পরিবর্তনগুলো কার্যত রোগের বিস্তার রোধে “ফায়ারব্রেক” হিসেবে কাজ করে।
2
9
গবেষণাটি প্রথমবারের মতো দেখিয়েছে যে কোনও অমানব প্রাণী সচেতনভাবে তাদের আশ্রয়ের কাঠামো পরিবর্তন করতে পারে রোগ সংক্রমণ কমাতে। গবেষণার প্রধান লেখক লিউক লেকি বলেন, “আমরা জানি পিঁপড়েরা মাটি ও তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে খননের ধরণ বদলায়, কিন্তু এবার প্রথম দেখা গেল তারা রোগ ছড়ানো ঠেকাতে স্থাপত্য পরিবর্তন করছে।”
3
9
পিঁপড়েরা সামাজিক প্রতিরোধ ক্ষমতা” বা social immunity-এর জন্য বিখ্যাত। তারা একে অপরকে পরিষ্কার করে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল তরল ছিটিয়ে জীবাণু মেরে ফেলে, এমনকি আক্রান্ত পিঁপড়েরা নিজেরাই উপনিবেশের প্রান্তে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে।
4
9
বনে এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করে তাদের জটিল ভূগর্ভস্থ বাসায়, যেখানে অসংখ্য সুড়ঙ্গ ও কক্ষ খাদ্য মজুত, লার্ভা সুরক্ষা এবং চলাচলের কাজ করে। ব্রিস্টলের গবেষকরা জানতে চেয়েছিলেন, এই বাসার বিন্যাসই কি কোনওভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ হয়ে ওঠে যখন রোগের হুমকি দেখা দেয়।
5
9
তারা মাইক্রো-সিটি স্ক্যান প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবাণু-সংস্পর্শে থাকা ও স্বাভাবিক পিঁপড়ে উপনিবেশের বাসাগুলোর ৩-ডি মডেল তৈরি করেন। ফলাফল ছিল বিস্ময়কর — জীবাণুর সংস্পর্শে থাকা উপনিবেশগুলো দূরত্ব মাথায় রেখে বাসা তৈরি করেছে।
6
9
তারা প্রবেশপথগুলো দূরে সরিয়ে দিয়েছে, কক্ষগুলো আলাদা করেছে এবং সুড়ঙ্গ সংযোগের সংখ্যা কমিয়েছে। নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসব বাসায় সংযোগ কম এবং মডিউলারিটি বেশি — যা রোগ বিস্তার ধীর করতে সাহায্য করে।
7
9
এরপর গবেষকরা ওই বাসাগুলোর উপর রোগ-ছড়ানোর সিমুলেশন চালান। দেখা যায়, পরিবর্তিত গঠন পিঁপড়েদের মধ্যে উচ্চ মাত্রার জীবাণু সংস্পর্শ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। খাদ্য ও লার্ভা সংরক্ষিত কক্ষগুলো দীর্ঘ পথ ও সংকীর্ণ সুড়ঙ্গের কারণে আরও নিরাপদ থাকে।
8
9
লেকি বলেন, “সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় ছিল, যখন আমরা পিঁপড়েদের স্বেচ্ছা বিচ্ছিন্নতাকে মডেলে যুক্ত করি, তখন দেখা যায়, পরিবর্তিত বাসায় এ আচরণের প্রভাব আরও কার্যকর।” অর্থাৎ, আচরণ ও স্থাপত্য একসঙ্গে কাজ করছে — যেন স্ব-আইসোলেশন সত্যিই কার্যকর হয়।
9
9
মানব সমাজের ক্ষেত্রেও এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন হাসপাতাল, অফিস বা পরিবহন কেন্দ্রে প্রবাহ সীমিত রেখে নিরাপত্তা বজায় রাখার নকশা। পিঁপড়েদের এই “স্থাপত্য নীতি” দেখায় — প্রয়োজনে শহর বা ভবনের বিন্যাস বদলেই রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ানো সম্ভব।