সঞ্জীব কুমার— হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এক বহুমুখী ও সংবেদনশীল অভিনেতা হিসেবে যাঁর নাম আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। শোলে, সীতা অউর গীতা, আঁধি এবং আঙ্গুর-এর মতো কালজয়ী ছবিতে তাঁর অসাধারণ অভিনয় আজও দর্শকদের হৃদয়ে অমর। নিঃশব্দ অথচ গভীর অভিনয়শৈলীর মাধ্যমে তিনি বলিউডে নিজের জন্য গড়ে তুলেছিলেন এক অনন্য স্থান। কিন্তু এই সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক নিঃসঙ্গতা ও হৃদয়ভাঙার গল্প।

অসীম খ্যাতি ও সমালোচকদের প্রশংসা উপভোগ করা সত্ত্বেও সঞ্জীব কুমারের ব্যক্তিগত জীবন ছিল অপূর্ণ। তাঁর জীবন ছিল একাকীত্বে মোড়া, প্রেমে অপূর্ণ ও ব্যর্থ। জীবদ্দশায় তাঁর নাম একাধিক নায়িকার সঙ্গে জড়িয়েছিল, কিন্তু কোনো সম্পর্কই স্থায়ী সুখের পরিণতি পায়নি।

তাঁর ভাইজি জিগনা শাহ এবং সাংবাদিক-লেখক হানিফ জাভেরি, যাঁরা সঞ্জীব কুমারের জীবনের নানা দিক নিয়ে বিশদে লিখেছেন, তাঁদের মতে অভিনেতার হৃদয় সত্যিই দুটি নারীর জন্যই স্পন্দিত হয়েছিল — হেমা মালিনী এবং নূতন।

হেমা মালিনীর প্রতি তাঁর প্রেম ছিল গভীর কিন্তু একতরফা। যখন হেমা তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, সঞ্জীব কুমার নাকি আজীবন অবিবাহিত থাকার শপথ নেন। কিন্তু তার আগেই তাঁর জীবনে ঘটে গিয়েছিল আরেকটি অধ্যায় — অভিনেত্রী নূতনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক।

সম্প্রতি তাঁর জীবন নিয়ে এক আলোচনায়, জিগনা শাহ এবং হানিফ জাভেরি — যিনি সঞ্জীব কুমারের অনুমোদিত জীবনী “একজন অভিনেতার জীবন”-এর লেখক — অভিনেতার সম্পর্কগুলি নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন।

এক সাক্ষাৎকারে হানিফ জাভেরি বলেন, “হেমা মালিনীর সঙ্গে সম্পর্ক সত্যি ছিল, আর নূতনের সঙ্গে সম্পর্কও সত্যি। কিন্তু এর পরে যেসব গুজব ছড়িয়েছিল, সেগুলো একতরফা ছিল।”

তিনি আরও জানান, “সুলক্ষণা পণ্ডিত তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, এমনকি তাঁকে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সঞ্জীব রাজি হননি। তাঁর মনে এক অদ্ভুত পূর্বাভাস ছিল যে তিনি বেশি দিন বাঁচবেন না, তাই কাউকে জীবনের কষ্ট দিতে চায়নি।”

বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা সঞ্জীব কুমার এবং লেজেন্ডারি অভিনেত্রী নূতনের একটি ঘটনার বিষয়ে নতুন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। জানা যায়, ‘দেবী’ ছবির শুটিংয়ের সময় নূতন শুটিং ছেড়ে চলে যাওয়ার পর পুরো কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় পরিচালক অ্যাস্পি ইরানি সঞ্জীব কুমারকে পরামর্শ দেন, “আপনি নূতন এবং এই ঘটনার বিষয়ে মিডিয়ার কাছে কিছুই বলবেন না।” সঞ্জীব কুমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এই বিষয়টি কারও সঙ্গে ভাগ করেননি, জানিয়েছেন প্রাক্তন সহকর্মী জাভেরি।

নূতনের দৃষ্টিকোণও প্রকাশিত হয়েছে। অতীতে নূতন এই ঘটনার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি সরাসরি বলেছেন, “আমি তখন বিভ্রান্ত ও ব্যথিত ছিলাম। সঞ্জীব আমার সহঅভিনেতা ছাড়া আমার জন্য কিছুই নন।” আরও শক্তভাবে তিনি যোগ করেন, “সঞ্জীব কুমারের মান আমার স্বামীর পায়ের নখের তুলনায়ও নয়।”


পরিবারের সদস্যরাও সঞ্জীব কুমারের জীবনব্যাপী অবিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করেছেন। একজন বলেন, “তাঁর খুব কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। তখন থেকে তাঁর মনোভাব ছিল, বেশি দিন যখন নেই তাই কেন আরেকজনের জীবনকে বিয়ের করে জটিল করা। তিনি আন্দাজ করেছিলেন, তিনি আগে মারা যাবেন।”