বলিউডে কোনও গান একেক সময় কখনও কখনও শুধু গান থাকে না— হয়ে ওঠে এক অনুভূতি, চিরজয়ী মুহূর্ত। ২০১৯ সালের ওয়ার ছবির ‘জয় জয় শিবশঙ্কর’ ঠিক তেমনই এক উদাহরণ। হৃতিক রোশন এবং টাইগার শ্রফের উন্মত্ত এনার্জি, চোখধাঁধানো নাচ আর তাদের জুটির রসায়ন আজও ভোলেননি দর্শকরা।
আর সেই কারণেই, যখন ‘ওয়ার ২’–র প্রথম গান ‘জনাবে আলি’–র প্রথম ঝলক প্রকাশ্যে এল, প্রত্যাশার পাল্লা গিয়েছিল একেবারে আকাশছোঁয়া। কিন্তু যা দেখা গেল, তাতে মন ভরল না ভক্তদের— বরং তুলনা, বিতর্ক আর হতাশার ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিটি কোণায়।
“ডান্স ফ্লোরেও ওয়ার হবে!”— টিজারে দাবি ছিল বড়, বাস্তবে তেমন কিছুই পেল না দর্শক! বুধবার যশ রাজ ফিল্মস প্রকাশ করল ওয়ার ২–এর প্রথম গানের এক ঝলক— যেখানে হৃতিক রোশন ও জুনিয়র এনটিআর-কে দেখা গেল ডান্স ফ্লোরে মুখোমুখি। ক্যাপশনে লেখা, “এবার নাচের মঞ্চেও যুদ্ধ!”
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by Yash Raj Films (@yrf)
তবে অনেকের মতে, এই ‘যুদ্ধ’-এ যেন গ্ল্যামার আছে, ঘাম নেই। কোরিওগ্রাফি দেখতেও যতটা বড়লোকি, ততটাই নিষ্প্রাণ। এক ভক্তের মন্তব্যে স্পষ্ট—
“এই গান-নাচ ভাল, তবে জয় জয় শিবশঙ্কর অন্য মাত্রার ছিল!” স্রেফ এই একটা কমেন্টেই যেন লুকিয়ে রয়েছে হাজারো মানুষের নস্ট্যালজিয়া আর অনুযোগ— কেন নেই সেই পুরনো ম্যাজিক?
গানের টিউনেও অদ্ভুত মিল! নতুন কিছু নয়, পুরনো সুরের ছায়া খুঁজে পেলেন অনেকে। ‘জনাবে আলি’ গানটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে তুলনামূলক বিশ্লেষণ। অনেকেই মনে করছেন, গানের হুক বা সুর যেন আগে কোথাও শুনেছেন।
কোনও কোনও নেটিজেন বলছেন এটি ‘হাউজফুল’-এর ‘আপকা ক্যায়া হোগা’ গানটির মতো। আবার কেউ তুলনা করছেন হিমেশ রেশমিয়া–র ২০০৪ সালের গান ‘জনাবে আলি’ (বরদাস্ত ছবি)-এর সঙ্গে।
এক নেট ব্যবহারকারী খোলাখুলি লিখেছেন, “ এই গান শুনে তো আপনে তো জ্যায়সে ত্যায়সে গানের সুর মনে পড়ে যাচ্ছে।” এর মানে স্পষ্ট— গানটির সুর মৌলিকতা হারাচ্ছে, এবং তার ফলেই হারাচ্ছে দর্শক আগ্রহের চুম্বকত্ব।
সবচেয়ে বড় অভাব— টাইগার শ্রফ ও হৃতিক রোশনের সেই রসায়ন! ‘ওয়ার’ ছবিতে টাইগার ও হৃতিকের রেষারেষি, মুখোমুখি দাঁড়ানো দুই সুপারস্টারের তীব্রতা, আর নাচের মাধ্যমে রিভ্যালরি— সব কিছুই ছিল চোখ ধাঁধানো।
কিন্তু ‘ওয়ার ২’-এর ‘জনাবে আলি’ দেখার পর দর্শকেরা স্পষ্ট বলছেন— “সত্যি কথা বলতে কী হৃতিক এবং এনটিআর-এর রোসিয়ান এই ছবিকে আকৰ্ষণ করতে পারছে না, ঠিক যতটা পেরেছিল টাইগার এবং হৃতিক!”
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—
“আরে, এই দু'জন যদি শত্রুই হয় তাহলে একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে নাচছে কেন?”
“সবকিছুই মধ্যমেধার লাগছে...মানে খুব খারাপ নয়। আবার দারুণ-ও নয়”
“দূর, ফালতু!”
“টাইগার-কে খুব মিস করছি!”
তবে কি স্রেফ কাস্টিংয়েই ভারি ‘ওয়ার ২’, কনটেন্টে ঝাঁজ কম? ছবির পরিচালনায় অয়ন মুখোপাধ্যায়। ছবিতে ফের দেখা যাবে এজেন্ট কবীর হিসেবে হৃতিক রোশনকে। আর যশ রাজ ফিল্মস স্পাই ইউনিভার্সে প্রথমবার প্রবেশ করছেন দক্ষিণী তারকা জুনিয়র এনটিআর। এছাড়াও, ছবিতে রয়েছেন কিয়ারা আদবানি— যিনি এইবার এক আর্মি অফিসার ও কবীরের প্রেমিকা চরিত্রে ধরা দেবেন।
ছবিটি মুক্তি পাবে ২০২৫ সালের ১৪ আগস্ট, তিনটি ভাষায়— হিন্দি, তামিল, তেলুগু।
তবে গান দিয়ে যেভাবে ওয়ার বাজিমাত করেছিল, সেখানে ‘ওয়ার ২’-এর শুরুটাই যে ‘মধ্য মেধার’ হয়ে গেল, তাতে ট্রেন্ড বদলের সঙ্কেত স্পষ্ট।
‘ওয়ার’ এখন শুরু হয়েছে ইউটিউবের কমেন্ট সেকশনে! যেখানে আগের ছবির নাচ মানে ছিল শারীরিক লড়াইয়ের প্রতীক, সেখানে জনাবে আলি যেন ফ্যাশন শো-র ঝলক। ক্যামেরার কারিশমা আছে, কিন্তু কেমিস্ট্রির শূন্যতা এতটাই প্রকট যে অনেকেই বলছেন —
“জয় জয় শিবশঙ্কর গানের সুর যেমন ছিল, তেমন নাচ! ব্যাপারে বাপ!”
“কীভাবে কোয়ালিটি পড়েছে! টাইগারকে দরকার ছিল ওয়ার ২-এ।”
তাহলে, বড় ছবি, বড় নাম, কিন্তু বড় ইম্প্যাক্ট কোথায়?
যশ রাজ ফিল্মস স্পাই ইউনিভার্স এখন বলিউডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্র্যাঞ্চাইজি। ‘পাঠান’, ‘টাইগার ৩’ পরবর্তী এই ছবি থেকে প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু যদি দর্শকপ্রেমের প্রথম ছোঁয়াতেই গানের টান না থাকে, তাহলে যুদ্ধ তো শুরু হওয়ার আগেই ফিকে হয়ে যায়!
‘ওয়ার ২’ এখন শুধু এক ছবি নয়, একটা তুলনার যুদ্ধ — এবং সেখানে ‘জয় জয় শিবশঙ্কর’-এর ছায়া এখনও এতটাই গভীর যে তাকে টপকানো যুদ্ধের থেকেও কঠিন।