সংবাদ সংস্থা মুম্বই: বলিউডের অন্যতম পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ তিনি। ঝুলিতে ৫০০-রও বেশি ছবি, অসংখ্য টেলিভিশন শো— তবুও ব্যক্তিগত যন্ত্রণার ছায়া কখনও তাঁর পেশাদার জীবনে পড়তে দেননি বর্ষীয়ান অভিনেত্রী অরুণা ইরানি। বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৬ পেরিয়েছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজেই জানালেন, স্তন ক্যানসারের দু-দু’বার আক্রান্ত হয়েছেন তিনি!
এক খোলামেলা আড্ডায় অরুণা জানান, প্রথমবার শুটিং চলাকালীনই বুঝতে পারেন কিছু একটা অস্বাভাবিক অনুভূতি হচ্ছে শরীরে। “একদিন শুট করছিলাম, হঠাৎ যেন মনে হল, কিচ্ছু একটা ঠিক নেই। ডাক্তারের কাছে গেলাম, উনি বললেন এটা নাকি একটা সামান্য গাঁট। কিন্তু আমি জেদ করে বলি, এক্ষুনি অপারেশন করে ফেলুন!”— বললেন অভিনেত্রী।
ডাক্তার কেমোথেরাপির পরামর্শ দেন। কিন্তু তখন কেমো না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কারণ? “চুল উঠে গেলে আমি শুটিং করব কীভাবে?” তাঁর জবাব ছিল সোজাসাপটা— “ডাক্তার তখন বললেন, তাহলে একটা ওষুধ খান প্রতিদিন। আমি তাই করলাম। কারণ আমি কাজ করছিলাম, চুল ফেলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।”
কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে, ঠিক করোনা মহামারির আগে, তাঁর শরীরে ফের ফিরে এল এই মারণরোগ। “এটা আমারই ভুল ছিল,” বললেন তিনি— “আগে কেমো নিইনি, এবার বাধ্য হয়েই নিতে হল।” তবে সময় বদলেছে, চিকিৎসাও উন্নত হয়েছে। কেমো নেওয়ার পর কিছু চুল ঝরলেও দ্রুত ফিরে এসেছে সেসব। “চুল কিছু যায় ঠিকই, কিন্তু আবার গজিয়েও ওঠে,” দিলখোলা মন্তব্য অভিনেত্রীর।
শুধু ক্যানসারই নয়, ডায়াবেটিস ধরা পড়েছিল যখন তাঁর যখন ৬০ বছর বয়স। এমনকী একবার ডাক্তাররা জানিয়েও দিয়েছিলেন— “আপনার দু’টি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে!” কিন্তু সৌভাগ্যবশত, বড়সড় চিকিৎসার প্রয়োজন হয়নি। এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, অরুণা ইরানির অভিনয়যাত্রা শুরু হয়েছিল শিশুশিল্পী হিসেবে— ১৯৬১ সালে ‘গঙ্গা যমুনা’ ছবিতে। তার ঠিক পরের বছর, ‘অনপঢ়’ ছবিতে ছোটবেলার মালা সিনহার চরিত্রে। এরপর ‘জাহানারা’ (১৯৬৪), ‘উপকার’ (১৯৬৭), ‘আয়া শাওয়ান ঝুম কে’ (১৯৬৯)-এর মতো ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে ধীরে ধীরে জায়গা বানাতে থাকেন তিনি।
বিশেষ করে কৌতুক অভিনেতা মহম্মদ মেহমুদ-এর সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক ছবিতে নজর কাড়েন— ‘অওলাদ’ (১৯৬৮), ‘হমজোলি’ (১৯৭০), ‘দেবী’ (১৯৭০), ‘নয়া জমানা’ (১৯৭১) ইত্যাদি। একবার দৌড় শুরু হলে আর থেমে থাকেননি তিনি।
পরে টেলিভিশনের পর্দাতেও জমিয়ে অভিনয় করেছেন অরুণা ইরানি। শুধু অভিনয় নয়, ক্যামেরার পেছনেও কাজ করেছেন পরিচালনা ও প্রযোজকের ভূমিকায়। তাঁর জনপ্রিয় ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে রয়েছে— ‘মেহেন্দি তেরে নাম কী’, ‘দেশ মে নিকলা হোগা চাঁদ’, ‘রব্বা ইশ্ক না হোয়ে’, ‘বৈদেহি’ সহ আরও অনেক। শেষবার তাঁকে দেখা গেছে কেশরী বীর ধারাবাহিকে। দীর্ঘ কর্মজীবনে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি পান ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড।
জীবনের লড়াই হোক বা ক্যামেরার সামনে চরিত্রের লড়াই— অরুণা ইরানি প্রমাণ করে দিয়েছেন, মনের জোর থাকলে কিছুই থামাতে পারে না।
