‘সহজ পাঠের গপ্পো’র সুবাদে চর্চায় উঠে এসেছিলেন কিশোর সামিউল আলম। বেড়াচাঁপার এই ভূমিপুত্র প্রথম ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতেছিলেন শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে। দেব অভিনীত 'বাঘা যতীন' ছবিতে শহীদ ক্ষুদিরাম বসুকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছিলেন সামিউল।
এর আগেও জি বাংলার পর্দায় 'নেতাজি' ধারাবাহিকে ক্ষুদিরাম বসুর চরিত্রে সামিউলকে দেখেছেন দর্শক। ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দায়, তরুণ বিল্পবীকে ফুটিয়ে তোলার অভিজ্ঞতা আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে ভাগ করে নিলেন তিনি। স্বাধীনতা দিবসের শুরুটাই তাঁর হয়েছে ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে। এদিনটা যেন আরও বেশি করে মনে পড়ে তাঁর অভিনীত চরিত্রটিকে, শুধুই কি চরিত্র? না স্বয়ং বিল্পবীকেই বারবার আবেগে জড়িয়ে ফেলেন সামিউল?

পর্দায় ক্ষুদিরাম বসুকে জীবন্ত করে তুলতে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে সামিউলকে? অভিনেতার কথায়, "আমার কাছ যখন প্রথম এই অফারটা আসে, সেটা আমাকে শিহরিত করেছিল। ক্ষুদিরাম বসু তো সবার অনুপ্রেরণা। ওঁর মতো শহীদের চরিত্রে আমি অভিনয় করতে পারব, তখন এটা ভেবেই আমি গর্ববোধ করছিলাম। আর আমাদের পরিচালক অরুণ রায় ক্ষুধিরাম সম্পর্কে সবটা আমাকে শিখিয়ে নিয়েছেন। আসলে ক্ষুধিরাম সম্পর্কে তো আমরা সকলেই জানি, তবে অভিনয় করতে গেলে সেটা তো একটু অন্যরকমভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয়। যেমন পরিচালক বুঝিয়েছেন, আমি সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছি।"
এর আগে জি বাংলার নেতাজি ধারাবাহিকে দর্শক সামিউলকে ক্ষুদিরাম হিসেবে দেখেছে দর্শক। বড়পর্দায় এই চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে কি বেশি কসরত করতে হয়েছে? সামিউলের বলেন, "বাঘাযতীন’-এর রূপটান শিল্পী সোমনাথদা (কুণ্ডু)-র কথা আমি বিশেষভাবে বলব, উনি আমাকে যে লুকটা দিয়েছে এক কথায় অসাধারণ। বইয়ের পাতায় যখন ক্ষুদিরামকে নিয়ে পড়ি তখনই আমরা অনুপ্রাণিত হই, মাত্র ১৮ বছর বয়সে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন উনি। সেই চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তোলাটা আমার কাছে সম্মানের। ছবিটা দেখার পর আমার বহু পরিচিতরা বলেছিলেন, 'বইয়ের পাতায় যেমন ক্ষুদিরাম বসুকে দেখেছিলাম, তোকেও ঠিক সেরকম লাগছে'। এটা ছিল আমার প্রাপ্তি।"

সামিউলের কথায়, "পর্দায় যখন চরিত্রদের ফুটিয়ে তুলি, তখন সেই চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যেতে হয়। ক্ষুদিরাম বসুর চরিত্রে যে দু'বার অভিনয় করেছি, প্রতিটা শটে আমি বুঝতে পারছিলাম, এই চরিত্রটা আমার মনোবল অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।"
আরও পড়ুন: লড়াইয়ের ময়দানে মুখোমুখি দেব-জিৎ, টলিউডের বক্স অফিসে এবার কে করবেন ডাকাতি?
আগামীতে সামিউল আলম ও নূর ইসলামকে আবারও বড়পর্দায় ফেরাতে চলেছেন পরিচালক মানস মুকুল পাল। তাঁরই পরিচালনায় দর্শক দেখেছিলেন 'সহজ পাঠের গপ্পো'। এবার তাঁর হাত ধরেই ফিরছে দুই ভাইয়ের জুটি। যদিও বাস্তবে সামিউল আর নূর দুই ভাই নয়, তবুও পর্দায় তাঁদের দু'জনকে একসঙ্গে দেখে এমনই ছবি ফুটে ওঠে দর্শকের মনে। আসছে মানসের নতুন ছবি 'চণ্ডীকথা'। এই ছবির হাত ধরে বহু বছর পর আবারও পরিচালনায় ফিরছেন তিনি।
মানসের নতুন এই ছবি পঞ্চাশের দশকে মুর্শিদাবাদ জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের এই গল্পটি দুই কিশোর বন্ধুর জীবনযুদ্ধকে তুলে ধরে। মুচি সম্প্রদায়ের একটি ছেলে(সামিউল আলম) এবং তার একমাত্র বন্ধু ডোম সম্প্রদায়ের একজন (নূর ইসলাম) সেই সময়ের নিপীড়নমূলক সমাজ ব্যবস্থা, যেখানে অস্পৃশ্যতা এবং অমানবিক জাতিভেদ প্রথা প্রবল ভাবে উপস্থিত- তার মধ্যে দিয়ে সব রকম অত্যাচার, অন্যায়, শোষণ অতিক্রম করেও তাদের বন্ধুত্ব অটুট রাখে।
এই ছবি প্রসঙ্গে সামিউল বলেন, "যখন মানসকাকু গল্পটা শুনিয়েছিলেন, সারারাত দু'চোখের পাতা এক করতে পারিনি। এতটাই ভাল লেগেছিল। এই চরিত্রটার মতো কঠিন চরিত্র এর আগে করিনি। খুব খাটতে হচ্ছে এই চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার জন্য। সবাই বলছেন এটা আমার আর নূরের জুটির দ্বিতীয় ছবি। তবে আমি বলব, এটা আমি, নূর আর মানসকাকা তিনজনের জুটির আরও একটি ছবি। এই ছবিটির জন্য সত্যিই অনেক খাটছি আমরা। আশা করি, পর্দায় মুক্তি পাওয়ার পর দর্শকের থেকে ভাল প্রতিক্রিয়া পাব।"
