সঞ্জয় কাপুরের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মামলায় নতুন দাখিল হওয়া নথি নতুন প্রশ্ন তুলেছে। বিচ্ছেদের পর কি আদৌ কোনও রকম তিক্ততা ছিল তাঁদের? আদৌ কি একে অপরের থেকে দূরে সরেছিলেন তাঁরা? দিল্লি হাইকোর্টে করিশ্মার সন্তানদের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার সঙ্গে যুক্ত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং নথি ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রাক্তন দম্পতির মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ আলাপ-আলোচনা চলছিল, যা তাদের সম্পর্ককে আগের ধারণার চেয়ে গভীর বলে প্রমাণ করছে।

আদালতে জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী, করিশ্মা এবং তাঁদের দুই সন্তানের জন্য পর্তুগিজ নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করছিলেন সঞ্জয়। নথি থেকে বোঝা যাচ্ছে, পরিবারের জন্য বিদেশি নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ এগিয়ে যাওয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

মামলায় উপস্থাপিত এক হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে দেখা যায়, সঞ্জয় করিশ্মাকে বলছেন যে, পর্তুগিজ পাসপোর্ট পেতে হলে তাঁকে ভারতীয় নাগরিকত্ব ছাড়তে হবে। কারণ ভারত দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে না। আদালত এখন এই নথি ও আলাপচারিতা পর্যালোচনা করবে।
বুধবার দিল্লি হাইকোর্ট বলিউড অভিনেত্রী করিশ্মা কাপুরের দুই সন্তানের দায়ের করা একটি দেওয়ানি মামলায় নোটিশ জারি করেছে। তাঁরা প্রয়াত বাবা, শিল্পপতি সঞ্জয় কাপুরের ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তিতে অংশীদারিত্ব চাইছেন।

এই মামলায় এখন শুধু উত্তরাধিকার নয়, বরং প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক, বিদেশি নাগরিকত্বের পরিকল্পনা এবং সম্পত্তি বণ্টন—সব একসঙ্গে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে।

বিচারপতি জ্যোতি সিংয়ের বেঞ্চ মামলার ডিফেন্ড্যান্টদের উদ্দেশে সমন জারি করার নির্দেশ দিয়েছে এবং দু’সপ্তাহের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিল করতে বলেছে। এরপর এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যুত্তর দাখিল করতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৯ অক্টোবর।

সঞ্জয়ের স্ত্রী প্রিয়া সাচদেব কাপুরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন প্রয়াত ব্যবসায়ীর সমস্ত অস্থাবর এবং স্থাবর সম্পত্তির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তাঁর জবাবের সঙ্গে দাখিল করেন। মামলাটি তিন সপ্তাহ পর আবার শুনানিতে আসবে, যেখানে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে কি না, তা বিবেচনা করবে।

করিশ্মার সন্তানরা, যাদের প্রতিনিধি হিসাবে নায়িকা নিজে আদালতে আছেন, অভিযোগ করেছেন যে, প্রিয়া নাকি সঞ্জয়ের উইল জাল করে সমস্ত সম্পত্তির ওপর একক অধিকার কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছেন।

সিনিয়র অ্যাডভোকেট মহেশ জেঠমালানি বলেন, উক্ত উইল আগে কখনও প্রকাশ করা হয়নি, এটি নথিভুক্তও নয় এবং তড়িঘড়ি করে তাজ হোটেলে পড়া হয়েছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, উইলের এক্সিকিউটর নাকি একদিন আগে এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারেন এবং পরিবারের এক কর্মচারীর মাধ্যমেই তা প্রথম প্রকাশ্যে আসে।

প্রিয়ার পক্ষের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট রাজীব নায়ার বলেন, এই মামলা গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর বক্তব্য—বাদীপক্ষ ইতিমধ্যেই ট্রাস্ট থেকে উপকৃত, এমনকি মামলার কয়েকদিন আগেই তারা ১,৯০০ কোটি টাকার সম্পদ পেয়েছে।
পিয়ার হয়ে আদালতে নায়রের যুক্তি, এমন নয় যে করিশ্মা এবং তাঁর দুই সন্তানকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, পিয়া একজন বিধবা, ছ’বছরের সন্তানের মা। গত ১৫ বছর ধরে করিশ্মা এবং তাঁর সন্তানদের কোনও অস্তিত্বই সঞ্জয়ের জীবনে ছিল না।

বেঞ্চের প্রশ্নে নায়ার জানান, উইল তাদের হেফাজতেই আছে, তিনি বিচারপতি জ্যোতি সিংয়ের সামনে তা প্রদর্শন করেন এবংএকটি নন ডিজক্লোজার চুক্তির মাধ্যমে তা করিশ্মাদের দেখাতেও রাজি করতে রাজি।

সঞ্জয়ের মা রানি কাপুর তীব্র আপত্তি জানান। তিনি বলেন, “এখানে কিছু অশুভ ঘটছে। আমার বয়স ৮০ বছর এবং আমি আমার নাতি-নাতনিদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমি যে ট্রাস্ট তৈরি করেছি, সেখানে আমার জন্য কিছুই নেই? বহুবার ই-মেল করার পরও আমি কখনও উইলের কপি পাইনি।”