বাংলা ছবির দুনিয়ায় নতুন ঝড় তুলেছে দেবের ‘ধূমকেতু’। তবে শুধু বাংলা নয়, গোটা ভারত জুড়েই এই ছবি ঘিরে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত উত্তেজনা। ইতিমধ্যেই সারা ভারত জুড়ে ৩০টি-রও বেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এই দেব-শুভশ্রীর মেগা প্রজেক্ট। এবং তা মুক্তি পেয়েছে বাংলা ভাষাতেই। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়—এমন সব প্রেক্ষাগৃহ থেকেও ‘ধূমকেতু’র জন্য অনুরোধ এসেছে, যেখানে আগে কোনওদিনও বাংলা ছবি মুক্তিই পায়নি। নির্মাতাদের দাবি, ইতিমধ্যেই ১০ কোটিরও বেশি ব্যবসা করে ফেলেছে এই সিনেমা। ছবিতে দেব-শুভশ্রীর রসায়ন ছাড়াও প্রশংসিত ছবির গান। আলোচিত হচ্ছে ছবিতে শিল্পীদের অভিনয়ের নৈপুণ্যতা। এবার সেই সুরেই গলা মেলালেন জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। 

 

 

ফেসবুকে ‘ধূমকেতু’র একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের ছবি পোস্ট করেছেন সৃজিত। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক অশীতিপর বৃদ্ধের রূপটানের মুখোশ নিজের মুখ থেকে খুলছেন রুদ্রনীল। সেই ছবির সঙ্গে ক্যাপশনে পরিচালক লিখেছেন -  

দেবের কেরিয়ারের এতদিনকার সেরা, সবচেয়ে স্তরপূর্ণ আর সূক্ষ্ম অভিনয় বলেই সমালোচকেরা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন ‘ধূমকেতু’-কে। নায়কের মধ্যে দেখা গিয়েছে এক অনন্য গভীরতা—যা এর আগে দর্শকরা কমই দেখেছেন।

দুলাল লাহিড়ীও ছিলেন দুর্দান্ত। আর পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি যেন এক ফরাসি শেফ—তাঁর হাতে তন্দুরি আবেগের মশলাদার মেলোড্রামা এতটাই নিখুঁতভাবে রান্না হয়েছে যে দর্শকরা কেবল চেখে নয়, মনে রেখেছেন।  ছবিতে বেগুনের মুচমুচে, গরম ফালির মত ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সুকুমার রায়ের ছোঁয়া ।

আর অনুপম রায়ের গান একেবারে হৃদয় ছুঁয়ে গেছে—

হবে না দেখা

মা

স্মৃতির ফাটল

প্রতিটি গানেই বেজে উঠেছে আবেগের তার।

কিন্তু,ওদিকে কেক তো দূরের কথা—পুরো বেকারিই কেড়ে নিয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ (রুডি)! এমন এক অভিনয়, যা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। আর এতটাই নিবেদিত যে ‘ধূমকেতু’র বিশেষ প্রদর্শনী থেকে সোজা গিয়েছেন ‘ভিঞ্চি দা ২’-এর লুক টেস্টে! 

 

সৃজিতীয়-ছন্দের রসবোধ এক্ষেত্রেও পরিষ্কার। আসলে, সৃজিত পরিচালিত ভিঞ্চিদা ছবিতে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রুদ্রনীল। সেই ছবিতে তাঁর অভিনীত চরিত্র ছিল এমন এক রূপটানশিল্পীর যে নিমেষে রং-তুলির ছোঁয়ায় পাল্টে ফেলতে ফেলতে পারত নিজের মুখের ভোল। ছবির শেষ দৃশ্যে এক  অতি বৃদ্ধের লুকেই দেখা গিয়েছিল রুদ্রকে। সেখানেই ওই ছবি শেষ হয়? তারপর কী হল ভিঞ্চিদার- তা এখনও জানাজ যায়নি। তাই সৃজিতের পোস্ট করা ছবি থেকেই পরিষ্কার তিনি মজা করে কেন এই দৃশ্য থেকে ‘ভিঞ্চিদা ২’-র ইঙ্গিত দিলেন। 


প্রসঙ্গত, প্রেক্ষাগৃহে রমরমিয়ে চলছে দেব-শুভশ্রী-রুদ্রনীল অভিনীত এই ছবি।  গত শনিবার দক্ষিণ কলকাতার প্রিয়া সিনেমা হলে ছিল ‘ধূমকেতু’র বিশেষ স্ক্রিনিং। দেব এবং শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি দেখতে বসেছিল চাঁদের হাট। চেনা মুখেদের ভিড়, শুভেচ্ছাবার্তার ঢল কাটিয়েও থাকল এক বড় চমক! নায়ককে ভালবাসা জানাতে এলেন বিশেষ এক অতিথি।

পরনে সাদা ধবধবে পাজামা-পাঞ্জাবি। বয়সের ভারে খানিক ন্যুব্জ। ত্বকে বলিরেখাদের ভিড়। তাঁর পরিচিতি যেন আড়াল করে রাখছে পাকা চুল-দাড়ি। হাতে লাঠি। হাঁটাচলার গতিও স্লথ বৈকি! দেবকে ছবির সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানাতে থুড়ি আশীর্বাদ করতে মঞ্চেও উঠলেন। সেই ব্যক্তিকে ঘিরেও তখন উল্লাস, হর্ষধ্বনি। ভাবছেন তো তিনি কে? 

একটু মন দিয়ে দেখলেই তাঁকে চিনে নিতে অসুবিধা হয় না। সেই ব্যক্তি আসলে সোহম চক্রবর্তী। অভিনেতা, দেবের সতীর্থ। আসন্ন ছবি ‘বহুরূপ’-এর প্রচারের জন্য তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন বন্ধুর ছবির বিশেষ প্রদর্শনীতে। টলিউডের জনপ্রিয় রূপটান শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডুর হাঁতের ছোঁয়ায় এক নজরে তাঁকে চেনা দায়।