আইনত আলাদা হলেন শ্রীনন্দাশঙ্কর এবং গেভ সাতারাওয়ালা। গত রবিবার রাতে নিজেই একটি বিবৃতি দিয়ে বিচ্ছেদের বিষয়টা ঘোষণা করেছেন নৃত্যশিল্পী। সমাজমাধ্যমে অনুরাগীদের সঙ্গে একটি ছবি ভাগ করে নেন শ্রীনন্দাশঙ্কর । সেখানে লেখা, “আমি এবং গেভ আইনত আলাদা হয়ে গিয়েছি। অনেকেই হয়তো বিষয়টা আগেই টের পেয়েছিলেন, কিন্তু বিষয়টা সর্বসমক্ষে আনার আগে, ঘোষণা করা আগে আমাদের কিছুটা সময়ের প্রয়োজন ছিল।” উল্লেখ্য, শ্রীনন্দাশঙ্কর এবং গেভ সাতারাওয়ালা ২০০৯ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়েন। বাঙালি এবং পার্সি দুই মতেই তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। তিনি পেশায় একজন অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী এবং মডেল হওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটরও। সমাজমাধ্যমে নানা বিষয়ে তাঁকে মন্তব্য করতে দেখা যায়। নিজের বিচ্ছেদের খবর ঘোষণা করার পরেই সোমবার ভোররাতে লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন শিল্পী। বিমানে ওঠার আগে বিমানবন্দরের লাউঞ্জ থেকে নিজের একগুচ্ছ ছবি পোস্ট করে এই সফরের কথা জানিয়েছেন শ্রীনন্দা। এরপর লন্ডনে পৌঁছেই বিমানবন্দর থেকে একটি দুষ্টু-মিষ্টি মজাদার পোস্ট করেন তিনি।
এইমুহূর্তে ইংল্যান্ডে রয়েছেন শ্রীনন্দা। রয়েছেন সম্পূর্ণ বাঙালি পরিবেশে। সেই বাড়ি থেকেই 'মন কি বাত' নামের ফের একটি ছোট্ট ভিডিও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করলেন তিনি। ছোট্ট হলেও তা যথেষ্ট অর্থবহ। বিয়ে, বিচ্ছেদ ও বিচ্ছেদ পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দিতে দেখা গেল তাঁকে। পাশাপাশি অল্প কথায় জানিয়েছেন তাঁর আগত জন্মদিন পালন ও লন্ডন-সফরের পরিকল্পনা।
ঘরের মধ্যে থেকে করা ওই ভিডিওতে শ্রীনন্দাকে বলতে শোনা গেল, “ইংল্যান্ডে খুব সুন্দর সময় কাটাচ্ছি। বেশ শান্তিতেই। যদিও এখানে এসে এখনও একটা গোটা দিন কাটেনি, তবুও। আজ, একটু ঘুরতে বেরোবো এই আশেপাশেই, সুস্বাদু কিছু খাবার চাখার ইচ্ছেও আছে। খাওয়াটাওয়া হয়ে গেলে সেসব অবশ্যই আপনাদের জানাবো। আচ্ছা, একটা কথা...আমি কিন্তু বাঙালি বাড়িতে আছি, তাই আমার চারপাশ থেকে বাচ্চাদের হল্লা আসছে। যদিও এই পরিবেশটা কিন্তু আমার ফাটাফাটি লাগছে।”
“আচ্ছা, আর একটা কথা। অনেকেই আমাকে বেশ কিছুদিন ধরে জিজ্ঞেস করছেন যে কেন আমি আর রূপটান, রূপসজ্জার কোনও ভিডিও আপলোড করছি না? সত্যি কথাটাই বলি জবাবে। আসলে, যখন আপনি খুব কান্নাকাটি করেন, তখন আপনার চোখ ফুলে যায়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। আর তাই মেক আপের ভিডিও করতে পারিনি...আমাকে কিছুদিন সময় দিন। কথা দিচ্ছি, এমন দারুণ মেক-আপের ভিডিও আপলোড করব যে দেখে চমকে যাবেন। আর সবসময় তো মুখেচোখে রূপটান দিতে ইচ্ছেও করে না। আরে, দিনের শেষে আমরা তো নারী। আমাদেরও তো নানারকম মুড হয়। তা নিয়ে আমার অবশ্য কোনও সমস্যা নেই। আপনিও এই ব্যাপারটিকে সমস্যা মনে করবেন না। নারী হিসেবে গর্বিত বোধ করুন। বেশ হয়েছে, যদি আমরা খামখেয়ালি, তো খামখেয়ালি!” তাই নিজেদের নানা মুড, দুর্বলতা কিংবা খামখেয়ালিকে দোষ না দিয়ে, গর্বের সঙ্গে এগিয়ে চলার আহ্বান রাখলেন তিনি।
আরও বললেন, “আমি জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করব এখানে। তাতে যদি আমার ওজন বেশ কয়েক কিলো বেড়ে যায়, তো যাবে। সবকিছুর ভিডিও শেয়ার করব। ও হ্যাঁ, আসন্ন বড়দিনে আমারও জন্মদিন। সেই দিনটি লন্ডনে কাটাবো, নিজের জন্মদিনটা ওখানেই জমিয়ে উদযাপন করব। ৪৫-এ পড়ব। এই যে বয়স ৪৫ হচ্ছে...এই ব্যাপারটা নিয়ে অল্প দুঃখও লাগছে আবার বেশ আনন্দও কিন্তু হচ্ছে। এই ফাঁকে আরও একটা কথা বলে ফেলি। যদি আপনি মনে করেন, আপাতদৃষ্টিতে কোনও সাহসী পদক্ষেপ, কোনও দুঃসাহসী কাজ করলে আপনার জীবনটা আরও একটু সুন্দর হয়ে উঠবে, তাহলে চটপট সেটাই করে ফেলুন। জাস্ট করে ফেলুন!”
তবে তাঁর বার্তার সবচেয়ে শক্তিশালী অংশটি-স্বনির্ভরতার কথা। শ্রীনন্দার স্পষ্ট বক্তব্য, “অতি অবশ্যই উপার্জন করুন। আজ টাকা উপার্জন করতে পারছি বলেই নিজের এই কঠিন পরিস্থিতি, সময় কাটিয়ে উঠতে আমি কিন্তু লন্ডনে চলে আসতে পেরেছি! আমার তো মনে হয়, বাড়িতে বসে দুঃখ করার থেকে লন্ডনে এসে নিজের এই কঠিন সময় কাটিয়ে ওঠার যে চেষ্টাটা, সেটা আমার কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।”
ভিডিওর একেবারে শেষ অংশে শ্রীনন্দাকে দেখা যায় ঘাস ছাঁটা লনে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। পিছনে বিলেতের অতি পরিচিত সুদৃশ্য বাড়িঘর। ঝোড়ো হাওয়া বইছে। আর তা থেকে বাঁচতেই গলায়-মাথায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে রেকেছেন শ্রীনন্দা। ওঁর নিজের কথায় অবশ্য “এটা আমার সোনার কেল্লার ডঃ হাজরা লুক। বাবারে কী ঠান্ডা! উফ!”
নতুন বয়স, নতুন অধ্যায়। উদযাপনও তাই বিদেশেই। ঠান্ডা হাওয়ায় জড়িয়ে থাকা স্কার্ফ, ঝোড়ো আবহাওয়া, আর ভেতরে ভেতরে সাহসী এক নতুন সূচনার ইঙ্গিত, শ্রীনন্দার সাম্প্রতিক ভিডিও যেন সেই প্রতীকই।
