এবার বিপাকে বলিউডের ‘মসিহা’ সোনু সুদ। পর্দায় যতই তিনি হিরো হয়ে উঠুন না কেন, দিল্লির এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর ঘেরাটোপে হাজিরা দিতে হবে তাঁকে। অবৈধ অনলাইন বেটিং অ্যাপ ‘১xবেট’ কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে পড়েছে এই অভিনেতার। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর সোজা দিল্লির সদর দফতরে তাঁকে হাজিরা দিতে সমন পাঠিয়েছে লব কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই সমস্ত অ্যাপের হয়ে প্রচার করেছেন এবং সেখান থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। 

তবে একা নন সোনু। এই কেলেঙ্কারির জাল ছড়িয়েছে বলিউড থেকে ক্রিকেট জগৎ—সবখানেই। ইতিমধ্যেই নাম উঠেছে অভিনেত্রী উর্বশী রাউটেলা, প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিং, যুবরাজ সিং এবং সুরেশ রায়নার মতো তারকাদেরও। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এই সব জনপ্রিয় মুখকে ব্যবহার করে ছদ্মবেশে প্রচার চালাত বেটিং কোম্পানি।

ইডি সূত্রে খবর, এই সমস্ত বেটিং প্ল্যাটফর্ম আসল নাম না ব্যবহার করে চালাত প্রচার। বিজ্ঞাপনে দেখা যেত ‘১xবেট’ বা ‘১xবেট স্পোর্টিং লাইনস’-এর মতো নাম। বিজ্ঞাপনের ভেতরে থাকত একটি QR কোড—যেটিতে ক্লিক করলেই ব্যবহারকারীরা পৌঁছে যেতেন সরাসরি বেটিং সাইটে। ভারতীয় আইনে যেখানে অনলাইন বেটিং সম্পূর্ণ বেআইনি, সেখানে এমন প্রকাশ্য জুয়া খেলাই এখন সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে।


ইডি-র এক শীর্ষ আধিকারিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এই বিজ্ঞাপনগুলিতে তারকাদের মুখ ব্যবহার করা হচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ তা দেখে সেখানে ঢুকে পড়ছে। এতে আইন ভাঙা হচ্ছে প্রকাশ্যেই।” অর্থাৎ, কেবল সংস্থাই নয়—প্রচারের অংশীদার সেলেব্রিটিরাও তদন্তের মুখে।
একসময় ‘মদা গজা রাজা’-র মতো কমেডি ছবিতে অভিনয় করে দর্শক মাতিয়েছেন সোনু। পরিচালকের আসনেও বসেছেন—নিজের ডেবিউ ফিল্ম ‘ফতেহ’তে জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন তিনি। সিনেমার ভেতরে একের পর এক নায়কোচিত চরিত্রে দেখা গেলেও, এখন বাস্তবে তাঁকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে কঠিন প্রশ্নোত্তর।তাঁর বলিউড যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, তামিল ছবি ‘কল্লঝগর’ দিয়ে। দীর্ঘ দুই দশকের কেরিয়ার তাঁকে বানিয়েছে প্যান-ইন্ডিয়া স্টার। কিন্তু এবার তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে এক ভয়ংকর জুয়াখেলা কেলেঙ্কারির সঙ্গে।

বর্তমানে ইডি ক্রমশ তদন্তের জাল বিস্তার করছে। একদিকে যেমন সোনু-উর্বশী-সহ বলিউড তারকারা আছেন, অন্যদিকে হরভজন, যুবরাজ, রায়নার মতো প্রাক্তন ক্রিকেট তারকারাও আসছেন প্রশ্নের মুখে। তাদের সবাইকে শিগগিরই তলব করা হতে পারে।

বলিউডের ঝলমলে দুনিয়া আর ক্রিকেটের উন্মাদনা—দুটিকেই অস্ত্র করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বেআইনি বেটিং চক্র। আর সেই টাকার আঁচ এসে লাগছে তারকাদের গায়ে।

প্রশ্ন একটাই—সোনু সুদ কি শুধুই নাম ব্যবহার হওয়ার শিকার? নাকি তিনি নিজেও জানতেন এই চক্রের গভীরতা? উত্তর দেবে ইডির জেরা। কিন্তু আপাতত বলিউডে শোরগোল, আর দর্শকের চোখ আটকে আছে এই বহুল আলোচিত জুয়াখেলার কাহিনিতে।


সম্প্রতি, বেআইনি বেটিং অ্যাপ-কাণ্ডে দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে হাজিরা দিলেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। সোমবার সকালে কেন্দ্রীয় সংস্থার দফতরে পৌঁছে যান তিনি। সঙ্গে ছিলেন মিমির আইনজীবী। কাগজপত্রও নিয়ে গিয়েছিলেন যাদবপুরের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ। ইডি দফতরে প্রবেশের মুখে সাংবাদিকদের সামনে তেমন কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তবে বেরিয়ে এসে কথা বলবেন বলে গিয়েছেন।মিমি-সহ বেশ কয়েক জনকে বেআইনি অনলাইন বেটিং অ্যাপ সংক্রান্ত মামলায় তলব করেছে ইডি। মিমি-সহ একাধিক তারকার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা এই সমস্ত অ্যাপের হয়ে প্রচার করেছেন এবং সেখান থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। সে বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করতে কেন্দ্রীয় সংস্থা একের এক তারকাকে তলব করছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ইডি দফতরে একই মামলায় হাজিরা দেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন ওপেনার শিখর। বহুক্ষণ ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।