নিজস্ব সংবাদদাতা: সাদাকে কালো, আবার তুলির টানে কালোকে সাদা। তাঁর হাতের জাদুতেই জনপ্রিয় নায়ক হয়ে ওঠেন কঠিন খলনায়ক। তাঁর রং, তুলি মেকআপের ম্যাজিকে একালের অভিনেতার মধ্যে ফিরে আসেন সেকালের পরিচালক। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ‘অপরাজিত’ ছবিতে। অনীক দত্তের পরিচালনায় সেই ছবিতে সেরা রূপটানের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেলেন শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু। নিজের বাবার সঙ্গেই এই পুরস্কার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিহত চিকিৎসককে উৎসর্গ করেছেন তিনি।

গুমনামী'-র প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নেতাজি লুক থেকে শুরু করে, 'এক যে ছিল রাজা'-র যিশু সেনগুপ্ত কিংবা 'মহানন্দা'-র গার্গী রায়চৌধুরী থেকে অপরাজিত'-র সত্যজিৎ রায় রূপে জিতু কমল, সোমনাথ কুণ্ডুর হাত ধরেই একের পর চমক দেখেছেন বাংলা ছবির দর্শকেরা। তাঁর হাত ধরেই মূলত বাংলা ছবিতে প্রস্থেটিক মেকআপের ব্যবহার শুরু হয়েছে। যদিও এর আগে অসামান্য কাজ করেছেন শিল্পী। কিন্তু স্বীকৃতি মেলেনি। তাই এবার পুরস্কারের খবর পেয়েও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি তিনি। 

আজকাল ডট ইনের তরফে জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। বর্তমানে নতুন এক কাজে ব্যস্ত তিনি। লুক সেটের ফাঁকেই ফোনে সোমনাথ কুণ্ডু বলেন, “প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ আগেও অনেক ছবি করেছি যেগুলি হয়েতো স্বীকৃতি পেতে পারত, কিন্তু পায়নি। তারপর তিন চারজন বলার পর ভাবলাম হয়েতো এবার সত্যি খবর।”

পুরস্কার পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি শিল্পী। তাঁর কথায়, "ভালোই লাগছে। দায়িত্ব বেড়ে গেল আরও ভালো করে কাজ করার। ‘অপরাজিত’ অনীক দত্তর সঙ্গে সোমনাথের প্রথম কাজ। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনীক দা খুব খুঁতখুঁতে মানুষ। তাই প্রথমে ভেবেছিলাম কী করে কাজ করব! কিন্তু উনি যে এত নিঁখুত কাজ করেন তা পরে বুঝেছি। এত ভালো স্ক্রিপ্ট করেছিলেন। উনি মেকআপ শিল্পীদের খুবই গুরুত্ব দেন। আমার তাই খুব ভালো লাগে। ছবিটি মুক্তির পর দর্শকদেরও ভালো লাগে। 

জিতু কমলকে সত্যজিৎ রায় হিসাবে তুলে ধরা, কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল? শিল্পীর কথায়, “মি. রে-কে বিভিন্ন বয়সে ফুটিয়ে তোলার জন্য আমি পড়াশোনা করেছিলাম। লুক সেটের সময় সবাই ইয়ার্কি মেরেছিল, কিন্তু জিতুকে মেকআপ করে যখন ঘরে পাঠাই তখন সবার ইয়ার্কি মারা বন্ধ হয়ে যায়। বুঝেছিলাম সকলের ভাল লাগতে পারে। আমি হয়েতো সত্যজিৎ রায়কে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি।” 

‘অপরাজিত’-র স্ক্রিপ্ট রাইটার শ্রীপর্ণা মিত্র, প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান এবং পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের থেকেই প্রথম খবর পান সোমনাথ কুণ্ডু। একসঙ্গে তিনজনই ফোন করছিলেন তাঁকে। কয়েক সেকেন্ডের তফাতে তাঁরাই জানান সেই খুশির খবর। প্রথম জাতীয় পুরস্কার রূপটান শিল্পী বলেন, "এই পুরস্কার আমি আমার বাবাকে উৎসর্গ করব। উনি আজ নেই। ওঁনার জন্যই আমার ইন্ডাস্ট্রিতে আসা। আরজি করের সদ্য নিহত চিকিৎসকের আত্মার শান্তি কামনা করি। বাবাকে এবং তাঁকেই এই পুরস্কারটা আমি উৎসর্গ করলাম।"