শনিবার দক্ষিণ কলকাতার প্রিয়া সিনেমা হলে ছিল ‘ধূমকেতু’র বিশেষ স্ক্রিনিং। দেব এবং শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি দেখতে বসেছিল চাঁদের হাট। চেনা মুখেদের ভিড়, শুভেচ্ছাবার্তার ঢল কাটিয়েও থাকল এক বড় চমক! নায়ককে ভালবাসা জানাতে এলেন বিশেষ এক অতিথি।

পরনে সাদা ধবধবে পাজামা-পাঞ্জাবি। বয়সের ভারে খানিক ন্যুব্জ। ত্বকে বলিরেখাদের ভিড়। তাঁর পরিচিতি যেন আড়াল করে রাখছে পাকা চুল-দাড়ি। হাতে লাঠি। হাঁটাচলার গতিও স্লথ বৈকি! দেবকে ছবির সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানাতে থুড়ি আশীর্বাদ করতে মঞ্চেও উঠলেন। সেই ব্যক্তিকে ঘিরেও তখন উল্লাস, হর্ষধ্বনি। ভাবছেন তো তিনি কে? 

একটু মন দিয়ে দেখলেই তাঁকে চিনে নিতে অসুবিধা হয় না। সেই ব্যক্তি আসলে সোহম চক্রবর্তী। অভিনেতা, দেবের সতীর্থ। আসন্ন ছবি ‘বহুরূপ’-এর প্রচারের জন্য তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন বন্ধুর ছবির বিশেষ প্রদর্শনীতে। টলিউডের জনপ্রিয় রূপটান শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডুর হাঁতের ছোঁয়ায় এক নজরে তাঁকে চেনা দায়।

‘বহুরূপ’-এর নায়ক সোহম। বহু দিন পর বাণিজ্যিক ছবির চেনা পরিধি থেকে বেরিয়ে নিরীক্ষামূলক কাজ। নিজেকে পুরোপুরি ভাবে ভেঙে নতুন করে গড়েছেন অভিনেতা। আসন্ন ক্রাইম-থ্রিলারে নানা রূপে দেখা যাবে তাঁকে। এবার তারই আগাম ঝলক মিলল। অনেকেই মনে করছেন এই ছবি একদা ‘হিট নায়ক’কে ফের ইন্ডাস্ট্রির মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারে। পাশাপাশি দেবের প্রশংসা করতেও ভোলেননি অনুরাগীরা। নিজের ছবির বিশেষ প্রদর্শনীতে অন্য এক নায়ককে প্রচার সুযোগ করে দেওয়ার উদ্যোগকে তাঁর ‘উদার মানসিকতা’র দলিল বলে মনে করছেন অনেকেই। দুই নায়ককে একসঙ্গে চাক্ষুষ করে খুশি বাংলা ছবি-প্রেমীরা।

বিশেষ প্রদর্শনীতে দেবের সঙ্গী হয়েছিলেন প্রেমিকা রুক্মিণী মৈত্র। অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও পরিপাটি সেজে মনের মানুষের সাফল্যের উদযাপনে শামিল হয়েছিলেন নায়িকা। ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে একটি নিজস্বী পোস্ট করেছিলেন রুক্মিণী। জানিয়েছিলেন তিনি ‘ভাইরাল’ জ্বরে আক্রান্ত। একটি হালকা গোলাপি টি শার্টে লেন্সবন্দি করেছেন নিজেকে। হাতের মধ্যমায় জ্বলজ্বল করছে হিরের আংটি। মুখে নেই মেকআপের চিহ্ন। একঢাল চুল আলুথালু। পর্দার বিনোদিনী লেখেন,  ‘যখন সেই কুখ্যাত ভাইরাল জ্বর শেষমেশ চেপে ধরে। ১০২.. নট আউট।’

তবু অসুস্থতাকে তোয়াক্কা না করে খয়েরি রঙের ওয়ান পিস আর খোলা চুলে দেবের হাতে হাত রেখে হাজির হয়েছিলেন ‘ধূমকেতু’র সাফল্য চাক্ষুষ করতে। দর্শকের মুখে যখন ‘দেশু’ জুটির জয়জয়কার, দূরে দাঁড়িয়ে তা হাসি মুখে প্রত্যক্ষ করেন পর্দার বিনোদিনী।

‘ধূমকেতু’ মুক্তির সময় থেকেই নতুন করে আলোচনায় উঠে আসেন রুক্মিণী। ছবির অংশ তিনি নন। দেব এবং শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের রসায়নের চর্চার মাঝেই নায়কের বিশেষ বন্ধুর মন নিয়ে শুরু হয় কাটাছেঁড়া। অনেকেই মনে করছিলেন, শুধুমাত্র ছবির স্বার্থে হলেও প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর প্রাক্তনের এই নবনির্মিত বন্ধুত্ব ভাল ভাবে নেননি তিনি। সেই গুঞ্জনে জল ঢেলে তিনি বলেন, “২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে যদি এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় তাহলে আর কিছুই বলার নেই। সবাই এখানে কাজ করছেন, সহ অভিনেতার সঙ্গে কাজ সহজ করাই প্রত্যেকের কাজ, আমি জানি ওরা প্রত্যেকেই খুব প্রফেশনাল। তাও এই সময় দাঁড়িয়ে এই ধরনের কথা হচ্ছে মানে আসলে আমরা পিছিয়ে গিয়েছি।” শুধু মুখে বলা নয়, কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে বরাবর ভারসাম্য রেখেছেন দেব। এবার রুক্মিণীও সেই কথাই বললেন।