বরাবরই তিনি সহজ কথায় বিশ্বাসী, সোজাসাপটা ছন্দে বিশ্বাসী। গায়ক-অভিনেতা স্বভাবে স্পষ্টবাদী। আবার রসিকতাও জানেন। তিনি, শিলাজিৎ মজুমদার। গত রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় কলকাতার এক নামি প্রেক্ষাগৃহে ‘অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ ছবিটি দেখতে গিয়েছিলেন তিনি । মোটা টাকার অঙ্কের টিকিট কেটেই গিয়েছিলেন। খানিক আরাম করে, নির্বিঘ্নে দেখবেন বলেই। তা সত্বেও কি মন দিয়ে ছবিটি দেখার মতো পরিবেশ পেয়েছেন তিনি? এই ছবি দেখাকালীন প্রেক্ষাগৃহে কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি? সেসব নিয়েই এক নাতিদীর্ঘ পোস্ট করলেন শিলাজিৎ। খানিক আলো-ছায়ার মধ্যে রাখলেও এইসব সমস্যার সমাধানের জন্য কোন পথ অবলম্বন করা উচিত, সেই বিষয়ে কিন্তু ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সেই আলো-আঁধারি ইঙ্গিতের মধ্যে আবার স্পষ্ট প্রসঙ্গ তুলেছেন নিজের কনসার্টের একটি নিয়ম লাগু করার কথাও। ঠিক যেমন স্পষ্টভাবে উঠেছে শিল্পের কথা, বাংলা ভাষার কথা।
ফেসবুকে শিলাজিৎ লিখেছেন, “একটা ছবি দেখতে গেছিলাম, এতো শুনছি মনে হলো যে ছবি টা না দেখলে হয়তো বিরাট miss হয়ে যাবে।সব থেকে বেশি দামের টিকিট কাটলাম seat পছন্দ করে online এ।দাম সব ট্যাক্স ফ্যাক্স নিয়ে মোট সাড়ে চারশো টাকা।ছবিটার সমালোচনা করার কোনো উদ্দেশ্য নেই আমার,আমার cinema সমালোচনা করার কোনো শিক্ষা, সামর্থ্য নেই,এসব সামর্থ্য আছে যাদের তারা চাকরি করে।আমি দর্শকদের দেখলাম আজকে ছবি দেখার থেকে বেশি।রবিবার evening show .. ভেবেছিলাম এতো প্রচার হচ্ছে টিকিট পাবো কিনা পরে কাটলে , তাই আগের দিন টিকিট কেটে নিয়ে ছিলাম। হল এ ঢুকে দেখলাম খুব বেশি হলে হল এর অর্ধেক হয়তো ভরেছে।হয়তো বললাম কারণ আমার পক্ষে ফাঁকা seat গোনা টা সম্ভব ছিল না।কিন্তু যারা এসেছিলেন তাদের ছবির শুরু থেকে interaction এর সাক্ষী হলাম।আহা এক একটা গালাগালি শুনছে আর হেসে গড়িয়ে পড়ছে দর্শক রা।কেউ নিঃশব্দে কেউ কেউ সশব্দে।যখন বেড়াল টাকে মারা হচ্ছে কি হাসি মানুষের।যখন পাগল টাকে লাথি মারা হচ্ছে কি হাসি PUBLIC এর, রুদ্রনীল বোকা বলল, পুরো টা না বলে কি হাসি জনগণের।
আমার মনে হচ্ছিল একটা হাসির ছবি দেখতে গেছি বোধ হয় ।এমন কি যখন সুদীপ এর পেয়ার এর কচ্ছপ টা একজন অভিনেতা রান্না করে ফেললেন তখন তো হাসি থামছেই না।এবং অদ্ভুত ভাবে তাদের হাসির শব্দ গুলো মেয়েলি হাসির শব্দ মনে হলো।পুরুষ দের হাসি শুনতে পেলাম না। মহিলা রা কি গালাগাল শুনতে পান না বলে এত হাসি তাদের।অশালীন বলে যা জানি তাতে মহিলাদের এতো হাসির কারণ কি হতে পারে ভাবছিলাম।

ভাবছিলাম করা আজ ছুটির দিন সন্ধ্যে বেলায় পয়সা দিয়ে গালাগাল শুনে হাসতে এসেছেন এবং কেনো।আমার পাশে একজন কুড়ি একুশ বছর বয়সের মেয়ে বসে ছিলেন,তিনি তো থামতেই পারছিলেন না,যখন উনি বুঝতে পারলেন যে অনুরূপার পোষা কৃষ্ণেন্দু নামক কুকুরটি কে একজন জিভ কাটা ছেলে রান্না করে ফেলেছে।
আমার না খুব একটা হাসি পায়নি।আমি ভাবছিলাম অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এর AC টা কাজ করে কিনা ঠিক মতো।আমার নিরামিষ খাবারের গন্ধে গা ঘিন ঘিন করছিল। আমিষ খাই তো।নিরামিষ সহ্য করতে পারি না।এই জন্য আমি এই হল গুলো তে সিনেমা দেখতে যেতে পছন্দ করিনা।তবুও মাঝে মধ্যে যাই।
অনেকে পপ কর্ন খাচ্ছিলেন।
রেগুলার salted pop corn এর দাম তিনশো পঞ্চান্ন।ভুট্টার খই । নওয়াজউদ্দিন এর একটা বিখ্যাত ডায়ালগ মনে পড়ে গেলো।কেনো ভুট্টার দানা ফট ফট করে আওয়াজ করে তার উত্তর দিয়েছিলেন তিনি কোনো একটা সিনেমা তেই।
বাঙালি দর্শক দুশো টাকার টিকিট কেটে সিনেমা দেখতে গিয়ে কয়েকটা খুব বেসিক গালাগাল শুনে হেসে ককিয়ে উঠছে..আর তিন শ টাকার ভুট্টার খই কিনে খাচ্ছে ... কচমচ করে, দামী কোলা খেয়ে ঢেকুর তুলছে ঘড়ক করে,ফোন ধরে বাড়ির চাবি কোথায় আছে তার উত্তর দিচ্ছে পাশের লোক টা কি মনে করছে তার বিন্দু মাত্র চিন্তা না করে।
আজকে বহু চর্চিত এই fine arts দেখতে গিয়ে আমার মনে হলো সিনেমার সমালোচনা না করে দর্শকদের সমালোচনা করাটা অনেক জরুরী।
আর সেই জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে আমি বলছি সমস্ত বাংলার পরিচালক প্রযোজক দের,আপনারা টিকিট এর দাম টা এটলিস্ট পপ কর্ন এর থেকে বাড়ান।আজকে যে কজন সিনেমা দেখতে গেছিলেন তারাই যদি আসতেন পঞ্চাশ টাকা বা একশো টাকা করে দাম বাড়াতেন আপনারা পাঁচ বা দশ হাজার টাকা বেশি ইনকাম করতেন।
প্লীজ বাংলা সিনেমার দাম একটা নেহাত নিরামিষ পপ কর্ন এর থেকে বেশী হোক।সিনেমা কত টা ভালো বা খারাপ হলো তার থেকেও বেশি প্রয়োজন সিনেমার দর বাড়ানো।আমরা গান গাইতে গেলে দু হাজার টাকার টিকিট বিক্রি করার সাহস রাখি। তাতে হল ভরুক বা না ভোরুক।বাংলা সিনেমা যা আমাদের গান এর থেকে অনেক বেশি প্রভাবশালী তার সর্বোচ্চ দামে সাড়ে চারশো টাকা এটা মেনে নিতে পারছিনা।
দর বাড়ান ...প্লীজ দর বাড়ান ..যারা গালাগালি শুনে হাসতে আসেন তাদের কে পপ কর্ন এর থেকে বেশী টাকায় টিকিট বিক্রি করুন।
রবিবার সন্ধ্যায় একটা বহুচর্চিত ছবি দেখতে আসার দাম বুঝে নিন,সেটা খারাপ হোক বা ভালো।
বাংলা ছবির দাম বাড়ান।তাতে যদি কেউ না আসে তারা অন্যায্য বেশি দামের ভুট্টার খই খাক।কে মাথার দিব্যি দিয়েছে যে সিনেমা দেখতে আসতেই হবে ।কত লোক তো আজ রাতে ভালো করে খেতেও পাবে না।
তো? এ দেশের সত্তর ভাগ মানুষ আজ কোনো রকমে কিছু একটা খেয়ে ঘুমোতে যাবেন কাল ভোরে উঠে কাজে বেরোতে হবে বলে।সিনেমা খেতে গেলে তো একটু দাম দিতেই হবে।সেটা না হয় বাংলা ভাষা তে,তবুও সিনেমা তো।”
(পোস্টের বানান অপরিবর্তিত রাখা হল।)
