একদিকে রাজনৈতিক পথচলার এক নতুন অধ্যায়, অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনের গভীর আবেগ—এই দুই মিলিয়ে ইতিহাস গড়লেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ও মক্কাল নিধি মাইয়াম (MNM) দলের প্রতিষ্ঠাতা কমল হাসান। দিল্লিতে রাজ্যসভা সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার ঐতিহাসিক মুহূর্তে তাঁর পাশে ছিলেন এক নিঃশব্দ সাক্ষী, তাঁর কন্যা শ্রুতি হাসান।
শ্রুতি, যিনি নিজেও ভারতীয় চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতজগতে এক অনন্য পরিচিতি গড়ে তুলেছেন, এদিন কোনও রকম আড়ম্বর ছাড়াই উপস্থিত ছিলেন। স্রেফ এক কন্যার মূর্ত প্রতীক হয়ে—গর্বিত, আবেগময় এবং নিজের বাবার প্রতি নিঃশব্দ ভালবাসা নিয়ে। শপথের পর ইনস্টাগ্রামে এক মর্মস্পর্শী পোস্টে লেখেন—“ভালবাসি ও তোমার জন্য গর্বিত, আপ্পা। চিরকাল।”

২৫ জুলাই, বর্ষাকালীন অধিবেশনের পঞ্চম দিনে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে তামিলে শপথ নেন কমল হাসান। সদ্য নির্বাচিত এই সাংসদকে স্বাগত জানান অন্যান্য সাংসদরা, টেবিল চাপড়ে প্রশংসা করে। পরে তিনি রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশকে অভিবাদন জানান। শপথ গ্রহণের আগে সংবাদমাধ্যমকে কমল হাসন জানান,“আমি গর্বিত, সম্মানিত। আমি ভারতীয়, নিজের কর্তব্য পালন করব। আজ ইতিহাসে আমার নাম নথিভুক্ত হবে।”
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কমল হাসানের এমএনএম, ডিএমকে নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়। সেই আসন-বণ্টনেই রাজ্যসভার একটি আসন পান হাসান। ৬ জুন মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি, সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন, উপ-মুখ্যমন্ত্রী উদয়নিধি স্টালিন, এবং জোটসঙ্গী নেতারা—ভিসিকে’র থোল তিরুমাভলাভন, এমডিএমকে’র ভাইকো এবং কংগ্রেস নেতা সেলভা পেরুণথাগাই।
এটাই কমল হাসানের প্রথম আনুষ্ঠানিক সাংবিধানিক পদ। ২৩৪ সদস্যবিশিষ্ট তামিলনাড়ু বিধানসভায় রাজ্যসভার জন্য প্রয়োজন ছিল ন্যূনতম ৩৪টি ভোট—সেটা তিনি নির্বিঘ্নে পেয়ে যান।
‘থাগ লাইফ’-খ্যাত এই অভিনেতার সংসদে প্রবেশ শুধুই রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়, এটি তাঁর দীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল। অভিনয় থেকে রাজনীতিতে পা রেখে, বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। আজ তাঁর সেই যাত্রাপথে এক মাইলস্টোন স্পষ্ট হলো—আর সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ভূমিকায় থাকা একজন—এক গর্বিত কন্যা।
এই দৃশ্য যেন প্রমাণ করে দিল—আলোয়-আবেগে-অভিমানেও রাজনীতির মঞ্চে মানুষটা এখনও এক শিল্পী।
