বলিউডের ‘বাদশা’ তিনি। কোটি কোটি মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখা এক জাদুকর। কিন্তু শাহরুখ খান শুধু রুপালি পর্দার রাজা নন, তিনি এমন এক দার্শনিক—যাঁর জীবনের তত্ত্ব, ভয় আর ব্যথা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে আসছে বছরের পর বছর।
সম্প্রতি টুইটারে ভাইরাল হয়েছে ২০১১ সালের ‘কফি উইথ করণ’–এর শাহরুখের একটি পুরোনো ভিডিওর ক্লিপ। একক অতিথি হিসাবে সেই পর্বে হাজির হয়েছিলেন শাহরুখ। এবং সেখানে কোথায় কথায় খুলে বলেছিলেন নিজের এমন এক ভয়, যা অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত হয়—আসক্তির ভয়। অভিনেতার কথায়, “প্রতিটি মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক যা আমি তৈরি করেছি একদিন তাঁরাই আমাকে নয় দুঃখ দেবে অথবা ছেড়ে চলে যাবে। ”
মা-বাবাকে অল্প বয়সে হারানোর গভীর শোক থেকেই শাহরুখের মনে জন্ম এই ভয়। সেই বেদনা তাঁকে শিখিয়েছে—যে কোনও সম্পর্কই হয়তো একদিন ভেঙে যাবে, কিংবা কেড়ে নেবে জীবন।
অসমাপ্ত পৃথিবীর দর্শনের কথাও শোনা গিয়েছিল শাহরুখের কথায়। সেই আলোচনায় শাহরুখের মুখে শোনা যায় এক অমর কবিতার পঙক্তি যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় — কারও জীবনই পূর্ণ নয়। কখনও মেলে সাফল্য ও কৃতিত্ব (যেন জমি), কখনও মেলে উচ্চাকাঙ্ক্ষা (যেন আকাশ), কিন্তু সবকিছু একসঙ্গে পাওয়া যায় না। শাহরুখের নিজের জীবনও যেন এই কথার প্রতিচ্ছবি—খ্যাতি, অর্থ, সাফল্য পেয়েছেন; কিন্তু পেয়েছেন একাকিত্বও।
বন্ধুত্বের ব্যথা নিয়েও নিজের মনোভাব জানিয়েছিলেন 'বাদশা'। ওই পর্বে সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে তীক্ষ্ণ স্বীকারোক্তি ছিল বন্ধুত্ব নিয়ে। শাহরুখ জানিয়েছিলেন, তিনি বন্ধুত্ব করতে পারেন না। করলে ধরে রাখতে পারেন না। রাখতে পারলেও বন্ধুরা টেকে না। আর যদি টেকেও, তবে জীবন তাদের কেড়ে নেয়।
এই স্বীকারোক্তি এক মুহূর্তে ভেঙে দেয় বাদশার তারকাখচিত আভা, সামনে এনে দেয় এক নিঃসঙ্গ মানুষের নিঃশব্দ হাহাকার।
আজ যখন এই ভিডিও আবার ভাইরাল হচ্ছে, তখন ভক্তরা বলছেন—শাহরুখ শুধু বিনোদনের প্রতীক নন, তিনি জীবনের দর্শন। তাঁর ব্যথা, তাঁর ভয়, তাঁর কবিত্বময় ভাষা—সব মিলিয়ে তিনি একদিকে ‘কিং অফ রোম্যান্স’, অন্যদিকে জীবনের অসম্পূর্ণতাকে মেনে নেওয়ার এক প্রতীক।
সম্প্রতি, শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান খানের বহুল প্রতীক্ষিত ডিরেক্টোরিয়াল ডেবিউ ওয়েব সিরিজ ‘দ্য ব্যা*ডস অফ বলিউড’ অবশেষে মুক্তি পেয়েছেব্যঙ্গ, প্যারোডি আর সামাজিক মন্তব্য মিলিয়ে ‘দ্য ব্যা*ডস অফ বলিউড’ যেন একেবারেই নতুন দিশা। নতুন এক সাহসী কণ্ঠস্বর। প্রথম পর্বেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে—আরিয়ান খান বলিউডে আসছেন সাহসী এক নির্মাতা হিসেবে। তিনি বিতর্ককে ভয় পান না। হাসির আড়ালে তীব্র খোঁচা দিতে জানেন। ভক্ত থেকে সমালোচক—সবাই দেখতে চান, আরিয়ান কতটা ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখতে পারেন এই ব্যঙ্গাত্মক অথচ সাহসী গল্প বলার ধরন।
বলা যায়, ‘দ্য ব্যা**ডস অফ বলিউড’ শুধু শাহরুখ–গৌরীর ছেলেকে পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করল না, বলিউডকেও দিল এক নতুন আওয়াজ, যে ভয় পায় না সত্যকে বিদ্রূপ করতে। নেটফ্লিক্সে। মুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে এই সিরিজ। ব্যঙ্গাত্মক, মজাদার অথচ তীক্ষ্ণ গল্প বলার জন্য যেমন প্রশংসা কুড়োচ্ছে, তেমনই এক বিশেষ দৃশ্য ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রবল চর্চা।
