নিজস্ব সংবাদদাতা : সর্বজয়ার সংসারের নিত্য অভাব, 'অপু-দুর্গা'র আত্মিক টান, ছাতা হয়ে হরিহরের গোটা সংসারকে আগলানোর অক্লান্ত চেষ্টা আর নিশ্চিন্দিপুরের ছেঁড়া-ছেঁড়া, টুকরো আখ্যান নিয়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পথের পাঁচালী'কে পর্দায় সাজিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। বাকিটা ইতিহাস। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম সেরা ছবি বলা হয় সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’-কে। অস্কারজয়ী হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক মার্টিন স্করসেসি জানিয়েছিলেন এ ছবি দেখেই তাঁর পরিচালক হওয়ার দৌড় শুরু হয়েছিল। সোমবার সকালে ছবির বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ তাঁর প্রথম ছবিটি তৈরি করেন। ছবিতে 'অপু-দুর্গা'র 'দুর্গা'র ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল উমা দাশগুপ্তকে। ১৮ নভেম্বর, সোমবার প্রয়াত হলেন উমা দাশগুপ্ত।  

 

সোমবার সকাল ৮.১৫ নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সত্যজিতের 'পথের পাঁচালী'র এই নায়িকা। শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সেখানেই প্রয়াত হন পথের পাঁচালির 'দুর্গা'। এবার প্রয়াত অভিনেত্রীর বিষয়ে অজানা কথা ভাগ করে নিলেন সত্যজিৎ-পুত্র তথা পরিচালক সন্দীপ রায়।

 

সন্দীপ রায়ের কাছে হাজির হয়েছিল আজকাল ডট ইন। সত্যজিৎ-পুত্র বললেন, " যখন 'পথের পাঁচালী'র শুটিং শুরু হয়েছিল, সেই সময় আমি খুবই ছোট। তাই ওই ছবির শুটিংয়ের স্মৃতি নেই। তবে পরে বড় হয়ে এই ছবির যখন আলোচনা হয়েছে বাড়িতে, বাবা জানিয়েছিলেন উমাদির সঙ্গে কাজ করে ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলেন উনি। জানিয়েছিলেন, অসম্ভব বুদ্ধিমতী অভিনেত্রী ছিলেন।" 

 

কিন্তু তারপর তো আর ছবি করলেন না 'দুর্গা'? সায় দিয়ে সন্দীপ রায় বললেন, "একেবারেই তাই। ওই একটিমাত্র ছবি। তারপর তো আর করেননি...মনে হয় 'পথের পাঁচালী'তে অভিনয় করেই অভিনেত্রী হিসাবে‌ সন্তুষ্ট ছিলেন তিনি। এই ছবি নিয়ে সাংঘাতিক হইচই শুরু হওয়ার পর একেবারে গোড়ার দিকে কয়েকটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন তিনি। তারপর আর কোনও অনুষ্ঠানেও যাননি।" এরপর প্রশ্ন ছিল, কোনওদিন সত্যজিৎ রায় কি আক্ষেপ করেছিলেন 'পথের পাঁচালী'র পর আর কোনও ছবিতে উমার অভিনয় না করা নিয়ে? শোনামাত্রই সত্যজিৎ-পুত্রের জবাব, "না, না। কোনওদিনও না। উমাদি নিজেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।" আর নিজে একজন উঁচুদরের পরিচালক-সম্পাদক হয়ে অভিনেত্রী উমা দাশগুপ্তের বিষয়ে কী রায় তাঁর? "অভাবনীয়। জীবনের প্রথম ছবিতেই ওরকম অভিনয়, জাস্ট ভাবা যায় না। ওটা যে ওঁর প্রথম ছবি ছিল, কেউ না বললে বিশ্বাস করা দায়। এত সাবলীল, এত সুন্দর। বিশ্বের সিনেমার ইতিহাসে এই উদাহরণ বিরল। ভীষণ প্রতিভাময়ী ছিলেন নিঃসন্দেহে। "

 

সামান্য থেমে, ধীরে ধীরে সন্দীপ রায় যোগ করলেন, " খারাপ লাগছে। সত্যিই খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে ওঁর সঙ্গে যোগাযোগটা শেষের দিকে একেবারেই ছিল না। উনি প্রচার থেকে দূরে নিজের মতো থাকতেন। তবে জানতাম যে ওঁর শরীর খারাপ।

 

 

"সেরে উঠলে আমায় তুই একদিন রেলগাড়ি দেখাবি?’’... সময়ের ধুলো যত পুরু-ই হোক না কেন, ‘পথের পাঁচালি’ বলতে দুর্গার হাত ধরে কাশফুলের দিগন্তবিস্তৃত মাঠে অপুর ছুটে চলার পাশাপাশি এই দৃশ্যের স্মৃতি মনে আসবেই আমাদের বারবার। মনে পড়বে 'দুর্গা' উমা দাশগুপ্তকে।