বহুদিন ধরেই লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং-এর নিশানায় সলমন খান। বছরের শুরু থেকেই বেশ কয়েকবার 'ভাইজান'-এর উপরে হামলা হয়ে গিয়েছে। সেই কারণে বেড়েছে সলমনের নিরাপত্তাও। কাজের বাইরে এখন সেভাবে বাড়ির বাইরে দেখাও যায় না তাঁকে। তবে এর মধ্যেই আবার আদালতের দ্বারস্থ হলেন সলমন। কিন্তু কেন?

 


আসলে সলমন খানের ব্যক্তিগত পরিচিতি ও ভাবমূর্তির অননুমোদিত বাণিজ্যিক ব্যবহার রুখতে কড়া পদক্ষেপ নিল দিল্লি হাইকোর্ট। বিচারপতি মনমিত প্রীতম সিং অরোরার একক বেঞ্চ বৃহস্পতিবার একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া মধ্যস্থতাকারী সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে, অভিনেতার অভিযোগের ভিত্তিতে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সলমন খানের 'পার্সোনালিটি রাইটস' বা প্রচারগত অধিকার রক্ষার আবেদনকে মান্যতা দিয়েই এই গুরুত্বপূর্ণ রায় দেওয়া হয়েছে।

 


দীর্ঘদিন ধরেই অভিনেতা অভিযোগ করে আসছিলেন যে, তাঁর নাম, ছবি, কণ্ঠস্বর এমনকী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা তৈরি ছবিও— ই-কমার্স ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে মুনাফা লাভের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কাজ রুখতে বারবার আর্জি জানানোর পরও ফল না মেলায় সলমন খান অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর আইনজীবী আদালতে স্পষ্ট করে জানান, এই ধরনের অপব্যবহার শুধু অভিনেতার আর্থিক ক্ষতি করছে না, তাঁর দীর্ঘদিনের তৈরি হওয়া ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ করছে। একাধিক ফ্যান পেজ এবং বাণিজ্যিক পেজ অভিনেতার ট্রেডমার্ক ব্যবহার করেও অবৈধ পণ্য বিক্রি করছে বলে অভিযোগ আনা হয়।

 


হাইকোর্ট তার আদেশে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিকে অবশ্যই সলমন খানের অভিযোগটিকে তথ্য প্রযুক্তি বিধিমালা, ২০২১ অনুযায়ী একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। অভিযোগের সমস্ত ওয়েবলিঙ্কগুলি খতিয়ে দেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে। আদালত হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যে সমস্ত প্ল্যাটফর্ম বা ব্যক্তিরা অভিনেতার নাম, ছবি কিংবা অন্য কোনও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে বাণিজ্যিক পণ্য বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত স্থগিতাদেশ জারি করা হবে। 

 

 

বিচারপতি আরোরা এও স্পষ্ট করে দেন যে, যদি প্ল্যাটফর্মগুলির কোনও নির্দিষ্ট লিঙ্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনও আপত্তি থাকে, তবে তাদের দ্রুত অভিনেতার আইনজীবীকে সেই বিষয়ে জানাতে হবে। ব্যক্তিগত পরিচিতির অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে এই ধরনের মামলা ভারতে সাম্প্রতিককালে একটি বড় প্রবণতা হিসাবে দেখা দিয়েছে। সলমন খানের এই আইনি পদক্ষেপ সেই বৃহত্তর ধারারই অংশ। 

 


এর আগেও ঐশ্বর্য রাই বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, হৃতিক রোশন, অজয় দেবগন, পরিচালক করণ জোহর এবং দক্ষিণী তারকা এনটিআর জুনিয়র-সহ বহু খ্যাতনামা ব্যক্তি একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতেও দিল্লি হাইকোর্ট একাধিকবার প্রচারগত অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে কড়া অবস্থান নিয়েছে। আদালত মনে করে, খ্যাতনামা ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত পরিচিতি একটি মূল্যবান সম্পত্তি এবং এর অননুমোদিত ব্যবহার কেবল অবৈধ নয়, নীতিগতভাবেও গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষত, যেখানে ফ্যান পেজের আড়ালে এআই-জেনারেটেড ছবি ব্যবহার করে বাণিজ্যিক স্বার্থসিদ্ধি করা হচ্ছে, সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।