দীপাবলিতে আচমকা বলিউডে নেমে এল তীব্র শোকের ছায়া। প্রয়াত হয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেতা আসরানি। ৮৪ বছর বয়সে, দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর, গত সোমবার (২০ অক্টোবর, ২০২৫) দুপুর ১টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। নিজের দীর্ঘ ফিল্ম কেরিয়ারে অসংখ্য চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছেন এই বর্ষীয়ান অভিনেত। তবে সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ১৯৭৫ সালের রমেশ সিপ্পি পরিচালিত শোলে’তে তাঁর চরিত্র ‘অংরেজো কে জমানে কা জেলর’ সংলাপটি।
অসাধারণ ব্যাপার হল, এই চরিত্রের স্ক্রিনটাইম ছিল ১০ মিনিটেরও কম! তারপরও আসরানি বলে থেকে শুরু করে দর্শকমনে একটি চিরস্থায়ী ছাপ রেখেছিলেন। তাঁর সংলাপ -“জব হুম নাহি সুধার স্যকতে তো তুম ক্যায়া সুধরোগে” (যদি আমি নিজেকেই বদলাতে না পারি, তুমি কী করে আমাকে বদলাবে?) আজও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়।
আরও পড়ুন: ‘মাত্র এক সপ্তাহ আগেই জড়িয়ে ধরেছিলেন…’ প্রিয় সহ-অভিনেতা আসরানিকে হারিয়ে ‘বাকরুদ্ধ’ অক্ষয়!
'শোলে'-র পরিচালক রমেশ সিপ্পি জানান, আসরানি এই জেলরের চরিত্রের জন্যই ‘জন্মেছিলেন ’। আসরানির চরিত্রের অনুপ্রেরণা এসেছে চার্লি চ্যাপলিনের ১৯৪০ সালের দ্য গ্রেট ডিক্টেটর থেকে, যা জার্মান শাসক হিটলারের ব্যঙ্গাত্মক অনুকরণ ছিল।
সিপ্পি আরও জানান, তিনি প্রথম আসরানির সঙ্গে কাজ করেছিলেন সীতা ঔর গীতা (১৯৭২)-এ, এবং তখনই তাঁর অভিনয় ক্ষমতায় মুগ্ধ হন তিনি। বর্ষীয়ান পরিচালকের কথায়, “তারপর 'শোলে' এল। গল্প-চিত্রনাট্য সেলিম-জাভেদ (সেলিম খান ও জাভেদ আখতার) . ফলে বলাই বাহুল্য, আসরানি-র ওই চরিত্রটিও ওঁরাই লিখেছিলেন। যাই হোক, তাঁরা আমার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন কোন অভিনেতা পারফর্ম করতে পারে এই চরিত্রে। আমরা সবাই মিলেই তারপর ভেবেছিলাম আসরানি-ই হবে সঠিক ব্যক্তি। তাঁকে ডাকা হল, আলোচনা করা হল। তিনি আনন্দের সঙ্গে চরিত্রটি করতে রাজি হন। চরিত্র তৈরির প্রক্রিয়াতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।” এরপর রমেশ সিপ্পি জোর দিয়ে জানান, আসরানির অভিনয়শৈলী ছিল ‘অত্যন্ত স্বাভাবিক’।
সিপ্পি জানান, শোলে’র জেলরের চরিত্র কখনও ভোলা যাবে না। কারণ এটি হিটলারের চরিত্রের ব্যঙ্গাত্মক প্রতিফলন হিসেবে তৈরি হয়েছিল। তিনি সেলিম-জাভেদের কৃতিত্বও স্বীকার করেন। “ জার্মান না বলে ইংরেজ-কে ব্যবহার করা হয়েছিল একেবারে শেষে, প্রায় আচমকাই। আর সেটাই এই সংলাপকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করেছিল। “এই সংলাপটি আচমকা এসে যেভাবে শেষে আকার পেয়েছিল, একেবারে নিখুঁত ছিল!” সিপ্পি বলেন।
তিনি আরও জানালেন, আসরানি চরিত্রটিকে নিখুঁতভাবে গড়ে তুলতে যেমন তিনি, সেলিম ও জাভেদ ছিলেন, তেমনি ছিলেন আসরানি নিজেও। “আমরা চারজন মিলে চরিত্রটি উপস্থাপন করেছিলাম। সঙ্গে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন ও ধর্মেন্দ্রজি, যা পুরো দৃশ্যটিকে সত্যিই অবিস্মরণীয় করে তুলেছিল। চরিত্রটি বড় কারণ কমেডি বড়!” যোগ করেন রমেশ সিপ্পি।
'শোলে’র এই জেলারের চরিত্রটি ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে। কমেডির মধ্যে ব্যঙ্গ, মানবতা এবং হাস্যরসের নিখুঁত মিশ্রণ তৈরি করেছিলেন আসরানি। এই চরিত্র আজও নতুন প্রজন্মের সিনেমাপ্রেমী ও অভিনেতাদের অনুপ্রেরণার উৎস।
