তিনি ভারতের প্রথম সুপারহিরো। নয়ের দশকে ছোটপর্দা থেকে শিশু-কিশোরদের হৃদয় দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি। তিনি, শক্তিমান। সহজ কথায়, নয়ের দশকে ছোটপর্দায় ঝড় তুলেছিল মুকেশ খান্নার ‘শক্তিমান’ ধারাবাহিকটি। এই সুপারহিরোধর্মী ধারাবাহিক 'শক্তিমান'-এর প্রযোজনার পাশাপাশি নামভূমিকায় অভিনয় করতেন মুকেশ নিজেই। গত বছরেই বলিউডের অন্দরে খবর রটেছিল যে ‘শক্তিমান’ নিয়ে সিনেমা তৈরি হতে চলেছে। আর সেই সিনেমার জন্য অভিনেতা রণবীর সিংকে চূড়ান্ত করার খবরও প্রকাশ্যে এসেছিল। তবে, সেই সময় ‘শক্তিমান’ অর্থাৎ মুকেশ খান্না স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, রণবীর সিং এমন কোনও চরিত্রে অভিনয় করছেন না। বেশ কিছুদিন আগে রণবীর সিংকে মুকেশ খান্নার অফিসে দেখা যায়। ফলে জল্পনা শুরু হয়েছিল আসন্ন ‘শক্তিমান’ সিনেমার জন্যই নাকি মুকেশ খান্নার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন অভিনেতা।এ প্রসঙ্গে মুকেশ খান্না মুম্বই সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, রণবীর সিং তাঁর অফিসে এসেছিলেন। তবে রণবীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে শক্তিমান হিসাবে নির্বাচিত করা হয়নি এখনও। ‘শক্তিমান’ মুকেশ খন্না সাফ বলেছিলেন হ্যাঁ রণবীর, প্রতিভাবান, প্রাণ প্রাচুর্যেও ভরপুর তবে ‘শক্তিমান’ হওয়ার জন্য মোটেই উপযুক্ত নন। তবে এখন কি মুকেশ খান্নার মনোভাব বদলে গিয়েছে ভরপুর? রণবীরকে শক্তিমানের পোশাক পরানোর জন্য তিনি কি পুরোপুরি রাজি? ‘ধুরন্ধর’ দেখার পর বর্ষীয়ান অভিনেতার কথাবার্তা শুনে জল্পনা কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে জনতামহলে।
বলিউড তারকা রণবীর সিং অভিনীত ‘ধুরন্ধর’ ইতিমধ্যেই ভারতের বক্স অফিসে ৫০০ কোটির বেশি আয় ছুঁয়ে ফেলেছে। আর এই ছবির পক্ষেই সরব হয়ে উঠলেন ‘শক্তিমান’ খ্যাত মুকেশ খন্না। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তিনি যে অনফিল্টার্ড রিভিউ দিয়েছেন, সেখানে শুধু প্রশংসাই নয়, এক কথায় ছবিটিকে তিনি বললেন নিখুঁত ও দর্শককেন্দ্রিক। ভিডিওতে মুকেশ খন্না স্পষ্ট করে বলেন, খুব কম ছবিতেই এত সুন্দরভাবে সব উপাদান একসঙ্গে কাজ করে। তাঁর ভাষায়,“ ধুরন্ধরএকেবারে নিখুঁত ছবি, মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি বলতে যা বোঝায় আর যেরকম সত্যিই জনগণের জন্য। অভিনয়, পরিচালনা, অ্যাকশন, লেখা...প্রতিটি বিভাগ দারুণ কাজ করেছে। তাই ‘ধুরন্ধর’ নামটা সত্যিই এই ছবির যোগ্য।”
শুধু রণবীর বা প্রধান নায়ক নয়, ছবির পরিচালক আদিত্য ধর থেকে শুরু করে পুরো টিমের কাজের প্রশংসা করেন তিনি। তবে অভিনয়ের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি প্রশংসা ঝরে পড়ে অক্ষয় খন্নাকে নিয়ে। ইতিমধ্যেই যার পারফরম্যান্স সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।
রণবীর সিং ও ‘শক্তিমান’ বিতর্ক নিয়েও তিনি পরিষ্কার মন্তব্য করেন। বলেন, “হ্যাঁ, আমি হয়তো ওকে ‘শক্তিমান’ হতে দিইনি। কিন্তু ও খুব ভাল অভিনেতা। আর আমি এটা সবসময়ই বলি।” এই ছবিতে রণবীরের পারফরম্যান্স নিয়েও তিনি বেশ প্রশংসা করেন। বলেন রণবীরের শরীরী ভাষা, চোখের ইমোশন, ধীরে ধীরে চরিত্রের বিকাশ, সবই এই ছবিতে এককথায় দুরন্তভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর বিশ্বাস, ছবির সিক্যুয়েলে এই চরিত্রকে আরও বড় পরিসরে দেখা যাবে।
প্রসঙ্গত, শক্তিমান হিসেবে রণবীর সিংয়ের সম্পর্কে মুকেশ আরও বলেছিলেন, “ওর সঙ্গে তিন ঘণ্টা বসে কথা হয়েছে শক্তিমান নিয়ে। ও খুব এনার্জেটিক অভিনেতা। কিন্তু আমি ওকে সোজাসুজি বলেছি, তুমি ‘তমরাজ কিলবিশ’ চরিত্রে অভিনয় করতে পারো। কারণ তোমার মুখে এক ধরনের ‘শয়তানি’ আছে। কিন্তু শক্তিমান হতে গেলে চাই পরিণত ব্যক্তিত্ব। রণবীর দর্শককে নাচায়, মাতায় কিন্তু ‘শক্তিমান’ হতে গেলে শুধু সেটুকুই যথেষ্ট নয়।” শুধু তাই নয়, মুকেশ আরও যোগ করেন, অনেক ভক্ত তাঁকে সতর্ক করেছেন যাতে রণবীরকে ‘শক্তিমান’ না করা হয়। মুকেশের ভাষায়,“ শক্তিমান চরিত্রের জন্য আমার শুধু একজন পোক্ত অভিনেতা নয়, একটা মুখ চাই। যদি বাস্তবে কারও চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়, সেটা শক্তিমান চরিত্রে প্রভাব ফেলবে। বহু লোক তো সরাসরি আমাকে বলেছে, ‘ও সাহেব, এই নেশাখোরটাকে শক্তিমান বানাবেন না, আমাদের শৈশবের স্মৃতি শেষ হয়ে যাবে।’”
তবে এবার কি সেই মন্তব্য পাল্টাবে? দেখা যাক।
