নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৯৭২ সালে বক্স অফিস কাঁপিয়ে মুক্তি পেয়েছিল ফ্রান্সিস ফোর্ড কপ্পোলা পরিচালিত ‘দ্য গডফাদার’। মারিও পুৎজো-র উপন্যাস অনুযায়ী তৈরি হয়েছিল এই কালজয়ী ছবি। যদিও খুব বেশিদিন এই ছবিকে অপেক্ষা করতে হয়নি ‘কাল্ট স্টেটাস’-এর তকমা পাওয়ার জন্য। মার্লন ব্র্যান্ডো থেকে শুরু করে আল পাচিনো এককথায় প্রায় প্রতিটি অভিনেতাই নিজের কেরিয়ারের অন্যতম সেরা পারফর্মেন্সের স্বাক্ষর রেখেছিলেন এই ছবিতে। বছর দুয়েক আগে ৫০ বছরের চৌকাঠে পা রেখেছে এই ছবি। চলতি বছর আবার মার্লন ব্র্যান্ডোর শতবর্ষ। প্রয়াত অস্কারজয়ী অভিনেতার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে রবিবার আয়োজন করা হয়েছিল ‘দ্য গডফাদার’-এর বিশেষ প্রদর্শনী। সাতসকালে নন্দনে সেই ছবি দেখতে হাজির হয়েছিল নানা বয়সী প্রজন্মের মানুষের ঢল। যে ছবি মুক্তি পেয়েছে ৫০ বছরেরও আগে, বিশ্বের প্রায় সব মহাদেশ ঘুরেফিরে এসেছে বারবার, ছবির গল্প থেকে শুরু করে চরিত্রদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে কয়েক কোটিবার, এমনকি অজস্রবার ছোটপর্দাতেও সম্প্রচারিত হয়েছে তাহলে কেন সেই ছবি দেখতে হাজির এত দর্শক? তার খোঁজ নিতেই হাজির হয়েছিল আজকাল ডট ইন। 

ঘড়ির কাঁটা তখন বলছে রবিবারের দুপুর ১২টা। শো শেষে নন্দন চত্বরে তখন ছানা কাটা ভিড়। চোখে পড়ল হল থেকে বেরিয়ে আসছে এক বৃদ্ধ দম্পতি। নিজেদের মধ্যে মশগুল। বৃদ্ধ তখন তাঁর স্ত্রীকে কিছু বলছেন ছবির বিষয়েই। কারণ কানে এল এই ছবির বিখ্যাত সংলাপ - ‘রিভেঞ্জ ইজ আ ডিশ বেস্ট সার্ভড কোল্ড’। বেশ লাগল। খানিক কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম এবং ডাকলাম। আলাপ হল। তারপরেই ফের নতুন করে এদিন টের পেলাম একটি সিনেমার সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে থাকে দর্শকের ছোট্ট ছোট্ট ব্যক্তিগত মুহূর্ত যা চিরকালীন। ভদ্রলোকের নাম নীরঞ্জন সোম। বললেন, “ ‘দ্য গডফাদার’ যখন দেখি প্রথমবার, তখন আমি যুবক। সেই সময় তো আর হলিউডের ছবি মুক্তি পাওয়া মাত্রই এদেশে আসত না, একটু সময় নিয়ে আসত। এ ছবির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। তবে নাম শুনেছিলাম। এবং বেশ মনে আছে গোটা শহরজুড়ে একটা হইচই পড়ে গিয়েছিল। আমি গ্লোবে গিয়েছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে। ম্যাটিনি শো। সাড়ে চার-পাঁচ টাকা টিকিট। সেটাই তখন অনেক। আর আমরা স্ত্রী-ও এসেছিলেন সেই শোতে। আমরা কেউ কাউকে তখন চিনি না। ও তখনও সাবালিকা হয়নি।  তবে বান্ধবীদের সঙ্গে ফন্দি এঁটে শাড়ি পরে হলে এসেছিল। একটা ডুরে শাড়ি পরেছিল ও। আর সিট পড়বি তো পড় একেবারে আমার পাশেই। ছবি দেখতে গিয়ে আলাপ। হলের মধ্যে একটা ছবিতে আমরা সিটি মেরেছিলাম বলে ও বলে উঠেছিল, ‘রাস্কেল’।” বলে হেসে উঠলেন নিরঞ্জনবাবু। পাশে ওঁর স্ত্রীর মুখেও লাজুক হাসি।  "...টুকটাক কথা হয়েছিল, তারপর বাইরে বেরিয়ে ফুচকা। সেই শুরু...তারপর তো বুঝতেই পারছেন। এই ছবির সঙ্গে আমাদের জীবন জড়িয়ে বলতে পারেন। তাই বড়পর্দায় ফের একবার ব্র্যান্ডো-আল প্যাচিনোকে দেখার লোভ সামলাতে পারিনি আমরা।” 

 

শহরের এক নামি ফিল্ম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্র সৌম্য। বয়স মধ্যে পঁচিশ। তাঁর কথায়, “এ ছবির গল্পের একটা অ্যাপিল রয়েইছে। তার উপর এরকম তাবড় তাবড় অভিনেতারা। আগে একাধিকবার ওটিটিতে দেখলেও বড়পর্দায় দেখার মজাই আলাদা। আর লাইট। এ ছবিতে আলোর যা কাজ....শুনেছিলাম বড়পর্দায় নাকি ম্যাজিকের মতো লাগবে। আজ মেনে নিলাম।”  অন্যদিকে, এক বহুজাতিক সংস্থার চাকুরে সাগ্নিক স্পষ্ট কথায় বললেন, “আজও ‘গডফাদার’ মানেই ব্র্যান্ডো! অন্য বিকল্প হতে পারে না।  এ ছবি যদি কোনও হলিউডের পরিচালক রিমেক করার সাহসও দেখান ব্র্যান্ডো-র জায়গায় কে অভিনয় করবেন হাজার ভেবেও বলতে পারব না। অসম্ভব!”


কলেজ-পড়ুয়া শালিনী, অরুন্ধতীদের কাছে অবশ্য এই ছবি শুধুই প্যাচিনো-ময়। “আমরা সাতজন এসেছি এই ছবি দেখতে। আমাদের মধ্যে আগেই কেউ-কেউ এই ছবি পুরোটা দেখলেও আমি এই ছবি আগে ছেঁড়া-ছেঁড়াভাবে দেখেছিলাম। আল প্যাচিনোকে দারুণ লেগেছে। মার্লোন ব্র্যান্ডো-ও অসাধারণ!” ছবির কোন সংলাপ সবথেকে ভাল লেগেছে? শোনামাত্রই দুষ্টু হাসি ছড়িয়ে শালিনী বললেন, ‘আই অ্যাম গোয়িং টু মেক হিম অ্যান অফার হি কান্ট রিফিউজ’-ছেলে, মেয়ে যে কেউ মোক্ষম মুহূর্তে বলতে পারে এই সংলাপ!”