বলিউডের ইতিহাসে এক সিনেমা চিরকাল আলাদা আসন দখল করে আছে— রাম গোপাল বর্মার ‘সত্যা’। এখানেই জন্ম নিল এক আইকনিক চরিত্র ভিকু মাত্রে। আর সেই চরিত্রের প্রাণ হয়ে উঠলেন মনোজ বাজপেয়ী। সিনেমার আড়ালে কিন্তু আরও এক তরুণের ভাগ্য লিখে যাচ্ছিল নতুন অধ্যায়—তাঁর নাম অনুরাগ কাশ্যপ।‘সত্যা’-ই যে তাঁর বড় ব্রেক, সেটা আজ আর নতুন করে বলার নেই।
কিন্তু শুটিং সেটেই ঘটে গিয়েছিল এমন এক ঘটনা, যা মনোজ-অনুরাগ সম্পর্কের ভাঙনের সূত্রপাত। ভিকুর মৃত্যুর দৃশ্য নিয়ে তাঁদের মধ্যে তৈরি হয় সৃজনশীল মতবিরোধ। তারপরের দিনগুলোতে যদিও ‘শূল’, ‘কৌন’–এর মতো ছবিতে আবার একসঙ্গে কাজ করেছেন, কিন্তু সম্পর্ক আর আগের মতো রইল না। অনেক বছর পর আবার তাঁরা জুটি বাঁধলেন ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’–এ, কিন্তু তার পরেও সহযোগিতা থমকে গেল।
সাম্প্রতিক, মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘জুগনুমা’–র প্রসঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মনোজ খোলাখুলি বললেন, “হঠাৎ করে অনুরাগের জন্য আমার নতুন ভালবাসা জন্মেছে!” বলে হেসে ফেলেন তিনি। তবে ঠাট্টা-রসিকতা করতে ছাড়েননি অভিনেতা—“সমস্যা হল, আমি আজও ওর সঙ্গে গম্ভীরভাবে বসে কথা বলতে পারি না। ও সবসময় খোঁচা দেয়, আর আমি ফেরত দিই। আমি নিজেই একটা ছবি বানিয়ে ওকে একেবারে বাজে একটা চরিত্রে কাস্ট করব! হ্যাঁ, ওকে কাস্ট করব, জীবনটা নরক করে দেব। ওকে বোঝাব, অভিনয় কোনও ছেলেখেলা নয়, যেটা করে আজকাল দক্ষিণে ও টাকাও কামাচ্ছে।”
সবার ধারণা সত্যা-র সেটেই প্রথম দেখা হয়েছিল মনোজ আর অনুরাগের। কিন্তু অভিনেতা জানালেন, আসল ঘটনা আলাদা।মনোজ মনে করেন, সেদিন তিনি গিয়েছিলেন শ্রীরাম রাঘবনের অফিসে, পূর্ব অন্ধেরিতে। তখন রাম গোপাল বর্মা নতুন লেখক খুঁজছিলেন। মনোজের দায়িত্ব ছিল ভাল কাউকে খুঁজে দেওয়া। “দু’জনকে নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু রামু খুশি হননি। সেখানেই হঠাৎ অনুরাগের সঙ্গে আলাপ। সিগারেট থেকে সিগারেটে চলল আড্ডা। বুঝলাম ছেলেটার মাথা অসাধারণ, সিনেমা নিয়ে ভীষণ পড়াশোনা করা। আমি নিজেই ওকে নিয়ে গেলাম রামুর কাছে। তখন অনুরাগের বয়স মাত্র ২২।”
সেই সুযোগই বদলে দিল অনুরাগ কাশ্যপের জীবন।
যদিও সম্পর্ক নিয়ে অনেক ওঠানামা হয়েছে, মনোজ স্বীকার করেন—অনুরাগের মেধা ও সিনেমা বিশ্লেষণের ক্ষমতাকে তিনি সবসময় সম্মান করেন। “ওর পর্যবেক্ষণ, ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি আমি ভীষণ গুরুত্ব দিয়ে শুনি। কিন্তু কী কাজ করব আর কী করব না, সেটা ওর মতামতের উপর কখনও নির্ভর করি না,” সপাট স্বীকারোক্তি মনোজের।
একদিকে ‘ভিকু মাত্রে’, অন্যদিকে ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’—বলিউডকে যে দুই মণি-মুক্তো উপহার দিয়েছেন এই জুটি, তা অস্বীকার করা যায় না। সম্পর্কের টানাপোড়েন, ঠাট্টা-মশকরা আর পুরনো অভিমান সত্ত্বেও, তাঁদের রসায়ন কিন্তু এখনও আলোচনার কেন্দ্রে।
