দেখতে দেখতে ৫০ বছর পা ‘শোলে’র। ভারতের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে রমেশ সিপ্পি পরিচালিত এই ছবি বার বার উঠে আসে আলোচনায়। ভারতীয় সিনেমার রূপরেখা বদলে দিয়েছিল এই সিনেমা। ছবির প্রতিটি চরিত্র এখন গেঁথে রয়েছে দর্শক হৃদয়। এ বার সেই ছবি মুক্তির ৫০ তম বর্ষ। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট মুক্তি পেয়েছিল ভারতের অন্যতম কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘শোলে। রমেশ সিপ্পি পরিচালিত এবং সেলিম খান-জাভেদ আখতারের লেখা এই একটি ছবিই বদলে দিয়েছিল হিন্দি ছবির ভাষা, গল্প বলার ধরন এবং পপ-কালচারের সংজ্ঞা। এই ছবি যখন ৫০ বছরে পা দিতে চলেছে, তখনই রীতিমতো বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন প্রবাদপ্রতিম চিত্রনাট্যকার তথা গীতিকার জাভেদ আখতার।

 
সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাভেদ বলেন —“ইউটিউবে অনেক লোককে বলতে শুনেছি, ‘শোলে একেবারেই কোনও মহান ছবি নয়’ — হয়তো তা-ই, কারণ আমি নিজেই জানি না একটা ‘মহান সিনেমা’-র সংজ্ঞা আসলে কী!” এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে চমকে দিয়েছে বহু সিনেপ্রেমীকে। যে ছবি বহু প্রজন্মের মস্তিষ্কে গেঁথে রয়েছে, যার সংলাপ থেকে শুরু করে সিকোয়েন্স সবই আজ কিংবদন্তি, সেই ছবির সহ-লেখকই যখন এর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, তা নিঃসন্দেহে আলোচনার বিষয়।

 

তবে শোলে -এর ছোট্ট, ছোট্ট চরিত্রদেরও চিরকালীন প্রভাব চমকে দেওয়ার মত।  সে প্রসঙ্গে জাভেদ অবশ্য বলেন, “আমার জানা নেই কেন এই ছবির ছোট ছোট চরিত্ররাও আজ এত জনপ্রিয়। যদি জানতাম, আবার করতাম। আজও শোলে-র এমন চরিত্র যারা হয়তো তিনটে শব্দ বলেছে বা শুধু দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের ডায়লগ ব্যবহৃত হয় কমেডি শোতে, রাজনৈতিক বক্তৃতায়, সিনেমার রেফারেন্সে।"
তিনি উদাহরণ দেন —

“তেরা কেয়া হোগা কালিয়া”

“অরে ও সাম্বা!”

“পুরে পঁচাশ হাজার!”

এবং সেই “মৌসি কী বাতে...”— স্রেফ এতেই বোঝা যায় কোন ‘মৌসি’-র কথা বোঝানো হচ্ছে!

শোলে: ইতিহাস গড়া এক উপাখ্যান
রমেশ সিপ্পি পরিচালিত এবং সেলিম-জাভেদ লেখা এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ধর্মেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জীব কুমার, হেমা মালিনী, জয়া বচ্চন এবং ভয়ঙ্কর খলনায়ক গব্বর সিং-এর ভূমিকায় অমজদ খান। দুই অপরাধী, জয় ও বীরু, এক প্রাক্তন পুলিশ অফিসারের অনুরোধে গব্বরকে ধরতে বেরিয়ে পড়েন। আর সেই যাত্রাই হয়ে ওঠে এক মহাকাব্যিক রোমাঞ্চ।

 ৫০ বছর ছুঁয়েও অমলিন এই ছবি।  শোলে -র মুক্তির ৫০ বছর পরেও এর সংলাপ, দৃশ্য এবং চরিত্র ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবুও জাভেদ আখতার তাঁর নিজস্ব স্টাইলে স্মরণ করিয়ে দিলেন, কোনও শিল্পকর্মের গৌরব বা শ্রেষ্ঠত্ব কতটা আপেক্ষিক, কতটা দর্শকের অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে।
জয়-বীরুর বন্ধুত্ব, বাসন্তীর প্রাণোচ্ছল অভিনয়, গব্বরের আতঙ্ক— সব মিলিয়ে ‘শোলে’ হিন্দি সিনেমার জগতে মাইল ফলক, তা বলাই যায়।  এখনও পুরনো হয়ে যায়নি ‘শোলে’, আজও আলোচনার শেষ নেই। এখনও এই ছবিটি যে বলিউড সংস্কৃতিকে বিভিন্ন ভাবে অনুপ্রাণিত করে চলেছে, তা হলফ করে বলাই যায়।