ফের ছোটপর্দায় ইন্দ্রাণী দত্ত। দীর্ঘ বিরতির পর তিনি ফিরছেন পুরোদস্তুর অভিনয়ে। তাঁকে দেখা যাবে জি বাংলার নতুন ধারাবাহিক ‘বেশ করেছি প্রেম করেছি’-তে। প্রত্যাবর্তনের জন্য ইন্দ্রাণী বেছে নিয়েছেন এক মায়ের চরিত্র।

এর আগে ‘জগদ্ধাত্রী’ ধারাবাহিকে এক নৃত্যশিল্পীর ভূমিকায় ধরা দিয়েছিলেন তিনি। তবে স্বল্প সময়ের জন্য। তবে এবার গল্পের নতুনত্বের টানেই ফের ক্যামেরার সামনে আসা।  ইন্দ্রাণীর কথায়, “স্নেহাশীষ (চক্রবর্তী) বাবুর সঙ্গে আমি প্রথম ‘জীবন সাথী’ করেছিলাম। তারপর ‘জগদ্ধাত্রী’। দু’বারই কাজ করে খুব ভাল লেগেছিল। ওদের প্রযোজনা সংস্থাটা আমার নিজের বাড়ির মতো মনে হয়। এবার যখন উনি এই ধারাবাহিকের জন্য আমায় ডাকলেন, গল্পটা শুনেই ভাল লেগে গিয়েছিল। দুই প্রজন্মের কাছে ভালবাসার সংজ্ঞা কী, সেই উত্তর খোঁজা হবে এই ধারাবাহিকে। আমার চরিত্রটাও খুব সুন্দর।”

সময়ের সঙ্গে মেয়ে রাজনন্দিনী পালেরও বন্ধু হয়ে উঠেছে ইন্দ্রাণী। অভিনয় থেকে শুরু করে জীবনের খুঁটিনাটি—সব কিছুতেই এই বন্ধুত্বই হয়ে উঠেছে তাঁদের সবচেয়ে বড় শক্তি। ব্যক্তিগত সেই অভিজ্ঞতার প্রতিফলন এবার পর্দাতেও? ইন্দ্রাণীর উত্তর, “সেরকমটা হলে তো ভালই হয়। আমি আমার জীবনের অনুভূতিগুলো দিয়ে তাহলে সেই চরিত্রটাকে জীবন্ত করে তুলব। তাহলে হয়তো সেটা আরেকটু আলাদা হয়ে উঠবে।”

কেরিয়ারের শুরু থেকেই সাফল্যের ছাপ স্পষ্ট — একের পর এক হিট ছবি, নাম, যশ, খ্যাতি সবই পেয়েছেন তিনি। তবু পর্দায় তাঁর উপস্থিতি বরাবরই সীমিত, বেছে নেওয়া। প্রশ্ন জাগে, কম কাজ করার সিদ্ধান্ত কি সচেতনভাবেই নিয়েছেন ইন্দ্রাণী? নাকি সময় এবং চরিত্রের মান বেছে নেওয়ার এক শিল্পীসুলভ সংযমই এই সিদ্ধান্তের পেছনে লুকিয়ে? অভিনেত্রী বললেন, “আমার কাছে কাজ বরাবরই কম এসেছে। তাই আরও সচেতন হয়ে আমাকে কাজ বাছাই করতে হয়েছে। একজন দশটা কাজের মধ্যে দুটো খারাপ করলে কেউ মনে রাখবে না। কিন্তু আমি যদি দুটো কাজের মধ্যে একটা ভাল, একটা খারাপ করি, সেটা কিন্তু মনে থেকে যাবে।”

ইন্দ্রাণী দত্তের সমসাময়িক অভিনেত্রীরা এখনও চুটিয়ে কাজ করছেন—বড়পর্দা থেকে ওয়েব সিরিজ, এমনকি ধারাবাহিকেও তাঁদের নিয়মিত উপস্থিতি। অথচ একের পর এক সফল ছবি থাকা সত্ত্বেও ইন্দ্রাণীর কাছে কাজের প্রস্তাব তুলনামূলকভাবে কম। কেন এমনটা? এটি কি ইচ্ছাকৃত বিরতি, নাকি ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তিত ধারা ও চরিত্রের অভাবই তাঁকে আড়ালে ঠেলে দিয়েছে? তাঁর উত্তর, “সত্যি বলতে এত কিছু নিয়ে আমি ভাবি না। আমার কাছে মাধ্যমটা বড় বিষয় নয়। গল্প ভাল লাগলে, যে কোনও জায়গায় কাজ করতে পারি। তাই টেলিভিশনে ফিরে আসা। কোভিডকালে অনেকেই যখন কাজ পাচ্ছিলেন না, স্নেহাশীষ বাবু ‘জীবন সাথী’র জন্য আমাকে বেছে নিয়েছিলেন। তাই ওঁর সঙ্গে কাজের সুযোগ এলে ফেরাতে পারব না।”

আলোকবৃত্তের থেকে নিজেকে আগাগোড়াই দূরে রেখেছেন ইন্দ্রাণী দত্ত। তাঁর জীবন আবর্তিত হয় শুধুমাত্র কাজ আর সংসারকে ঘিরে। তাই প্রচারের আলো, অযথা বিতর্ক কিংবা স্বার্থসিদ্ধির জন্য গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব—কোনওটাই তাঁর জীবনের অংশ নয়। শান্ত, সংযত অথচ আত্মবিশ্বাসী ইন্দ্রাণী বিশ্বাস করেন, কাজই শিল্পীর আসল পরিচয়, বাকিটা কেবল কোলাহল। তাঁর কথায়, “কে কী করল, না-করল আমি দেখি না। কোনও কাজ খুব হিট হলে সেটা দেখি। অনেক ছবির প্রিমিয়ারে আমন্ত্রণ পেলে ছবি দেখতে সেখানে যাই। আবার অনেক ক্ষেত্রে আমন্ত্রণ পাইও না। কিন্তু সেই ছবিটা যদি আমার দেখতে ইচ্ছা করে, আমি কিন্তু নাইট শোয়ে দেখে আসি। কিছু পার্টিতে যাই। আবার অনেক পার্টিতে যাওয়া হয় না। অনেকেই জ্ঞান দিয়ে বলেন, কাজ পেতে গেলে এগুলো করতে হয়। কিন্তু আমি কখনওই এত কিছু করিনি। এছাড়াও আমার নাচের স্কুল, ট্রুপ বহু বছর ধরে সামলাচ্ছি। সেটাও বিরাট একটা ব্যস্ততা। এতগুলো বাচ্চাকে শেখানো, তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, বার্ষিক অনুষ্ঠান! তাই এত কিছু করে আর এগুলো ভাবার সময় থাকে না।”

ইন্দ্রাণীর কন্যা রাজনন্দিনী বর্তমানে ছোটপর্দায় ঝড় তুলেছেন তাঁর জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘রাজরাজেশ্বরী রাণী ভবানী’-তে অভিনয়ের মাধ্যমে। দর্শকদের ভালোবাসা ও প্রশংসা দুই-ই কুড়োচ্ছেন তিনি। ফলে এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে — মা ও মেয়ে কি তবে এবার প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি?

ইন্দ্রাণীর মতে, এটি কোনও প্রতিযোগিতা নয়, বরং দুই প্রজন্মের অভিনয়যাত্রার সুন্দর মিলন। তাঁর কথায়, “প্রতিযোগিতা হলে তো ভালই। আমাদের দু’জনের কাজেরই আরও উন্নতি হবে। আমি রাজনন্দিনীর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখি। মাঝেমধ্যে মনে হয় ও আমার থেকে অনেক বেশি পরিণত। একা একা কতকিছু শিখে গিয়েছে। তবে প্রতিযোগিতায় ওকে একটুও জমি ছাড়ব না!”